প্রশাসন থেকে বিতর্কিত আমলাদের সরাতে হবে

একেএম শামসুদ্দিন

৮ সেপ্টেম্বর দেশের প্রায় সব সংবাদমাধ্যম, বহুল আলোচিত নিম্নপদস্থ একজন সরকারি কর্মকর্তার বদলির আদেশ নিয়ে সংবাদ শিরোনাম করেছে। কর্মকর্তাটির নাম মো. নাজিম উদ্দিন। তাকে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা এবং পরে কিশোরগঞ্জের ইটনায় নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসাবে পদায়ন করা হয়েছিল। প্রশ্ন উঠতেই পারে, একজন ইউএনও’র বদলির আদেশ নিয়ে দেশের প্রায় সব পত্রপত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে কেন? বিভিন্ন জেলায় একাধিক পদে চাকরিকালীন এ ব্যক্তি এখতিয়ারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ঘুস বাণিজ্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, সাংবাদিক তুলে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে পেটানো, মোবাইল কোর্ট বসিয়ে জেল-জরিমানার হুমকি দেওয়া, ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো এবং প্রকাশ্য দিবালোকে সবার সামনে নিরীহ বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিকে ঘাড় ধরে টেনেহিঁচড়ে অপদস্ত করা ইত্যাদি অপকর্মের জন্য তিনি ইতোমধ্যেই বেশ দুর্নাম কামিয়েছিলেন। কাজেই এমন নাম কামানো ব্যক্তির বদলি আদেশ নিয়ে খবর হবে, এটাই স্বাভাবিক।

বেশকিছু দিন ধরেই প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আমলাদের পদোন্নতি ও বদলির আদেশ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে হট্টগোলের খবর শোনা যাচ্ছে। তার মধ্যে নাজিম উদ্দিনের এ বদলির আদেশটি আলাদাভাবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তার এ বদলি আদেশ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে পরদিনই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তা বাতিল করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনে যোগদানের আদেশ জারি করে। তবে প্রতিযোগিতা কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের দপ্তরে নাজিম উদ্দিনের মতো বিতর্কিত কোনো কর্মকর্তাকে দেখতে চান না। তারা ইতোমধ্যে নাজিম উদ্দিনের বদলি আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদন করেছেন। নাজিম উদ্দিনের মতো বিশেষ রাজনৈতিক দলের মদদপুষ্ট কর্মকর্তার পদায়ন তাদের প্রতিষ্ঠান, ভোক্তাসাধারণের স্বার্থসংরক্ষণ ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে আবেদনে উল্লেখ করেন।

প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের কোথাও নিয়োগ দেওয়ার সময় কিছু নীতিমালা মান্য করা হয়। ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কর্মচারীগণের পদায়ন নীতিমালা-২০২২’ অনুযায়ী, পদায়নের আগে যোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে প্রথমে ফিটলিস্ট করা হয়। এ ফিটলিস্ট প্রণয়নের জন্য নিম্নের বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হয়। ইউএনও পদের জন্য প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তাকে সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্তি ও ন্যূনতম ছয় বছর চাকরিপূর্ণ করতে হবে এবং সর্বশেষ পাঁচ বছরের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন, সার্ভিস রেকর্ড ও শৃঙ্খলাজনিত প্রতিবেদন সন্তোষজনক হতে হবে। এ পাঁচ বছরের গোপনীয় অনুবেদনের গড় নম্বর ন্যূনতম ৮৫ শতাংশ হতে হবে। ইউএনও হিসাবে বিবেচনাধীন কর্মকর্তার বিগত চাকরিকালের সততা ও সুনাম বিবেচনা করা হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে কমপক্ষে এক বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা অনুসারে ফিটলিস্ট করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে নাজিম উদ্দিনকে কোন বিবেচনায় ইউএনও পদে বদলির আদেশ জারি করা হয়েছিল বোধগম্য নয়। যে ব্যক্তি এতগুলো অভিযোগে অভিযুক্ত, যিনি একজন ফৌজদারি মামলার আসামি, তাকে প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের বিষয়টি বিস্মিত করেছে সবাইকে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিকে ২০২০ সালের মার্চে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়ায় ভুক্তভোগী থানায় এজাহার করলে হাইকোর্টের নির্দেশে কুড়িগ্রাম জেলার তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীন ও আরও দুজনসহ নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা রেকর্ড হয়। গত ৪ বছরেও সেই মামলা আলোর মুখ দেখেনি। এ সময়ের ভেতর মামলার আসামি হিসাবে নাজিম উদ্দিন আদালতে আত্মসমর্পণও করেননি। তার বিরুদ্ধে সেই ফৌজদারি মামলা চলমান। এমনকি তিনি সেই মামলায় জামিনও নেননি। সুতরাং, আইনের দৃষ্টিতে তিনি এখনো একজন পলাতক আসামি। ফৌজদারি আসামি হওয়া সত্ত্বেও শেখ হাসিনার আমলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আইনবহির্ভূতভাবে তাকে নতুনভাবে পদায়নও করেছিল। সে কারণেই হাইকোর্টে রিট করা হয়। ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়ার পরও তাকে কেন নতুন পদায়ন করা হয়েছিল জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলেন; কিন্তু তৎকালীন প্রশাসন এমনই কর্তৃত্বপরায়ণ ছিল, তারা আদালতের রুলের কোনো জবাব তো দেয়নি, বরং উলটো আদালতকে উপেক্ষা করেই নাজিম উদ্দিনসহ চার আসামিকেই নতুন পদায়ন করেছিল। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। সে সময় বিভাগীয় তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ‘গুরুদণ্ড’ হিসাবে নাজিম উদ্দিনকে এক ধাপ পদাবনতি করে; সঙ্গে তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীনকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু নাজিম উদ্দিন ও সুলতানা পারভীন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে শাস্তি মওকুফ চেয়ে আবেদন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপারিশে রাষ্ট্রপতি নিঃসংকোচে তা মঞ্জুর করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রশাসনকে যে দলীয় আখড়ায় পরিণত করা হয়েছিল, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। পেশাগত যোগ্যতার চেয়ে দলীয় পরিচয় এবং শেখ হাসিনার প্রতি অন্ধ আনুগত্যই ছিল প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখলের চাবিকাঠি। এসব কারণে প্রশাসনের এসব ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা না হয়ে দলীয় সেবাদাসে পরিণত হয়েছিলেন। প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে থানার ওসি এবং ইউএনও পদ দুটো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি কর্মকাণ্ডের সুফল পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাদের দায়িত্বও কম নয়। অথচ শেখ হাসিনার শাসনামলে এমন অনেক থানার ওসি ও ইউএনওকে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তার খোলস পালটিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমাবেশে হাজির থাকতে দেখা গেছে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর ২৫(১) ধারা অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ, আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভার মঞ্চে নেতা-মন্ত্রীদের পাশে থানার ওসি এবং ইউএনওকে বসে থাকতে দেখা যেত। শুধু তাই নয়, মঞ্চে মাইকে বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কর্মকর্তাকে আওয়ামী লীগদলীয় স্লোগান দিতেও দেখা গেছে। এ নিয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে একাধিকবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। এটিই ছিল শেখ হাসিনার শাসনকালে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের আচরণের প্রকৃত চিত্র। উচ্চপদ দখলকারী আমলাদের আচরণের চিত্রও ভিন্ন ছিল না। বরং আরও বেশি অমার্জনীয় ও দৃষ্টিকটু ছিল। বিসিএস ক্যাডারভুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের আওয়ামী লীগের উপকমিটিতে নাম লেখানোর উদাহরণও আছে। আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক উপকমিটিতে অন্তত পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তার দলীয় পদ পাওয়ার খবর গত বছর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। এসব কর্মকর্তা সে সময় ফেসবুক প্রোফাইলে পদপ্রাপ্তির জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। শুধু কী তাই! আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি দিয়ে দলের গর্বিত সদস্য হওয়ার খবরও প্রচার করেছিলেন।

ডিসি বা জেলা প্রশাসক হলেন জেলার প্রধান প্রশাসনিক ও রাজস্ব কর্মকর্তা। তিনি একাধারে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা কালেক্টর ও ডেপুটি কমিশনার। ফলে তিনি একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা, ভূমি প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সমন্বয় এবং সাধারণ ও স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন। বাংলাদেশের সংবিধানমতে, বাংলাদেশ মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার হওয়ায় জেলা প্রশাসকরা জেলাতে জাতীয় সরকারের প্রতিনিধি। তিনি সরাসরি সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগকারী ক্ষমতাপ্রাপ্ত জেলার একমাত্র কর্মকর্তা। আগে জেলা প্রশাসককে ডেপুটি কমিশনার বলা হতো। প্রশ্ন হচ্ছে, ইংরেজি Deputy Commissioner-এর অর্থ জেলা প্রশাসক হয় কীভাবে? জেলা প্রশাসক শব্দটি ডেপুটি কমিশনার শব্দের বঙ্গানুবাদ নয়, বরং দুটো আলাদা পরিচিতিকে নির্দেশ করে। বিজ্ঞজনরা বলেন, স্বাধীনতার পর তৎকালীন জ্যেষ্ঠ আমলারা সচেতনভাবেই Deputy Commissioner-এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসাবে ‘জেলা প্রশাসক’ শব্দটি নির্বাচন করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে, জেলা পর্যায়ে ডিসি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সব মন্ত্রণালয়ের, সব বিভাগের, সব কাজের তিনিই সর্বেসর্বা। ব্রিটিশ আমলে সাদা চামড়ার ডিসিরা নিজেদের শাসকই মনে করতেন। সেই মনমানসিকতা থেকে আমাদের আমলারা এতটুকুও বেরিয়ে আসতে পারেননি। সেই ভাবনা থেকেই ‘জেলা প্রশাসক’ শব্দটি নির্বাচন করা হয়েছিল বলে কথিত আছে। ‘জেলা প্রশাসক’। আহ! কী অভিজাত একটি নাম। কী মোহময় একটি শব্দ! কী অলৌকিক ক্ষমতাবান একটি পদমর্যাদার নাম! দেশ স্বাধীন হয়েছে তেপ্পান্ন বছর পেরিয়ে গেছে। ব্রিটিশরা গেছে আটাত্তর বছর আগে। একটি মুক্ত স্বাধীন জাতি হিসাবে আমরা নিজেদের নিজেরা শাসন করি। বাস্তবিক ক্ষেত্রেও এসব আমলা নিজেদের এমনভাবে গড়ে তোলেন, মাঝে মধ্যেই জেলা পর্যায়ের সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের চলাফেরায় ও আচার-আচরণে শাসকের গন্ধ পাওয়া যায়। এ নিয়ে অতীতে ডিসি-এসপিদের জমিদার বলে উচ্চ আদালত তির্যক মন্তব্যও করেছিলেন। বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধান অনুসারে ‘প্রশাসক’ শব্দের অর্থ হলো, ‘শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি’। আমলাদের দেওয়া এ বঙ্গানুবাদ তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারও মেনে নিয়েছিলেন। তারপর থেকেই ডেপুটি কমিশনারের বাংলা প্রতিশব্দ হিসাবে জেলা প্রশাসক-এর ব্যবহার প্রায়োগিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রশাসনে আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া আমলাতান্ত্রিক জঞ্জাল সাফ-সাফাই করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়েছে। ডিসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদায়ন করতে গিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, নতুন দুই দফায় পদায়নকৃত ৫৯ ডিসির মধ্যে ৫৬ জনই আওয়ামী লীগের তালিকার। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বারংবার পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এ ৫৬ জন বিগত সরকারের আমলে দাপটের সঙ্গেই চাকরি করেছেন এবং তারা সবাই আওয়ামী লীগের করা ফিটলিস্টেও ছিলেন; নতুন ফিটলিস্টেও তাদের রাখা হয়েছে। নতুন ফিটলিস্ট তৈরির সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, এবার নতুন ডিসি নিয়োগের মানদণ্ড হবে মেধা, দক্ষতা ও সততা। কিন্তু দেখা গেছে, প্রথম দফায় যে ২৫ জনকে ডিসি পদে বসানো হয়েছিল, তাদের মধ্যে মাত্র ১১ জন মেধায় চাকরি পেয়েছেন। বাকি ১৪ জনই বিভিন্ন কোটায় সুযোগ পাওয়া চাকরিজীবী ছিলেন। তীব্র হট্টগোল ও প্রতিবাদের মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আওয়ামী লীগ আশীর্বাদপুষ্ট আটজনের নিয়োগ বাতিল করেছে। তারপরও বিক্ষোভকারী কর্মকর্তারা পিছু হটেননি। তাদের বক্তব্য, নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের বড় অংশ দুর্নীতিবাজ ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাড়তি সুবিধাভোগী। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যে আটজনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে, তারা সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের তল্পিবাহক। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারপ্রধানের সুনজরে আসার জন্য নিজের বিবেককে বিকিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ ও পদবি আঁকড়ে ধরেছিলেন। এখনো খোঁজ নিলে এমন আরও অনেককেই পাওয়া যাবে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস পদায়নের আগে এসব কর্মকর্তা সম্পর্কে ভুল তথ্য এবং সঠিক তথ্য গোপন করা হয়েছিল বলে স্বীকারও করেছেন।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত দেড় মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কয়েকশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে নতুন করে বদলি, পদায়ন ও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অনেককেই ওএসডি ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। বেশিরভাগ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। স্বেচ্ছায় কেউ কেউ পদত্যাগও করেছেন। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেভাবে দুর্নীতি জেঁকে বসেছিল, তা দূর করা প্রয়োজন। দুর্নীতি ও ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে পদলেহনচর্চার অবসান ঘটাতে হবে। দলদাসবৃত্তি নির্মূল করতে হবে। অতএব, নতুন পরিবেশে, নতুন নতুন প্রত্যয় নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সরকারের সব প্রশাসন থেকে বিতর্কিত আমলাদের বিতাড়িত করতে হবে।

লেখক একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা


ডিসি নিয়োগ নিয়ে নজীরবিহীন তুলকালাম : সিনিয়র অফিসারদের হেনস্তার পরে চেককান্ড, চলছে তদন্ত

সচিবালয় প্রতিবেদক
৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিজয়ের পরে মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতায় বসার দেড় মাসের মধ্যে দেশের ৫৯টি জেলায় জেলাপ্রশাসক পরিবর্তন করা হয়েছে। এই ডিসি নিয়োগ করতে উপযুক্ত কর্মকর্তা বাছাই করতে নানাবিধ পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়েছে। উল্লেখ্য বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্য হতে ডিসি পদে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা হয়ে থাকে। এবারের বিসিএস ২৪, ২৫, ও ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তারা বিবেচনায় ছিল।

জেলাপ্রশাসকদের পদায়ন করার সাথে সাথেই বিগত আওয়ামী আমলে বঞ্ছিত কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপের অভিযোগ, এই নিয়োগে বিগত সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদেরকেই বসানো হয়েছে। অসন্তোষ প্রতিবাদ থেকে বাদানুবাদ ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে। এই পরিস্থিতির মধ্যে ডিসি পদায়ন প্রত্যাশী কিছু জুনিয়র অফিসাররা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বারান্দায় হৈ চৈ করে, চিৎকার ও শ্লোগান দেয়, তারা দু’জন যুগ্ম সচিবের কক্ষে ঢুকে নাজেহাল করে, এমনকি দায়িত্বরত গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাকে মারপিট করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ, বিপুল পরিমান আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ত্যাগী, বঞ্চিত ও যোগ্য কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে আওয়ামী লীগ পরিবার সংশ্লিষ্ট এবং বিগত ১৫ বছরে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদেরই আবার ডিসি পদে পুনর্বাসন করা হয়েছে। নবনিযুক্ত এসব জেলাপ্রশাসকদের নিয়োগ বাতিল চেয়ে ঢাকা, লক্ষ্মীপুর, খুলনা, নাটোর জেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৯জন ডিসির নিয়োগ বাতিল করা হয় এবং ৪ জনের রদবদল করা হয়। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের এ ক্ষোভের বিষয়টি তদন্তে একজন সিনিয়র সচিবকে প্রধান করে পরদিনই একটি কমিটি গঠন করা হয়। ঘটনার উত্তাপ কমাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠপ্রশাসনের সংশ্লিষ্ট যুগ্মসচিবকে সিলেটে বদলী করা হয়।

কিন্তু এই ঘটনার জের না কাটতেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি উইংয়ের অন্য একজন যুগ্মসচিবের কক্ষ থেকে ডিসি পদায়ন সংক্রান্ত ঘুষ লেনদেনের ৩ কোটি টাকার চেক উদ্ধারের সংবাদ ছাপা হয় প্রতিবেশী দেশের অর্থে পরিচালিত একটি বিতর্কিত দৈনিক পত্রিকায়। এ নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় নানা রংচং মেখে সংবাদ এবং ট্রল প্রকাশ করা হয়। এরপরেই সরকার নড়েচড়ে বসে। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। বেরিয়ে আসতে থাকে নানা কাহিনী- যা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে ধরে নেয়ার কারণ রয়েছে। এর আগে গন্ডগোল করা অফিসারদের একজনকে ঢাকার বাইরে বদলী করা হয়। বিষয়টি নিয়ে চলছে তথ্য সংগ্রহ এবং চুলচেড়া বিশ্লেষন।

জানা গেছে, এই চেককান্ডের ঘটনাটি একটি সাজানো নাটক ছিল। যে কর্মকর্তার কক্ষ থেকে কথিত চেকটি উদ্ধার দাবী করা হয়েছে, তিনি ডিসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার কেউ নন। তারপরও তাকে টার্গেট করে আক্রমন করা হয়েছে। সকল গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে। সেখানে তারা জানতে পেরেছেন, চেক উদ্ধারের কোনো ঘটনা এপিডি উইংয়ের কেউ দেখেওনি, জানেও না। কোনো কর্মকর্তার রুম থেকে আপত্তিকর কিছু উদ্ধার হলে বা সিজ করতে হলে কিছু নিয়ম বা প্রক্রিয়া আছে, সাক্ষীসাবুদও দরকার হয়। কিন্তু সেগুলো অনুসরণ করে দুদক, বা পুলিশকে কিছু জানানো হয়নি। কেবল কথিত সাংবাদিকের কাছেই খবরটা ছিল। ঐ সাংবাদিকের কাছে বিস্তারিত জানার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে চিঠি দিলে তিনি সহযোগিতা না করে উল্টো কয়েজন সমর্থককে নিয়ে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদী প্লাকার্ড দেখান, তার সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি হিসাবে বলার চেষ্টা করেন। অথচ ঘটনা সত্য হলে তিনি তথ্য প্রমান দিয়ে সহযোগিতা করতে পারতেন।

অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যার একাউন্টের নামে ঐ চেক, সেই একাউন্টে ৩ কোটি টাকা তো দূরের কথা ৩ হাজার টাকাও নেই। তাছাড়া চেকটি ঐ যুগ্মসচিবের নামে ইস্যু করাও নয়, বাহক চেক মাত্র। যে ২/৩জন জেলাপ্রশাসকের পদায়নের নিমিত্ত ঐ চেক লেনদেন দাবী করা হয়েছে, তাদের কাছে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে জোরের সাথেই বলছেন, এরকম কোনো ঘটনা তাদের জানা নেই।

সাধারণ বিবেক বুদ্ধি কি বলে? ৩ কোটি টাকা ঘুস কি কেউ চেকে নেয়, বা নিতে পারে? ঐ টাকা কি কেউ তুলতে পারবে? তাছাড়া ব্যাংকে তো টাকাই নেই। তাহলে কি দাড়ালো? জিনিসটা পুরোটাই একটি বানোয়াট নাটক, এবং হাতে বানানো ষড়যন্ত্র। একটি সুত্র জানায়, এই ষড়যন্ত্র করে সফল হলে এর পরের ধাপে জনপ্রশাসন সচিবকে একটি কায়দায় ফাঁসিয়ে উৎখাত করার পরিকল্পনা ছিল।

তবে সরকারের তদন্তকারীরা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের কল লিস্ট থেকে দেখতে পেয়েছেন, এক ভয়াবহ চিত্র। ঐ সংবাদ প্রকাশের আগে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের সাথে আন্দোলনকারী উপসচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তার (তার ব্যাকগ্রাউন্ডও সাংবাদিকতা) অংসংখ্য ফোন কল রয়েছে, যা থেকে অনেককিছুই অনুমান করা যায়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তিনি তার প্রটেকশনের জন্য এখন বড় একটি রাজনৈতিক দলের বড় বড় মাথাকে ব্যবহার করছেন। কিন্তু, প্রশ্ন হলো, দলটি কি এজাতীয় ষড়যন্ত্রের সাথে জড়াবে?

শোনা যাচ্ছে, ষড়যন্ত্র দমনে সরকারের কড়া পদক্ষেপ আসছে।



অন্তর্বতী আমলেও আইন মন্ত্রনালয়ে আওয়ামী কামড়া-কামড়ি, দখল-বেদখল

সচিবালয় প্রতিবেদক
সরকার বদল হলেও আইন মন্ত্রনালয়ে আওয়ামী লীগের দৌরাত্ম্য কমছেই না বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। অনুসারীদের কিছু না বলে চলে যাওয়া স্বৈরাচারী হাসিনার বৃহৎ প্লানের অংশ। হাসিনা জানতো তার অনুসারীরা কেউ কেউ অপকর্মের জন্য মারধরের শিকার হবে, কেউ কেউ পলাতক হবে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই হাসিনার পোষ্যপুত্ররা, খুনী গোষ্ঠি, সন্ত্রাসী, টাউট বাটপার, দূর্নীতিবাজরা ঠিকই জায়গা করে নিবে। হাসিনার বর্তমান স্পেসিফিক মিশন হলো কয়েকটি মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়া। র-এর সহায়তায় টপ লেভেলের বিশ্বস্ত সহযোগিরা যোগাযোগ রাখছে হাসিনার সাথে এবং হাসিনার নির্দেশনা রুট লেভেল পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে গোপন চ্যানেলে। তাদের ভেতরের কয়েকটি সোর্স নিশ্চিত করেছে যে, হাসিনার আপাতত টার্গেট স্বরাষ্ট্র ও পুলিশ, আইন ও বিচার, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় ও মিলিটারি। তারা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে নিয়মিত বৈঠক করে মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন কক্ষে ও মন্ত্রনালয়ের বাইরে। আনসার ক্যু ব্যর্থ হওয়ায় আনসার ইস্যুকে হাসিনা প্লান থেকে বাদ দিয়েছে। হাসিনার মিশন বাস্তবায়নে সহায়তা করছে র-এর এই দেশীয় পেইড এজেন্টরা। সাংবাদিকতার ব্যানারে র-এর অনেক সোর্স বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে ঘুরে ঘুরে ডাটা সংগ্রহ করছে।

হাসিনার মাস্টার প্লানের প্রথম কাজ হলো, তার সবচেয়ে অনুগত লোকদের প্রতিষ্ঠান প্রধান করা। একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান ঝরে পরলে বিকল্পজনকে প্রতিষ্ঠান প্রধান করা। প্রতিষ্ঠান প্রধান বানানোর জন্য বস্তা বস্তা টাকা ঢালতেও পরোয়া নেই। ইতোমধ্যেই ১০০ কোটি টাকায় হাসিনার প্রোডাক্ট সেট হয়েছে মেজর জেনারেল (অব) সিদ্দিকুর রহমানকে, চাকরিচ্যুতির পরপরই রাজউকের চেয়ারম্যান পদে পূণরায় বসিয়ে। একই ভাবে হাসিনার রাজনৈতিক সচিব প্রয়াত এইচটি ইমামের ভায়রা জায়নুল বারীকে চুক্তি হারানোর ৬ দিনের মাথায় ফের সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়েছে। হাসিনাকে স্বৈরাচার বানানোর আরেক কারিগর বিকাশ কুমার সাহা টাকার বস্তা দিয়েছে বগুড়ায় বাড়ী বিএনপি গুলশান অফিসের দায়িত্বে থাকা প্রভাবশালীর ব্যক্তিকে। নগদ ক্যাশের বিনিময়ে বিকাশের বিপদ কমে গেছে।

কোটি কোটি টাকায় একজনকে প্রতিষ্ঠান প্রধান সেট করার পর তার উপরে দায়িত্ব আওয়ামীলীগের বিশ্বস্ত সহযোগীদেরকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সেট করা। বিএনপি ও জামাতপন্থী ঘুসখোররা আওয়ামীলীগকে অতি অল্প দামে প্রমোট করে চলছে। আওয়ামী আধিপত্য যাতে বেশী দৃষ্টিগোচর না হয় সেই বিষয়েও সতর্ক এসব প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণে দূর্বল টাইপের কিছু অফিসারকে সেট করে নিরপেক্ষতার ব্যালেন্স দেখানো হচ্ছে। জামাত শিবির করা অফিসারদের প্রমোট করে জায়গায় জায়গায় পদ ব্লক করা ও দ্বন্দ্ব তৈরি করাও আওয়ামী পরিকল্পনার অংশ।

আইন মন্ত্রনালয়ে বর্তমান সময়ে চলছে সবচেয়ে বেশী নৈরাজ্য। হাসিনার দুই বিশ্বস্ত গোলামের একজন সাবেক আইন সচিব গোলাম সারোয়ার অসন্তোষের মূখে ওএসডি হলে সচিব পদে জায়গা করে নেয় হাসিনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ছোট ভাই শেখ জামালের বন্ধু গোলাম রাব্বানী। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাড়ী গোলাম রাব্বানীর চেয়ে হাসিনার বিশ্বস্ত কেউ বিচার বিভাগেতো বটেই, কোন সার্ভিসেই নেই। রাব্বানী বিগত ১৬ বছর একটানা ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে বসে হাসিনাকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে স্বৈরাচারী দানবে পরিণত করেছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল কুসুম কুসুম আওয়ামী বিরোধিতা করলেও আর আশ্রয় প্রশ্রয়ে আওয়ামীরা চামড়া বাঁচাচ্ছে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে পাচ্ছে, চেয়ার বাঁচাচ্ছে। নানা অপকর্মের অন্যতম সহায়তাকারী হলো বিচারাঙ্গনের কুলাঙ্গার খায়রুল হকের সাবেক পিএস মাসুমকে নিজের পিএস বানিয়ে দরকার মত ব্যবহার করছে। এর দ্বারা প্রাক্তন ঘাদানিক আসিফ নজরুলের নিয়ন্ত্রন করা ও ব্যালেন্স করা দুটোই হচ্ছে, সমানতালে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে তদবীর চলছে।

কেবল আসিফ নজরুলের পিএসই নয়, পতিত স্বৈরাচারী সরকারের আরও বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর পিএস জায়গা করে নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বতী সরকারের উপদেষ্টাদের ঘাড়ে। যেমন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পিএস নাসির ইতোপূর্বে আওয়ামীলীগ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের এবং বস্ত্র পাট মন্ত্রী মির্জা আজমের পিএস ছিলেন। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানার পিএস মারুফ স্বৈরাচারের মূখ্য সচিব তোফাজ্জেল মিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর সচিব সাজ্জাদুল হোসেনের পিএস ছিলেন।

তসবিহ, পট্টি আর রাতভর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার প্রচারনা চালানো ভন্ড স্বৈরাচার হাসিনা এবং শামীম ওসমানদের প্রশিক্ষনের ফসল লেবাসধারী গোলাম রাব্বানীকে বানানো- হয়েছে আইন সচিব। মন্ত্রনালয়ে বসেই রাব্বানী তছনছ করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়ের পোস্টিং সহ বিভিন্ন টায়ার। আইন মন্ত্রনালয়, হাইকোর্ট, ঢাকা ও ঢাকার আসে পাশে ঘুরে ফিরে জায়গা করে নিয়েছে পতিত স্বৈরাচারের সহযোগী জজ সাহেবরা। অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের সপ্তাহখানেকের মধ্যেই জুডিসিয়াল ক্যু করে অবৈধ ঘোষণা করার চেষ্টা করা দোসরদের যেখানে থাকার কথা জেলখানায়, তাদের পেছনে আরো কে কে আছে উদঘাটন করতে মামলা দিয়ে তাদেরকে রিমান্ডে নেয়া দরকার, অথচ তারা দিব্বি চাকুরি করছে, আর নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে। এদেরকে প্রটেকশন দিচ্ছে হাসিনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ভাই দাবীদার আইন সচিব গোলাম রাব্বানী, যাকে ২০২৪ সালে হাসিনা ইন্ডিয়া সফরে মোদির সাথে সাক্ষাৎ করাতে নিয়ে গিয়েছিল।

রাব্বানী সচিব পদে বসে খুব সচেতন ভাবে আইন মন্ত্রনালয়ে সেট করেছে হাসিনার একাধিক বিশ্বস্ত সহযোগীকে, যার মধ্যে অন্যতম সিনিয়র জেলাজজ পদমর্যাদার এরশাদুল আলম৷ বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় আইন মন্ত্রনালয়, হাইকোর্ট সহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে দায়িত্ব পালন করে এরশাদুল আলম স্বৈরাচারী হাসিনাকে ক্ষমতা পোক্ত করতে নানারকম পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছে। দুইটি জেলার জেলাজজ তথা নারায়ণগঞ্জের মতো ঢাকার গা-ঘেষা গুরুত্বপূর্ণ জেলার জেলাজজ হওয়া স্বৈরাচার আমলে হাসিনার বিশ্বস্ত না হলে সম্ভব নয়। এরশাদুলের বিষয়ে এটাও জানা যায় যে, হাসিনার সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বান্ধবী তৌফিকা করিমের অত্যন্ত ঘনিষ্ট ও লেনদেনের নিরাপদ মাধ্যম হিসাবে কিছুদিন কাজ করেছে এরশাদুল। তৌফিকা করিমের কাছে এককালীন কোটি টাকা, মাসে মাসে লাখ লাখ টাকা ও বড় মামলায় নির্দেশমত আদেশ দেয়ার শর্তে ভাল পোস্টিং নেয়া অফিসাররা এমনকি বিচারপতিরাও প্রত্যেকে দিব্বি অফিস করছে এখনও। স্বৈরাচারের সহযোগী এরশাদুল আলমের থাকার কথা পলাতক অথবা জেলখানায় অথবা সবচেয়ে দুরবর্তী স্টেশনে, অথচ অত্যন্ত বিস্ময়করভাবে স্বৈরাচারের এই সহযোগী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বঞ্চিত হওয়াদের উপরে ছড়ি ঘোরাচ্ছে আইন মন্ত্রনালয়ে বসে। স্বৈরাচারের দোসরদের উৎপাত আইন মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। লুটপাট, দখলবাজ আওয়ামীলীগাররা বেশীদিন তাদের বৈশিষ্ট্য লুকাতে পারে না।

স্বৈরাচারের সহযোগী এরশাদুল আলম মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেই আওয়ামী চরিত্র বের করে ফেলে। গত ২৫/০৯/২০২৪ তারিখ বিকাল বেলা এরশাদুল আলম দলবল নিয়ে মন্ত্রনালয়ের আরেক ছাত্রলীগার যুগ্ম জেলাজজ মাসুদ পারভেজ তথা আইন সচিবের পিএসের রুম দখল করে নেয়। রুম বরাদ্দের সরকারী অনুমোদন ছাড়া গায়ের জোরে রুম দখল করার আওয়ামী স্টাইল ও দূঃসাহসে পুরো মন্ত্রনালয় হতবাক। এই ঘটনা স্পষ্টত ফৌজদারি অপরাধ। এই ঘটনায় মারামারির পর্যায় পর্যন্ত গড়ানোর সম্ভাবনা থাকলেও স্টাফদের হস্তক্ষেপে মারামারি হয়নি। এরশাদুল আলমকে প্রশ্রয় দিচ্ছে হাসিনার ভাইখ্যাত সচিব গোলাম রাব্বানী। তাই অনুমোদন বিহীনভাবে জোরপূর্বক রুম দখল করে ফৌজদারি অপরাধ করার পরেও ফৌজদারি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি এরশাদুলের বিরুদ্ধে। এই অপরাধের বিচার না হলে মন্ত্রনালয়ে কোন শৃঙ্খলা থাকবেনা। শৃংখলা ফেরাতে ও চাকুরীরত আওয়ামী অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে এই ঘটনায় কর্মচারীদের পহ্ম থেকে ফৌজদারি মামলা করার জন্য ইতোমধ্যে মিটিং হয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে।

একনায়ক হাসিনার পতন আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে কিন্তু দূঃখজনক হলেও এটাই সত্য যে তার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রনালয়ের প্রায় সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদের দখল নিয়েছে হাসিনার সবচেয়ে বিশ্বস্তরা। জীবন উৎসর্গ করা শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানির ঘটনা ইতোমধ্যেই ঘটে চলছে। অর্জিত বিজয়ের প্রায় মৃত্যু ঘটেছে আইন মন্ত্রনালয়ে। এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে এই আন্দোলনের দাফন কাফন সম্পন্ন হয়ে যেতে খুব বেশী দেরী হবে না হয়তো।

রাষ্ট্রে একা একা একজন ব্যক্তি কখনই স্বৈরাচার হতে পারে না। অনেকগুলো ছোট, মাঝারি, বড় সাইজের স্বৈরাচারের গুম, খুন, দূর্নীতি, লুটপাট, জেল জুলুম, স্বাধীনতা হরণ, গণতন্ত্র ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ধংস করার সবগুলি কাজের যোগফল হলো একটি স্বৈরাচার। একজন স্বৈরাচারের অপরাধের চেয়ে স্বৈরাচারের কারিগরদের অপরাধের দ্বিগুণ শাস্তি হওয়া উচিত। বিগত ১৫ বছরে হাসিনা বিভিন্ন সেক্টরে সেট করেছে পুরো স্বৈরাচার টিম। একজন গেলে পরের জনও স্বৈরাচার তার পরেরজনও স্বৈরাচার। যুদ্ধবিধ্বস্তের মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি পার করছে দেশ। হাজার মৃত্যু, অগনিত আহত, লাখ লাখ ব্যক্তি প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভিকটিম। দেশ, অর্থনীতি ও লুটপাটের ভিকটিম কোটি কোটি সাধারণ মানুষ। বর্ডারের ওপারে বসে হয়তো বা মুচকি হাসছে স্বৈরাচারী হাসিনা। হয়তো বলছে, ১৫ বছরে বুড়ো থেকে গুড়া সব সেট করে রেখে গেছি কয়টা বাদ দিবি। শত শত র-এর পেইড এজেন্ট তৈরি করে রেখেছে। ভোল পাল্টে টিকে থাকা এবং অবস্থান তৈরি করে নেয়া স্বৈরাচারের সহযোগীদের কৌশল মাত্র। তাদের ষড়যন্ত্রের এখনই না রুখতে পারলে ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় অচিরেই ধংস হয়ে যাওয়ার চরম আশঙ্কা রয়েছে।

জামায়াতের বিএনপি জোট ছাড়া নিয়ে আওয়ামী লীগে সন্দেহ!


28 Aug, 2022

দুই যুগের জোটসঙ্গী। জোটে চড়ে এক দফায় স্বাদও পায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার। স্বাধীনতাবিরোধী দল হওয়ায় তাদের নিয়ে ‘রাজনৈতিক অস্বস্তিও’ নতুন নয়। এরপরও জামায়াতে ইসলামীকে নিয়েই দীর্ঘকাল রাজনৈতিক পথ ভেঙেছে বিএনপি। হঠাৎ খবর আসছে, সেই জামায়াতই বিএনপি জোট ছাড়ছে!

জামায়াতে ইসলামীর বিএনপি জোট ছাড়ার খবরে নানান কানাঘুষা। তবে ‘স্পিকটি নট’ জোটের প্রধান দল বিএনপির। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সময় মতো এই বিষয়ে কথা বলবেন। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি থেকে জামায়াতের আলাদা হওয়া তাদের রাজনৈতিক কৌশল।

বিএনপির নেতৃত্বে ১৯৯৯ সালে গড়া জোটে যোগ দেয় জামায়াতে ইসলামী। কেটে গেছে দুই যুগ। জোটের সঙ্গী হয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতার স্বাদ পায় দলটি। তবে একাত্তরে স্বাধীনতার বিরোধিতায় থাকা দলটি এখন রাজনীতির পালাবদলে বেকায়দায়। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক এই জামায়াতকে মূল্যায়ন না করার অভিযোগ এনে সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল সভায় জোটে জামায়াত আর নেই বলে জানান দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তার সেই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ওই ভিডিওতে জামায়াত আমিরকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা এতদিন একটা জোটে ছিলাম। ছিলাম বলে আপনারা হয়তো ভাবছেন, কিছু হয়ে গেছে নাকি? আমি বলি হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি জোট ছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। সেটা আর ফিরে আসেনি।’

জোটকে অকার্যকর উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বছরের পর বছর এ ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না। এই জোটের সঙ্গে বিভিন্ন দল যারা আছে, বিশেষ করে প্রধান দলের (বিএনপি) এই জোটকে কার্যকর করার কোনো চিন্তা নেই। বিষয়টা আমাদের কাছে স্পষ্ট দিবালোকের মতো এবং তারা আমাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাস্তবতা হচ্ছে নিজস্ব অবস্থান থেকে আল্লাহর ওপর ভর করে পথচলা। তবে হ্যাঁ, জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্লাহ।’

বিএনপির সঙ্গে জোটের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের আমীর বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি, এর সাথে তারা ঐকমত্য পোষণ করেছে। তারা আর কোন জোট করবে না। এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবো। যদি আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করেন তাহলে আমাদের আগামী দিনগুলোতে কঠিন প্রস্তুতি নিতে হবে এবং অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। দোয়া করেন, এসকল ত্যাগ যেনো আল্লাহর দরবারে মঙ্গলজনক হয়। এ ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ পাক যেন আমাদের পবিত্র একটি দেশ দান করে। যে দেশটা কোরআনের আইনে পরিচালিত হবে।’

এদিকে বিএনপি থেকে জামায়াতের আলাদা হওয়াকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন ‘আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত কখনো ছিন্ন হবে না। জামায়াতের আমির বলেছেন তারা যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে। বিএনপি জামায়াতকে কখনো ছাড়তে পারবে না।’

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম আরেক সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন,‘বিএনপির বড় উইকেট পড়ে গেছে। জামায়াতে ইসলাম বলেছে বিএনপির সঙ্গে তারা আর নেই। তারা এখন শোকে কাতর।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বিএনপিকে ছেড়ে জামায়াত চলে গেছে না জামায়াতকে ছেড়ে বিএনপি চলে গেছে, তা বোধগম্য নয়। আসলে রসুনের গোড়া এক জায়গায়ই হয়।’

তবে জামায়াতের আমিরের বক্তব্যের বিষয়ে ২০ দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য আসেনি। তবে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকরা জামায়াতের আমিরের বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেছেন, ‘আমরা সময়মতো জানাব। এ ব্যাপারে আমি কোনো কমেন্ট করব না।’

এদিকে ভাইরাল বক্তব্য সম্পর্কে জানতে জামায়াতে ইসলামীর আমির ও দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

৥ঢাকা টাইমস

৫০ মিলিয়ন ডলারের বাজেটে নিউইয়র্কে গোল্ডেন জুবিলি বাংলাদেশ কনসার্ট

যুক্তরাষ্ট্রের ৯৫ শতাংশ বাংলাদেশিই জানেন না, নানা প্রশ্ন!

৬ মে, ২০২২

ঋণ করিয়া ঘি খাওয়া নয়, রীতিমত আমেরিকার মাটিতে ফুটানকি করছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার! ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কনসার্ট আয়োজন করেছে, যার কোনো সত্যিকারের হিসাব কারো কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পুর্তি এবং মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ঐতিহাসিক মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে স্থানীয় সময় শুক্রবার ৬ মে আয়োজন করা হয়েছে ‘গোল্ডেন জুবিলি বাংলাদেশ কনসার্ট’। এর জন্য বাংলাদেশ সরকার থেকে ১০ কোটি টাকা দেয়ার খবর প্রকাশ করলেও বাস্তবে এর বাজেট ৫০ মিলিয়ন ডলার, জানিয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলকের এক ঘনিষ্ট বন্ধু। এর মধ্যে স্করপিয়ন্স ব্যান্ড দলকে ২৫ মিলিয়ন ডলার দেয়ার কথা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত এত বিশাল খরচের একটি আন্তর্জাতিক মানের কনসার্টের আয়োজন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৯৫ শতাংশ বাংলাদেশিই জানেন না। এ নিয়ে প্রবাসীদের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গোল্ডেন জুবিলি বাংলাদেশ কনসার্টের কোনো প্রচার প্রচারণাও নেই কোথাও। অনুষ্ঠানের খবর স্থানীয় মেইন স্ট্রিম মিডিয়ায় প্রকাশ হয়নি। নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ১৫টি সাপ্তাহিক পত্রিকার মধ্যে স্বল্প প্রচারের ৩/৪টি পত্রিকায় দায়সারা গোছের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। এসব বিজ্ঞাপনে কনসার্টের সময়সূচি, টিকেটের মূল্য, টিকেট কোথায় পাওয়া যাবে, কার সঙ্গে প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যাবে সেসব বিষয়ের কোনো উল্লেখ নেই। দায়সারা গোছের সীমিত আকারের প্রচারের কারণে ২২ হাজার আসনের মধ্যে মাত্র ৪ হাজার টিকেট বিক্রি হয়েছে। এ মিলনায়তনের এক দিনের ভাড়া প্রায় অর্ধ মিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। শেষ মুহুর্তে ১০০ ডলারের টিকেটের দাম চলে এসেছে ৫৫ ডলারে! এমন ছ্যাড়াব্যাড়া অবস্থায় শেষ মুহুর্তে কনসার্টের একদিন আগে নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে আইসিটি মন্ত্রী জুনাইদ পলক একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এতে আয়োজনের সীমাবদ্ধতা, ব্যয় নিয়ে লুকোচুরি, এবং স্পন্সর নিয়ে ব্যাপক প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন পলক, যার কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি। শেষ মুহূর্তে কনসার্টের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করায় প্রবাসীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই কনসার্ট নিয়ে সাধারণ বাংলাদেশীদের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের জন্য ১৯৭১ এর ১ আগস্ট এই ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে জর্জ হ্যারিসন, পণ্ডিত রবিশঙ্করের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ কনসার্ট’। আর এ কনসার্ট ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের জন্য। তাদেরই স্মরণে ৬ মে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের হাইটেক পার্ক বিশাল বাজেটে এই কনসার্ট আয়োজন করেছে। প্রায় বছর খানেক আগে এই কনসার্টের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হলেও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে জানানোর ব্যবস্থা করেনি আয়োজকরা। বিশাল বাজেটের এই কনসার্ট উপভোগ করতে বাংলাদেশ থেকে মন্ত্রী, এমপি, আমলা ও তাদের পরিবারের বহু সদস্য সহ তিনটি চার্টার্ড ফ্লাইটে সহস্রাধিক লোকে নিউ ইয়র্কে আসছেন বলে জানা গেছে, যাদের মধ্যে সরকার দলীয় লোক এবং কর্মকর্তারা রয়েছেন। বিদেশ যাওয়া সংক্রান্ত একটি সরকারি আদেশে দেখা যায়, এতে অংশ নিতে সরকারের দুই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, তিনজন সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনসহ ৫৫ জন গেছেন। এদের মধ্যে আইসিটি বিভাগসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্প ও দপ্তরের আছেন ৩১ জন। এত কর্মকর্তা কেন যাচ্ছেন, কোন মাপকাঠিতে যাচ্ছেন, তাঁদের কাজ কি, খরচ দিবে কে এ সংক্রান্তে কোনো সদুত্তর মিলেনি।

হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের এমডি বিকর্ণ কুমার ঘোষ জানান, এ আয়োজনে সরকার দিয়েছে ১০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ এই কনসার্টে সহায়তা (স্পনসর) করছে। কোন্ প্রতিষ্ঠান কত টাকা দিচ্ছে, সেটা জানা যায়নি। জিও অনুযায়ী, আইসিটি বিভাগসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সরকারের অন্য বিভাগের কর্মকর্তা ও সাংসদদের ব্যয় আইসিটি বিভাগ, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, আইসিটি অধিদপ্তর এবং আইসিটি বিভাগের চলমান বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ধরা হয়েছে। আইসিটি বিভাগ ও এর অধীন ছয়টি প্রকল্প, আইসিটি অধিদপ্তর, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের মোট ৩১ জন কনসার্টে যোগ দিতে যাবেন। এই তালিকায় আইসিটি বিভাগের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তাঁর একান্ত সচিব সাইফুল ইসলাম এবং প্রতিমন্ত্রীর দু’জন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম ও একরামুল হক, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. খায়রুল আমিন ও খন্দকার আজিজুল ইসলাম, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন প্রকল্প পরিচালক মোস্তফা কামাল, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ এবং তাঁর মেয়ে ও প্রকল্প সহায়ক গীতাঞ্জলী ঘোষ। আরও যাচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তাঁর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেন; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ, তাঁর একান্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান, কমিটির সদস্য নুরুল আমিন ও অপরাজিতা হক; সংরক্ষিত আসনের সাংসদ নাহিদ ইজাহার খান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমম্বয়ক জুয়েনা আজিজ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজমা মোবারক, পরিকল্পনা কমিশনের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম। তাদের সঙ্গে আরও যাচ্ছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলেকের মা জামিলা আহমেদ ও বোন ফারজানা আহমেদ, সাংসদ নুরুল আমিনের স্ত্রী রোকশানা পারভীন, সাংসদ অপরাজিতা হকের স্বামী মোজাম্মেল হক, এ কে এম রহমতুল্লাহর স্ত্রী হালিমা রহমতুল্লাহ, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্ত্রী তাপসী ঘোষ, আইসিটি বিভাগের উপসচিব রেজা মো. আবদুল হাইয়ের স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন, জেলা পর্যায়ে আইটি/হাইটেক পার্ক স্থাপন (১২টি জেলায়) প্রকল্পের পরিচালক এ কে এম ফজলুল হকের স্ত্রী ফারহানা আরাবিয়া, আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিবের স্ত্রী লাকি আক্তার ও তিন মেয়ে। এই বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ম্যাডিসন স্কয়ার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেই স্থানে ৫০ বছর পর কনসার্টের উদ্যোগটি ভালো। কিন্তু যেসব সরকারি কর্মকর্তা যাচ্ছেন, তাঁরা কোন মাপকাঠিতে যাচ্ছেন, আয়োজনের সঙ্গে তাঁদের কী সম্পৃক্ততা এবং কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা সরকারি আদেশে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। তাঁর মতে, যাঁরা যাচ্ছেন, সেখানে কার কী দায়িত্ব, সেটার জবাবদিহি প্রয়োজন। সরকারি টাকায় এই ব্যয়বহুল ভ্রমণের পেছনে যৌক্তিকতা না থাকলে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

ব্যবসা গুটিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করছে সামিট গ্রুপ

শেখ হাসিনার সরকার আর থাকছে না, এমন চুড়ান্ত খবর পেয়ে ব্যবসা গোটাচ্ছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতের রাঘব বোয়াল সামিট গ্রুপ। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত লুটপাট করে এতকাল খাচ্ছিল, এবার পালাবদলের আগেই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে আজিজ খান ফারুক খান গং। ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কেপিসিএল বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেড় কোটি ডলারে বিক্রি করতে যাচ্ছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১২৯ কোটি টাকা। আমেরিকান কম্পানীর কাছে বিক্রি দেখালেও বাস্তবে এটি কিনতে যাচ্ছে ডরিন গ্রুপের কর্ণধার ঝিনাইদহ-২ আসনের নৈশভোটের এমপি তাহজিব আলম সিদ্দিকী।

ভিসা জটিলতায় সফর বাতিল হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের

ভিসা জটিলতার কারণে একের পর এক সফর বাতিল হচ্ছে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। সরকারি আদেশ থাকা সত্ত্বেও তাদের ভিসা ইস্যু হচ্ছে না। ফলে আন্তর্জাতিক নানা ইভেন্ট থেকে বাদ পড়ছে বাংলাদেশ। ভিসা না পাওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেও জটিলতায় পড়ছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৪ কর্মকর্তার যুক্তরাষ্ট্র সফর সংক্রান্ত একটি সরকারি আদেশ জারি করা হয়। আদেশ অনুসারে, ‘ভেহিকেল মাউন্টেড ডেটা ইন্টারসেপ্টর’ ক্রয় এবং এর সেবার বিষয়ে জানতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার কথা ছিল ওই চার কর্মকর্তার। ক্রয় প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ফ্যাক্টরি অ্যাসেসমেন্ট টেস্টে (এফএটি) অংশ নেয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে তাদের এ সফর বাতিল করতে হয়েছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন- ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান, ওই সেলের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার-২ লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামিরুল আলম খান দিলির, জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব নূর-ই-মাহবুবা জয়া, এনটিএমসিতে সংযুক্ত মেজর মো. আহসানুল ইসলাম। আগামী ২৩ থেকে ২৬শে মে মোট ৪ দিনব্যাপী তাদের এ সফর হওয়ার কথা ছিল সফরের সকল খরচ বহন করছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মোবাইলাম ইনকর্পোরেশন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ভিসা না পাওয়ায় ওই কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল হয়েছে। পরবর্তীতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বিষয়টি অবগত করলে তারা ভিন্ন একটি দেশে ফ্যাক্টরি অ্যাসেসমেন্ট টেস্টের আয়োজন করে। গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত নতুন একটি সরকারি আদেশ জারি করা হয়। এতে, উপসচিব নূর-ই-মাহবুবা জয়া বাদ পড়েন। সফরকারীদের দলে যুক্ত হন জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. বশিরুল আলম।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের প্রায় আরও ২০টি দেশে মোবাইলামের অফিস রয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে বেলজিয়ামের ঘেন্ট শহরে নতুন করে এফএটি-এর আয়োজন করা হয়েছে। এদিকে ভিসা না পাওয়ায় জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিতব্য ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন নেটওয়ার্ক (আইসিএন) এ অংশ নিতে পারছেন না সরকারের আরেক সিনিয়র সচিব।  আগামী ৪ থেকে ৬ই মে এই সফর অনুষ্ঠানের কথা। ইতিমধ্যে সরকারি আদেশও জারি করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ভিসা না পাওয়ায় এই সফরে অংশ নিতে পারছেন না সরকারের দুই কর্মকর্তা এবং একজন পরামর্শক। তারা হলেন- প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) মো. মফিজুল ইসলাম, সদস্য জিএম সালেহ উদ্দিন এবং পরামর্শক ব্যারিস্টার মাফরুহা মারফি। উল্লেখ্য, এর আগেও সরকারের একজন সিনিয়র সচিব ভিসা জটিলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করেন। দুবাই থেকে তাকে ফেরত পাঠানো হয়।

[ মানবজমিন এই সংবাদটি প্রকাশের পরে এনটিসির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জিয়াউল আহসানের চাপে তারা অনলাইন সংস্করণ থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ব্রিগেডিয়ার জিয়া নিজেই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এর ইঙ্গিত দিয়ে লিখেন, মানবজমিন পএিকা আমাদের ভ্রমন সম্পর্কিত ভুয়া, বানোয়াট এবং মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছেন।পত্রিকাটি তার অনলাইন হতে আবার সকালে সেটা সরিয়েও নিয়েছে। কিন্তু আজকের প্রকাশিত পত্রিকা হতে সরাতে পারেনি। মতি ভাই আমিই আপনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। কারন আমি প্রথমে এটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, আপনার পএিকাতেও সরকারী কর্মকর্তাদের নামে ভুয়া নিউজ প্রকাশ করতে হবে। এই ভুয়া নিউজ সম্পর্কিত কোন প্রতিবাদ করার কোন অধিকার কি আমাদের নেই? অবশ্যই আছে। কিন্তু করিনা। কারন আমি ব্যাক্তিগতভাবে মতি ভাইকে চিনি। আর আইনি পদক্ষেপ নিলে তখন সবাই বলবেন যে, সকলের মুখ চেপে ধরা হচ্ছে। এদেশে কথা বলার অধিকার নেই। আসলে আমরা যারা সরকারী চাকুরী করি তাদেরই কথা বলার অধিকার নেই বা থাকলেও সব সময় বলিনা। সেজন্য আমিই এই ভুয়া খবর ছাপানোর জন্য পএিকার পক্ষ হতে ক্ষমা চাচ্ছি  কারন খবরটি সম্পুর্ণ ভুয়া, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিত। ]

‘ইফতার পর্যন্ত প্রাণ ভিক্ষা দাও’ বলেও রেহাই পেলেন না, নিহত হলেন মোরশেদ

৯ এপ্রিল ২০২২
‘আমি রোজাদার, আমাকে ইফতার পর্যন্ত প্রাণ ভিক্ষা দাও, প্লিজ তোমাদের পায়ে পড়ি। মারতে চাইলে ইফতারের পর মারিও।’ এমন করে আকুতি জানিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোরশেদ (৩৮) নামে কক্সবাজারের এক ব্যক্তির। ইফতার কেনার সময় জনসম্মুখে তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে আওয়ামীলীগ সভাপতির নেতৃত্বে খুনীরা।

নিহত মোরশেদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটু প্রতিবাদী ছিলেন। তিনি সিন্ডিকেটের অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করতে গিয়েই খুনের শিকার হলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোরশেদ মারা যান। তিনি সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের মাইজপাড়ার মৃত মাওলানা ওমর আলীর ছেলে।

বলী মোরশেদের ভাই জয়নাল আবেদীন ও আইনজীবী জাহেদ আলী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ভাই মোরশেদ ইফতার সামগ্রী কিনতে চেরাংঘর বাজারে যান। সেখানে মাহমুদুল হক, জয়নাল, কলিম উল্লাহসহ তাদের গ্রুপের ১৫-২০ জন লোক লোহার রড, ছুরি ও লাঠি নিয়ে মোরশেদ আলীর ওপর হামলা চালায়। আকস্মিক হামলা ও রোজায় ক্লান্ত হয়ে মোরশেদ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তারপরও হামলাকারীরা তার উপর নির্যাতন চালায়।

হামলকারীরা যখন হামলা চালায়, তখন মোরশেদ হামলাকারীদের বলছিলেন, সারাদিনের রোজায় বেশি ক্লান্ত, মারতে চাইলে ইফতারের পর মারিও। এরপরও তারা মোরশেদকে মাটিতে ফেলে মারধর ও কুপিয়ে চলে যান, যোগ করেন নিহতের ভাই ও আইনজীবী।

স্থানীয়রা জানায়, সরকারি একটি সেচ প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে ইজারা নিয়ে পরিচালনা করে আসছিল মোরশেদের পরিবার। সেই সেচ প্রকল্পের পানির স্কিম নিয়ে হামলাকারীদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে মোরশেদ আলীর বিরোধ চলছিল। হামলাকারীরা চাষিদের ভোটে নির্বাচিত স্কিম পরিচালনাকারীদের পানির পাম্পের পাশে জোরপূর্বক নিজেদের পাম্প বসানো বা চলমান প্রকল্প দখল করতে চেয়েছিল। কিন্তু মোরশেদ তাতে বাধা দেন। এই নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বিবাদ চলে আসছিল।

তারা বলছেন, কিছুদিনের মধ্যে ওই সেচ প্রকল্প নতুন করে ইজারা হওয়ার কথা রয়েছে। ইজারা পাওয়ার জন্য মোরশেদের পরিবার আবারও আবেদন করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে প্রতিপক্ষ। সেই থেকে তাকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করে আসছিল ওই চক্রটি, বলেন স্থানীয়রা।

মোরশেদ পরিবারের অভিযোগ, মাহমুদুল হক মেম্বার, জয়নাল আবেদিন হাজারি, কলিম উল্লাহ, আবদুল মালেকসহ হামলার মূল নির্দেশদাতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলাল।

‘তোমরা মোরশেদ আলী বলীকে বাঁচাতে কেউ আসবে না, তাকে মেরে ফেলার জন্য ওপরের নির্দেশ আছে। ’ কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলাল ও ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রকাশ্য একটি বাজারে এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে একজন প্রতিবাদী মানুষের হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন।শনিবার সন্ধ্যায় চাঞ্চল্যকর মোরশেদ বলী হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় উক্ত নেতাদ্বয়সহ ৩৫ জন আসামি রয়েছেন। এর মধ্যে ২৬ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। আসামিদের মধ্যে অন্তত ১৫/১৬ জনই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গ সংগঠনের দুই তৃণমূল নেতা ‘ওপরের নির্দেশ’ প্রাপ্ত হয়ে একজন নীরিহ ব্যক্তিকে শত শত মানুষের সামনে পৈশাচিকভাবে হত্যার ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। পবিত্র রমজান মাসে একজন রোজাদার মানুষকে ইফতারি কিনার সময় একদম প্রকাশ্য দিনের বেলায় এমন নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাটি বিবেকবান মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। ৩০/৩৫ জন সন্ত্রাসী বাজারের একটি গলি ঘিরে বন্দুক, ধারাল দা, হাতুড়ি, ছোরা, কিরিচ ও লোহার রড দিয়ে এ জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

৪২ দিন গুম করে রাখার অভিযোগ, র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ মানবাধিকার কমিশনের


21 Mar, 2022

ছয় বছর আগে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর ৪২ দিন গুম করে রাখার অভিযোগে র‌্যাবের সাবেক এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগমের নেতৃত্বে দ্বৈত বেঞ্চের প্রথম শুনানি শেষে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এই আদেশ দেওয়া হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি মানবাধিকার কমিশন থেকে ওই আদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‌্যাবের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মানবাধিকার কমিশনের এই আদেশে বিষয়টি ‘স্পর্শকাতর’ উল্লেখসহ অপহরণের এই ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধান করে অভিযোগকারীর নিরাপত্তাসহ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কমিশনকে অবহিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে বলা হয়। আগামী ৩১ মার্চ এই অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

অভিযোগকারীর বরাতে কমিশনের আদেশে বলা হয়, কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার (অপারেশন) র‌্যাব-এ থাকাকালীন অভিযোগকারীকে অপহরণের কাজটি করিয়েছিলেন। যা র‌্যাবের ডিজি জানতেন এবং ডিবির কাছেও তথ্য আছে মর্মে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগকারী তার ও পরিবারের নিরাপত্তাসহ এই ঘটনার তদন্তপূর্বক অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে অভিযোগকারী কমিশনে আবেদন করেন।

অভিযোগকারীর বরাতে কমিশনের আদেশে বলা হয়েছে, রাজধানীর ইন্দিরা রোডের লেক্সাস ডেভেলপারস লিমিটেডের চেয়ারম্যান বেল্লাল হোসেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে একটি অভিযোগ (নম্বর-২৯/২২) দায়ের করেন। অভিযোগে বেল্লাল হোসেন বলেন, লেক্সাস কুয়াকাটা সিটি নামে একটি প্রকল্পের কতিপয় গ্রাহককে চুক্তি সম্পাদন করে জমির মূল্য বকেয়া রেখে সাফ কবলা রেজিস্ট্রেশন মূলে প্লট হস্তান্তর করে দেওয়া হয়। গ্রহীতারা কিস্তির টাকা যথাযথভাবে পরিশোধ করার অঙ্গীকার করলেও তারা ওই টাকা পরিশোধ করছেন না। অভিযোগকারীর ব্যবসায়িক পার্টনার জসিম উদ্দিন চক্রান্ত করে সাজ্জাদ আহমেদ ও ডা. শহিদুল বারীর যোগসাজশে লেক্সাস কুয়াকাটা সিটি প্রকল্পটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। দখলে ব্যর্থ হয়ে ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর অভিযোগকারীকে (ব্যবসায়ী বেল্লাল হোসেন) অপহরণ করা হয়।

তবে বাংলা ট্রিবিউনের অনুসন্ধান বলছে, মানবাধিকার কমিশনের আদেশে অপহরণ ও গুমের ঘটনার সঙ্গে র‌্যাবের সাবেক যে কর্মকর্তার কথা বলা হয়েছে, কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার সে সময় র‌্যাবে কর্মরত ছিলেন না। তিনি ২০১৯ সালের ১৯ জুন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। পৌনে দুই বছর র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০২১ সালের মার্চ মাসে তিনি নিজ বাহিনীতে ফিরে যান। অপহরণ ও গুমের এই ঘটনার সময় র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান। আর সে সময়ে র‌্যাবের ডিজি বা মহাপরিচালক ছিলেন বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ।

সম্প্রতি র‌্যাবের এই সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ছয় কর্মকর্তা ও র‌্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তথা র‌্যাবসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। কূটনৈতিক নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা করছে সরকার।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম জানান, কোনও কর্নেলের নাম উল্লেখ করে তো চিঠি দেওয়ার কথা নয়। আদেশের কপিটি না দেখে এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে না।

মানবাধিকার কমিশন থেকে চিঠি পাওয়ার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি স্বরষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক-৫ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী বিষয়টি অনুসন্ধানপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক ও র‌্যাবের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠান। ৩ মার্চ পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (ক্রাইম ইস্ট, অতিরিক্ত দায়িত্বে ক্রাইম মেট্রো) জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ঢাকার পুলিশ কমিশনারকে অনুসন্ধানপূর্বক মহামতসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়ার অনুরোধ করেন। যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনও চিঠি আমার হাতে এখনও পৌঁছেনি। যদি এরকম কোনও তদন্তের আদেশ আসে, আমরা অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখবো। আমরা অতীতেও র‌্যাবের কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ উঠলে যথাযথ তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।’

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তবে অভিযুক্ত যে কর্মকর্তার কথা বলেছেন, তিনি তো সে সময়ে র‌্যাবে ছিলেন না। তার মানে অভিযোগেই গড়মিল রয়েছে। আর এতবছর পর কেন তিনি অভিযোগ করলেন সেটিও ভাববার বিষয়। এছাড়া হরহামেশাই র‌্যাব পরিচয়ে এক শ্রেণীর দুস্কৃতিকারী নানারকম অপঘটন ঘটিয়ে চলছে। আমরা মাঝে মধ্যেই ভুয়া র‌্যাব-পুলিশ গ্রেফতার করছি। সেরকম কোনও চক্র এটি ঘটিয়েছে কিনা, প্রয়োজনে তাও খতিয়ে দেখা হবে।’ র‌্যাব বা র‌্যাবের কোনও সদস্যদের আইনবর্হিভূত কোনও কর্মকাণ্ড করার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

যদিও সোমবারই (২১ মার্চ) ঢাকায় সেন্টার ফর গর্ভন্যান্স স্টাডিজ বাংলাদেশে গুমের ঘটনা নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনে র‌্যাবের বিরুদ্ধে গুমের বেশি অভিযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের ডিস্টিংগুয়িশ ফেলো ড. আলী রিয়াজের নেতৃত্বে করা এই গবেষণায় গত তিন বছরে ৭১টি গুমের ঘটনার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১টি গুমের ঘটনায় র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে, ২০০৭ সাল থেকে ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ৬০৪ জন গুমের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়। ৮৯ জনকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আর বিভিন্ন মেয়াদে গুম থাকার পর ৫৭ জন ফেরত এসেছেন। গুম থেকে ফেরত আসার পর বেশিরভাগই এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান না।

সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যে ব্যবসায়ীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, সেই বেল্লাল হোসেনের ইন্দিরা রোডের অফিসে গিয়ে প্রথম দিন তাকে পাওয়া যায়নি। তার একজন সহকর্মীর মাধ্যমে পরিচয় দিয়ে কথা বলার প্রসঙ্গে জানানো হলে তিনি একদিন পর ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ের নিচ তলায় বসে কথা হয় ব্যবসায়ী বেল্লাল হোসেনের সঙ্গে।

বেল্লাল হোসেন জানান, ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর সন্ধ্যায় কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে তাকে একটি কালো গ্লাসের হায়েস গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। গাড়িতে তুলেই তার হাত ও চোখ মুখ বেঁধে ফেলা হয়। এরপর ৪০ মিনিটের মতো গাড়ি চালিয়ে কোনও একটা অন্ধকার ঘরে নিয়ে গিয়ে তাকে ৪২ দিন আটকে রাখা হয়। এর মধ্যে তাকে পটুয়াখালীতে লেক্সাস কুয়াকাটা সিটির জমির গ্রহীতা কারও কাছে আর টাকা চাওয়া যাবে না বলে শাঁসানো হয়েছিল। ৪২ দিন পর নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন ব্রিজ এলাকায় একই কায়দায় গাড়িতে করে তাকে নামিয়ে দিয়ে যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ধারীরা।

বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘অপহরণ করার আগে আমাকে তিন বার র‌্যাব কার্যালয় থেকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তাদের ডাকে আমি সাড়া দেইনি। মুক্তি পাওয়ার পর বুঝি র‌্যাব সদস্যরাই আমাকে অপহরণ করেছিল।’

এতদিন পর মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, আগের ব্যক্তিরা আবারও তাকে অপহরণ করানোর জন্য পাঁয়তারা করছেন বলে তিনি কিছু সিমটম পাচ্ছেন। তার ব্যবসায়িক শত্রুরা যাতে আবারও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও ইউনিটকে ব্যবহার করে তাকে তুলে নিতে না পারে, সেজন্য তিনি মানবাধিকার কমিশনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান। তবে অভিযোগের কপি দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে রাজি হননি।

র‌্যাবের সাবেক যে কর্মকর্তার কথা বলা হচ্ছে তিনি সে সময়ে দায়িত্বে ছিলেন না জানালে বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘নামটা ভুল হতে পারে, অন্য যিনি ছিলেন তিনি করতে পারেন। তদন্ত করলেই তো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।’ এরপরই ভীতসন্ত্রস্ত ব্যবসায়ী বেলাল এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘র‌্যাবের বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমার ব্যবসায়িক শত্রুরা যাতে আর কাউকে ব্যবহার করে আমার ক্ষতি করতে না পারে, আমি সেটাই চাই।’

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ তো পুরনো। অতীতেও আমরা দেখেছি দুই-একটি ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তদন্তের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে সেগুলোর কোনও জবাব আসেনি। এটারও কোনও জবাব আসবে কিনা বা যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। একইসঙ্গে একটি অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাই না করেই মানবাধিকার কমিশনের চিঠি দেওয়ার বিষয়টি হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। এতে অপরাধীরা সুযোগ পেয়ে যাবে। সেটি ইচ্ছে করেই করা হয়েছে কিনা তাও গুরুত্বপূর্ণ।’

নূর খান লিটন বলেন, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন অনেক কিছুই করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে, গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে যেরকম গুরুত্ব দেওয়া উচিত, সেরকম গরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।’
উৎসঃ   বাংলা ট্রিবিউন

বিএনপি আমলে টাটার বিনিয়োগ নাকচ করা নিয়ে জয়ের মিথ্যাচারের জবাব

বাংলাদেশ টাটার বিনিয়োগ নিয়ে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাম্প্রতিক একটি ভিডিও বার্তা সম্প্রতি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সজীব ওয়াজেদ জয় আবার প্রমান করেছেন যে শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের প্রতিটি সদস্যই মিথ্যাবাদী।

(১)আমি জ্বালানি উপদেষ্টা থাকাকালীন সময়ে ২০০৪ সালে টাটা গ্রুপের প্রধান রতন টাটা বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহ প্রকাশ করেন এবং একটি সার কারখানা, একটি ইস্পাত কারখানা ও সেগুলো পরিচালনার জন্য একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেন। তাদের প্রস্তাবে শর্ত রাখা হয়েছিল যে, এই তিনটি প্রকল্পের জন্য তাদেরকে ২০ বছর যাবৎ ১.১০ মার্কিন ডলার মূল্যে প্রতি ইউনিট (এক হাজার ঘন ফিট) গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। সেই সময় আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের মূল্য ছিল প্রতি ইউনিট ৫.৮৯ ডলার। টাটার প্রস্তাবে গ্যাসের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজার তো বটেই, দেশের অভ্যন্তরীন গৃহস্থালী কাজে ব্যববহৃত গ্যাসের মূল্যের চেয়েও অনেক কম ধরা হয়েছিল। সেই কারণে আমি তাদের ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি এবং গ্যাসের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজার দর অনুযায়ী নির্ধারণ করতে বলি।২০০৬ সালে তারা গ্যাসের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি করে সার কারখানার জন্য ৩.১০ ডলার এবং ইস্পাত কারখানা ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জন্য ২.৬০ ডলার প্রতি ইউনিট দামে আবারও ২০ বছরের জন্য গ্যাস সরবরাহের গ্যারান্টি ক্লজ সহ নতুন প্রস্তাব দেয়। উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যে ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল- ৬.৭৩ ডলার। বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রী করে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়ার মানসিকতা আমার এবং তৎকালীন সরকারের ছিল না। দিল্লির প্রভুদের কাছে বাংলাদেশের স্বার্থ বিলিয়ে দেয়ার ইতিহাস এবং ঐতিহ্য আওয়ামী লীগেরই রয়েছে। ফলে, আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সাথে টাটা গ্রুপের প্রস্তাবিত দামের এই বিপুল পার্থক্যের কারণ দেখিয়ে আমি তাদের গ্যাস ক্রয়ের প্রস্তাব ও বাতিল করে দেই। এই সময় তারা তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব স্থগিত করে। আমিও নিয়মিতভাবে সংবাদ সম্মেলন করে পুরো বিষয়ে জনগণকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে অবহিত রেখেছিলাম।এরপরও টাটা গ্রুপ কম দামে গ্যাস ক্রয়ের জন্য ২০০৮ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সামরিক বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে তদবির চালিয়ে যায়। কিন্তু, সেই সরকারও টাটার আবদার পুরণ করতে না পারায় ২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে টাটা ঘোষণা দেয় যে, তারা তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব ফিরিয়ে নিচ্ছে।টাটা গ্রুপের কম দামে গ্যাস চাওয়ার প্রস্তাব এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তা প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টি সেই সময়ে সকল দেশি এবং বিদেশি মিডিয়াতেই প্রচারিত হয়েছে।

(২)টাটা গ্রুপের বিনিয়োগ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সেই সময়ে বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিটিং মিছিল করেছে এমনকি তাদের তৎকালীন নেতা তোফায়েল আহমেদ সহ আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতা টাটার বিনিয়োগ প্রস্তাব বাতিলের জন্য দাবি করেছেন।টাটা গ্রুপের এই বিনিয়োগ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে আনু মুহাম্মদের নেতৃত্বাধীন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। তারা মিটিং মিছিল সভা সেমিনার করার পাশাপাশি ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন অন্তর্বতীকালীন সরকারের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টার কাছে আমার নামে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। সেখানে তারা উল্লেখ করেছে- “টাটা’র কয়লা এবং গ্যাস ও কয়লাজাত পণ্য রপ্তানিমুখী প্রকল্পের ১ম প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়নে নাকচ হয়। তিনি স্বীয় বিবেচনায় ২য় প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের উপেক্ষা করে তথাকথিত সচিব কমিটির মতামতের ভিত্তিতে গ্রহণ করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পেশ করেন। সরকার গণপ্রতিরোধের মুখে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিরত থাকে। তিনি টাটার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রাখেন।”আওয়ামী লীগ সমর্থিত আনু মুহাম্মদ গং এর উপরোক্ত দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল। জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে টাটার দ্বিতীয় প্রস্তাবও আমি ই নাকচ করেছিলাম এবং দর-কষাকষির কোন পর্যায়েই এতদসংক্রান্ত কোন প্রস্তাব সরকারের কাছে প্রাথমিক কিংবা চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয় নাই। এই কারণেই আমি ভারত সমর্থিত মঈন-মাসুদ সামরিক সরকারের প্রচন্ড বিরোধিতা করা সত্ত্বেও সেই সরকার আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তুলতে সক্ষম হয় নাই।এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে- তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’র নেতৃত্বাধীন সকল আন্দোলন এর সাথেই সেই সময়ের বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সরাসরি সংযুক্ত থাকতো এবং তারা যৌথভাবে আন্দোলন করতো।সুতরাং সেই সময় টাটা গ্রুপের বিনিয়োগের বিরোধিতা করা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে টাটা গ্রুপের বিনিয়োগ না হওয়ার বিষয়ে অশ্রু বিসর্জন রীতিমতো ভন্ডামি।

(৩)বাংলাদেশে রতন টাটা কে আমন্ত্রণ জানানো, টাটা গ্রুপের প্রস্তাব প্রদান, সেটা বিচার বিবেচনা করা, তাদের সাথে দর-কষাকষি করা এবং শেষ পর্যন্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পুরো বিষয়টি বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং জ্বালানি উপদেষ্টা হিসাবে আমার তত্ত্বাবধানে সরকারি আমলাদের মাধ্যমে করা হয়েছে। শুধুমাত্র রতন টাটার সম্মানে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া টাটা গ্রুপের সাথে যোগাযোগ বা আলাপ আলোচনার কোনো ক্ষেত্রেই তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিএনপি’র কোন মন্ত্রী, এমপি বা নেতৃবৃন্দের যোগাযোগ ছিল না এবং সেটা করার কোন অবকাশও ছিল না।বর্তমান প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তার মায়ের উপদেষ্টা হিসেবে বিশাল অঙ্কের বেতন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসে এসকল মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের পারিবারিক মিথ্যাচারের ধারাবাহিকতা কেবল রক্ষা করে চলেছেন। আমি তার মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাই এবং আশা প্রকাশ করতে চাই যে, ভবিষ্যতে এই ধরনের মিথ্যাচার থেকে তিনি বিরত থাকবেন। অবশ্য, একটি ফ্যাসিস্ট পরিবারের কাছ থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যায় না।

লেখক: মাহমুদুর রহমান, আমার দেশ সম্পাদক এবং প্রাক্তন জালানী উপদেষ্টা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান, বিনিয়োগ বোর্ড।

1 2 3 9