মেজর সাদেক প্রসঙ্গে কিছু তথ্য

মেজর সাদেকের গ্রেফতার প্রসঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের টীমের হাতে পৌঁছেছে। ১০ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসী মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলমের কল লিস্ট পর্যবেক্ষণ করলে সন্দেহের তীর তাঁর দিকেও আসে। উল্লেখ্য যে মেজর সাদেকের ইউনিট ৩৬ বেঙ্গল ১০ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের একটি অংশ।

মেজর সাদেক গ্রেফতারের ঠিক আগের দিন, অর্থাৎ ১৬ জুলাই ২০২৫ ১০ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসী সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে কল দিয়ে দীর্ঘ ৮২ মিনিট কথা বলেন। রাত ৯ টার দিকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ১৬১ জিয়া কলোনি (জেসীওর কোয়ার্টার) থেকে একটি কল আসে যেখানে তিনি দীর্ঘ ৮৯ মিনিট কথা বলেন। উল্লেখ্য যে রাত ৮ টা ৪৫ এ এই জিওসী একটি নম্বরে কল করেন এবং ওই কলে থাকা অবস্থায় জেসীওর কোয়ার্টার থেকে কল আসে যেটা তিনি রিসিভ করে কথা বলেন, তাই ধারনা করা হচ্ছে উনি ওই সময় কনফারেন্স কলে ছিলেন।

১০ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসীর আগামী ১৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার কথা যেটা এখনও পরিবর্তিত হয় নি যেখানে তারই ডিভিশনের মেজর সাদেককে নিয়ে তদন্ত ও বিচারকাজ চলছে। জিওসীর দাবীমতে তাঁর বড় মেয়ের যুক্তরাষ্ট্রে পি এইচ ডি প্রোগ্রামে ভর্তির উদ্দেশ্যে তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য সপ্তাহ দুয়েকের জন্য যাচ্ছেন। এই মেজর সাদেকের বিচার কাজ পথভ্রষ্ট করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি অংশ প্রচণ্ড তৎপর। তারা জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য কয়েকটি ইস্যু একের পর এক দাড় করাচ্ছেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। রাজনৈতিক হানাহানি, প্রাক্তন সেনা প্রধানের হটাত মৃত্যু, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে বেফাঁস মন্তব্য ও অপ্রাসঙ্গিক কাজ করানো – এ সবই একই সূত্রে গাঁথা বলে প্রতীয়মান।

পতিত সরকারের দৃবৃত্ত সচিবদের পূণর্বাসন চলছে!

বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে আবার সচিবালয়ে আবার আওয়ামী কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ১৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পতিত হাসিনা সরকারের তিন জন দুবৃত্ত সচিবকে গুরুত্বপূর্ণ সচিব পদে পদায়ন করলো অন্তবর্তী প্রশাসন। ছাত্র আন্দোলনের রক্তের দাগ শুকানোর পূর্বেই নতুন কৌশলে ছাত্র-জনতার রক্তের সাথে বেঈমানী করা হলো।

১) বিসিএস ১০ম ব্যাচের কর্মকর্তা মোকাব্বির হোসেন (৫৫৪৮) হাসিনার ক্ষমতা রক্ষার অন্যতম সিপাহশালার ছিলেন। বার বার তাকে ব্যবহার করেছে খুনি হাসিনা। তাকে দুঃখজনকভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে বদলিপূর্বক পদায়ন করা হয়। মোকাব্বির আওয়ামী সরকারের আমলে পদোন্নতি পাওয়া এবং নিয়োগপ্রাপ্ত সচিব। ’৮৫ ব্যাচের কুখ্যাত কর্মকর্তা মোঃ মুহিবুল ইসলামের বিশ্বস্ত সহযোগী ছিল মোকাব্বির। মুহিবুল বর্তমানে আমেরিকায় পালিয়ে আছেন। মুহিবুল যখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি তখন তিনি মোকাব্বিরকে জনপ্রশাসনে নিয়ে আসেন। এরপর মুহিবুল বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব হলে মোকব্বিরকে বাংলাদেশ বিমানের এমডি করেন এবং তার মাধ্যমেই বিমান ধ্বংসের প্রান্তে পৌঁছে যায়। এর পুরস্কার স্বরুপ মোকাব্বিরকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব পদে পদায়ন করা হয়। আওয়ামী কর্মকর্তা মুহিবুলের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে সকল তথ্য মুহিবুলের মাধ্যমে আওয়ামী কমান্ডের নিকট পৌঁছানোর ব্যপক আশংকা রয়েছে।


২. ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান (৫৭০৪), সদস্য (সচিব), পরিকল্পনা কমিশন। তাকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে বদলিপূর্বক পদায়ন করা হয়। তিনি আওয়ামী আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সচিব। তিনি গাজিপুরের মেয়র জাহাংগীরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বন্ধু। তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার বিষয়ে জাহাংগীরের বেশ ভূমিকা ছিল।তিনি বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকি উদযাপন কমিটির একটি ইউনিটের সভাপতি ছিলেন। তিনি এবং তার পুরো পরিবার সরাসরি আওযামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত।

৩. জনাব মোঃ আব্দুর রহমান খান (৭৭৬৮), ১৩তম বিসিএসের ট্যাক্স ক্যাডারের কর্মকর্তা। সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তাকে বদলি পূর্বক অভ্যন্তরীন সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে বদলিপূর্বক পদায়ন করা হয়। তিনি আওয়ামী আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সচিব। তাকে সচিব হিসেবে নিয়োগে সরাসরি ভূমিকায় ছিলেন আর্থিক সেক্টর ধ্বংসকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর আব্দুর রউফ। তিনি আব্দুর রউফের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। ব্যাংকিং সেক্টরের দূর্নীতিবাজদের সাথে ব্যাংকিং সেক্টর ধ্বংসে তার ভূমিকা রয়েছে।
চরম দূর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তা এই আব্দুর রহমানের মূল প্রমোটার আসলে এস আলম গ্রুপের সাইফুল আলম। একথা সচিবালয়ে প্রচারিত আছে যে, ব্যাংকিং সচিব পদে আব্দুর রহমানকে বসাতে লীগ সরকারের হাইকমান্ডকে এস আলম ৫০ কোটি টাকা উৎকোচ প্রদান করে। পরবতীতে সুদ ও ট্যাক্স মওকুফ এবং ব্যাংক লুটপাটের মাধ্যমে বিনিয়োগের টাকা তুলে নিবে। এখন সেই বিনিয়োগ তুলতেই তাকে আবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করার ধৃষ্ঠতা দেখায় এস আলম গ্রুপ। এস আলম গ্রুপের সঙ্গে তার স্বার্থের ডিল এবং ব্যাংকিং সেক্টরের লুটপাটে জড়িত থাকার দায়ে আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করা উচিত।

‘ফুটা কইরা দিমু’- কর্নেল ইমারত


কর্নেল ইমারত হোসেন। ৩৫ দীর্ঘ মেয়াদি  কোর্স। ইনি ২০০৯ সাল থেকে আজ অবধি সেনাবাহিনীতে চাকরি করেননি। RAB, BGBতেই তার চাকরি। মানুষ হত্যা করে, অনিয়ম -দুর্নীতি করেই তিনি মেজর থেকে কর্নেল হয়েছেন।  RAB-3তে চাকরি করার সময় আলোচিত বিএনপি নেতা কমিশনার চৌধুরী আলমের গুমের অপারেশনের একটি গ্রুপের কমান্ডার ছিল সে। এছাড়া সে বহু বিএনপি নেতাকে গুম এবং পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে । তার নামে একটা শ্লোগান ছিলো….ফুটা কইরা দিমু, RAB-3-এ থাকাকালীন ইমারত এবং তার অধিনায়ক কর্নেল রফিক মিলে মতিঝিলের বিভিন্ন ক্লাব থেকে মাসোহারা নিতেন। শাপলা চত্ত্বরের অপারেশন এর সময় সে বহু মাদ্রাসা ছাত্রদেরকে মেরেছে বলে নিজ মুখে তার সহকর্মীদের নিকট উঁচু গলায় নিজেকে জাহির করেছে/ স্বীকার করেছে।

এছাড়া ২০১৪ সালে বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদের নির্দেশে ইমারত জামাত বিএনপির উপর তান্ডব চালায়। চট্টগ্রামে বিজিবির অধিনায়ক থাকার সময় সে জামাত-শিবিরের অনেক নেতা কর্মীকে হত্যা করে। গাজীপুর বিজিবির অধিনায়ক থাকার সময় তিনি এবং তার আত্মীয় প্রতিমন্ত্রী জাহিদ রাসেল মিলে বহু জমি এবং ফ্যাক্টরী দখল করে। তার এই কাজে সহায়তা করে তৎকালীন বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল সাফিন। এটা সবার জানা যে – জেনারেল সাফিনকে প্রতি রাতে মদ, মেয়ে সাপ্লাই দিতো এই ইমারত হোসেন। 

বিজিবিতে থাকা অবস্থায় ইমরাত তার গৃহকর্মীর সাথে জবরদস্তি যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে ধরা পড়লেও তার কোন কিছু হয়নি! শুধু গৃহকর্মী নয় গাজীপুরে থাকা অবস্থায় বহু গার্মেন্টস কর্মীদের সাথেও অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে এই কর্নেল। কর্নেল হতে যে নুন্যতম স্টাফ কলেজ সেটাও তার নেই!? শুধু আছে আওয়ামী ব্যানার…. সে আহসানুল্লাহ মাস্টারের জামাই এবং প্রতিমন্ত্রী জাহিদ রাসেলের বোনের জামাই!!!!! বর্তমানে সে কুষ্টিয়া সেক্টর কমান্ডার বিজিবিতে কর্মরত। যা এখন চোরাচালানকারীদের স্বর্গরাজ্য। সে ধান্ধায় আছে স্পেশাল নোটশীটের মাধ্যমে ব্রিগেডিয়ার হবার জন্য। অবশ্য সেটা সম্ভব হয়, কারন বর্তমান সেনাপ্রধান টাকার বিনিময়ে এ রকম ২-৫ জনকে প্রতিটি প্রমোশন বোর্ডে সুপারিশ করে থাকে। এমন কুখ্যাত অপরাধীদের জন্য আজ আমাদের প্রিয় সেনাবাহিনী তার দেশ সেবার মহান ব্রত থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে ।

র‌্যাবের কসাই লে. কর্নেল আহসানুল কবির

লে. কর্নেল আহসানুল কবির। একজন দুর্নীতিবাজ, চরিত্রহীন এবং মানবতা লংঘনকারী আওয়ামী অফিসার। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সময়কালে যে কয়জন খুনী এবং স্বেচ্ছাচারী আওয়ামী অফিসার আছে, তারমধ্যে অন্যতম আহসানুল কবির। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের ইন্টারোগেশন সেলে নিরীহ বিডিআর সৈনিকদের থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করতে গিয়ে কয়েকজন সৈনিককে মেরে ফেলার মধ্য দিয়ে সে তার হাত রক্তাক্ত করে, এবং পরবর্তীতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে বদলী হয়ে হাত আরো পাকা করে। RAB-1-এ কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি ‘কসাই’ নামে পরিচিত ছিলেন। অনেক মানুষকে গুম খুন করলেও তার একটা বড় অপারেশন হলো গার্মেন্টস কর্মী নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যা। তিনি ২০১২ সালে আমিনুল ইসলামকে আশুলিয়া থেকে তুলে নিয়ে আসেন এবং হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকে জোর করে সিএমএইচে ভর্তি করার টিমে অন্যতম ভূমিকায় ছিলেন আহসানুল। ঐ সময়ই আর এক কুখ্যাত অপরাধী ছিল ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল আকবরের সান্নিধ্যে আসেন। পরবর্তীতে জেনারেল আকবরের হাত ধরে ডিজিএফআইতে আসেন ২০১৬ সালে। এখানে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি ঢাকার বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা নিতেন।

পরবর্তী ডিজি ডিজিএফআই মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদীনের স্ত্রীর সাথে আহসানুলের সখ্যতা গড়ে উঠে এবং তারা প্রচুর অবৈধ সম্পদের মালিক হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি ঢাকা এবং ঢাকার আশ পাশের এমপি ক্যান্ডিডেডদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেন এবং এর ভাগ তিনি মেজর জেনারেল আবেদীনকেও দেন। যোগ্যতা না থাকা স্বত্তেও তিনি ৪র্থ বার স্টাফ কোর্স করেন, যা সেনা আইন পরিপন্থী। দ্বিতীয় বিবাহ করলে সেনা আইনে পদোন্নতি না হওয়ার কথা থাকলেও আহসানুলের বেলায় সে নিয়ম চলে না! এই ডাকু শত অপরাধ, অনিয়ম করলেও কোন শাস্তি হয় না, কারণ তিনি লেফটেনেন্ট জেনারেল ওয়াকারের আত্মীয় এবং সাবেক সেনাপ্রধান (শেখ হাসিনার ফুফা জেনারেল মোস্তাফিজের পাড়াত ভাই)। এই সুবাদে আহসানুল নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় হিসেবে প্রচার করতে পছন্দ করেন। তার জীবন যাপন যে কোন শিল্পপতির জীবন যাপনকেও হার মানায়।

আহসানুলের সম্পদের পাহাড়ের সামান্য কিছু খতিয়ান- উত্তরাতে ২টি বাড়ি, বসুন্ধরাতে প্লট, বনানীতে ফ্লাট, নামে বেনামে নূর আলীর সাথে ব্যবসা, মানব পাচার, এয়ারপোর্টের চোরাকারবারি ব্যবসা কি নাই তার।  একজন সেনা কর্মকর্তা এত অপরাধ স্বত্ত্বে তার কোন শাস্তি হয় না, গোয়েন্দা রিপোর্ট কাজ করে না। এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, সেনাবাহিনীর চোখ গত ১৪ বছর যেন অন্ধ হয়ে আছে! তবে জানা গেছে যে, এহেন কাজে লিপ্ত থাকায় আহসানের কোর্সমেটরা তার থেকে দুরত্ব বজায় রাখে। সেনাবাহিনীর মত এমন একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান এদের মতো গুটিকয়েক অমানুষের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ থেকে মুক্তি না পেলে এ বাহিনীকে টিকিয়ে রাখা সত্যিই কঠিন ব্যাপার।

জেনারেল আকবর এবং জিয়াউল দেশ ছাড়ছেন!

ডিসেম্বরের পতনকে সামনে রেখে সরকারের সুবিধাভোগী এবং খুনিরা দেশ ছাড়ছে। ইতোমধ্যে সবচেয়ে জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত দুই সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল আকবর হোসেন এবং মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান রাষ্ট্রদূত হিসাবে পোস্টিং নিয়ে দেশ ছাড়ার জন্য ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন লেভেলে তদবীর চালাচ্ছেন।

লে. জেনারেল আকবর হোসেন :
সেনাবাহিনীর ১৩ লংয়ের আফিসার। শেখ হাসিনার অধীনে চার বছর ডিজি ডিজিএফআই থাকাকালে শত শত রাজনৈতিক অপহরন, গুম, হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িতে ছিলেন আকবর। এর আগে ডিজি ছিলেন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের। ২০১৪ সালের বিনাভোটের নির্বাচনের সময় জাতীয় পাটি প্রধান জেনারেল এরশাদকে নির্বাচনে ধরে রাখতে কর্নেল জিয়াউল আহসান তুলে নিয়ে যায় ডিজিএফআই প্রধান এই আকবরের কাছে। কথা শুনাতে গিয়ে এক পর্যায়ে এক থাপ্পড়ে ফেলে দেয় এরশাদকে। তারপরে যা হবার তাই হয়: এরশাদকে সিএমএইচে আটকে রেখে নির্বাচন নাটক শেষ করা হয়। এরপরে আকবরকে বসানো হয় সাভারের নবম ডিভিশনের জিওসি। এখানে থাকতে প্রধান বিচারপতির সাথে সরকারের দ্বন্দ্ব লেগে গেলে এই আকবর পদের অপব্যবহার করে প্রধান বিচারপতির রুমে ঢুকে তাকে অপমান করে, মাথায় প্তিল ঠেকিয়ে পদত্যাগ পত্রে সই করিয়ে নেয়। এরকম বহু অপকর্মের মূল কুশিলব ছিলেন এই জেনারেল আকবর। তার চেয়ার এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিনেমা ও শোবিজজগতের বহু নারীর ইজ্জত লুটে নেন। দিনের বেশির ভাগ সময় থাকেন তিনি মাতাল। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. আকবর হোসেন বর্তমানে বর্তমানে কমান্ড্যান্ট ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) পদে কর্মরত আছেন।

মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান:
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত। সময় খারাপ, ডিসেম্বরে দেশে থাকতে চাননা জিয়াউল। তাই দেশ ছাড়তে চান। হাসিনার নিয়োগ করা সাবেত সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্প্রতি প্রকাশ করেছিল, হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক সিদ্দিক হলো দেশের গুম খুনের অন্যতম হোতা। র্যা বের প্রাক্তন কর্মকর্তা মে. জে. জিয়াউল আহসান এবং মে. জে. জোবায়েরের মাধ্যমে গুম-খুন করিয়ে থাকেন, এবং এ সবকিছুই ’মাদার অব মাফিয়া’র জ্ঞাতসারে বা নির্দেশেই ঘটে থাকে। এনিয়ে এখন আর লুকোছাপার কিছু নাই, সবাই জানে।

যদিও জিয়াউল সহ র্যা বের অপরাপর খুনিদের মানবতাবিরোধী অপকর্ম সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ ওয়াকিবহাল আছে, তদুপরি তার অপরাধের যেসব ফিরিস্তি রয়েছে:
১) বিএ-৪০৬০ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান (জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৭১) ২৪তম লংকোর্সে ১৯৯১ সালে (তখন বিএনপি ক্ষমতায়) পদাতিক শাখায় সেনাবাহিনীর চাকুরিতে যোগ দেন। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর ২৭ আগস্ট লে. কর্নেল জিয়াউল আহসানকে র্যিপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র্যা বে পরিচালক হিসাবে নিয়োগ করে। প্রথমে গোয়েন্দা শাখার পরিচালক এবং পরে ২০১৩ সালে হেফাজত নিধনের পুরষ্কার স্বরূপ পদোন্নতি দিয়ে সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক করা হয়। এসব পদে থেকে বিনাভোটের সরকারের ইচ্ছায় বিরোধী দল নিধনে ব্যাপক তৎপরতা চালান। শাপলা চত্তর ম্যাসাকারে তার কাজে খুশী হয়ে সরকার তাকে তিনটি পদোন্নতি দিয়ে কর্নেল, ব্রিগেডিয়ার, মেজর জেনারেল করে, এবং বহু পদক পুরষ্কার দেয়। বর্তমান পোস্টিং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (NTMC) মহাপরিচালক, যাদের কাজ মুলত নাগরিকদের ও বিশিষ্টজনদের ফোনে আড়িপাতা এবং কথপোকথন রেকর্ড করা।
২) ব্রিগেডিয়ার জিয়াউলের বিরুদ্ধে হাজার খানেক বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ গুম ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে। নিহতরা মূলত সরকার বিরোধিতার কারনে এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
৩) ২০১০ সালের ২৫ জুন বিএনপির ঢাকা মহানগরের প্রভাবশালী নেতা সহসভাপতি ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের রমনা-শাহবাগ এলাকার সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলমকে তার বাসার সামনে থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় র্যা ব। এরপর আর তার খোঁজ মিলেনি। শোনা যায় তাকে হত্যা করে মেঘনায় ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে লাশ। ঐ ঘটনার সাথেও জড়িত ছিল লে.কর্নেল জিয়া।
৪) ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীকে কর্নেল জিয়ার নেতৃত্বে গুম করা হয়। অনেকে বলে থাকেন জিয়াউল নিজেই গুলি করে তাকে হত্যা করেছে ঘটনার রাতেই। যদিও হত্যার তথ্যটি প্রমানিত নয়। কারো কারো মতে তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
৫) ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল আশুলিয়া থেকে নিখোঁজ হওয়ার পরদিন ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায় গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের। ঐ হত্যার সাথে তিনি জড়িত এমন কথা প্রচার আছে। এ নিয়ে বিস্তর প্রতিবাদ আন্দোলন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রশ্নের মুখে পড়েছিল সরকার, কিন্তু কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেনি। পরে একটা নামকা ওয়াস্তে বিচার দেখানো হয়েছে।
৬) ২০১৫ সালের মার্চে বিরোধীদলীয় মুখপাত্র হিসাবে পরিচিত বিএনপির সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদকে তার বাসা হতে র্যা ব অপহরণ করে গুম করে। ঘটনাটি দেশে এবং বিদেশে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং দেশি ও বিদেশী গণমাধ্যমে এটি নিয়ে সংবাদ প্রচার হয়। ঐ গুম ও অপহরণের সাথে জিয়া জড়িত ছিল।
৭) র্যা বের এডিজি হিসাবে কর্নেল জিয়াউল হাসানের নির্দেশ ও শলাপরামর্শেই ২০১৪ সালের এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডার সংঘঠিত করে র্যা ব-১১ সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ (আওয়ামীলীগের তৎকালীন ত্রাণমন্ত্রী মায়ার মেয়ের জামাই)। খবরে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে ৬০ কোটি টাকার বিনিময়ে কাউন্সিলর নজরুলকে অপহরণ করে হত্যা করে র্যা ব কর্মীরা। সেনানিবাসের বাসভবন ‘আশালতা’র নিচে দাঁড়িয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদকে অপারেশনটি করার জন্য শলাপরামর্শ ও নির্দেশ প্রদান করেন কর্নেল জিয়া, এমন খবর তদন্তে উঠে আসে। এমনকি কাউন্সিলর নূর হোসেনকেও হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু ভারতে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পায়।
৮) ২০১৩ সালের ৫মে শাপলা চত্তরে সংঘটিত গণহত্যার অন্যতম অপারেশন ইনচার্জ ছিলেন র্যা বের পরিচালক লে. কর্নেল জিয়া, টেলিভিশন সাক্ষাতকারে তিনি তা স্বীকার করেছেন। এর কয়দিন পরেই তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় কর্নেল পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
৯) ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর লাকসামের বিএনপি সভাপতি সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু ও লাকসাম শহর বিএনপি সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজকে মোবাইল ট্র্যাকিং করে আটক করে র্যা ব-১১ সিও লে. কর্নেল তারেক সাইদের টিম দিয়ে হত্যা করা হয়। ঐ ঘটনার সাথেও জড়িত ছিল জিয়া।
১০) সৌদি কূটনীতিক খালাফ আলির খুন, সাংবাদিক জুটি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকান্ডের সাথে তার জড়িত থাকার কথা শোনা যায়।
১১) ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচি বানচাল করতে এবং ঐ সময়ে বিরোধী দল নিধনের মূল পরিচালক ছিল কর্নেল জিয়া। ঐ সময় কয়েক’শ বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকে অপহরণ করে গুম করা হয়। এদর মধ্যে রয়েছে তেজগাঁও থানা ছাত্রদলের যুগ্মসম্পাদক তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, এয়ারপোর্ট থানা ছাত্রদল সেক্রেটারি নিজামউদ্দিন আহমেদ মুন্না, ৩৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি সেক্রেটারী সাজেদুল ইসলাম সুমন ও কর্মী তানভীর, বংশাল ছাত্রদল সেক্রেটারি পারভেজ হোসেন, বংশাল থানা ছাত্রদল আহবায়ক মো. জহির, পল্লবী থানা ছাত্রদল জয়েন্ট সেক্রেটারি তরিকুল ইসলাম, সুত্রাপুর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মাসুদ রানা, তেজগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কাওসার, দারুস সালাম ছাত্রদল ভাইস প্রেসিডেন্ট মফিজুল ইসলাম রাশেদ, তেঁজগাও থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা এ এ ম আদনান চৌধুরি, সুত্রাপুর থানা ছাত্রদল সভাপতি মো. সেলিম রেজা পিন্টু ও জয়েন্ট সেক্রেটারি সম্রাট মোল্লা, নেতা খালেদ হাসান সোহেল, সবুজবাগ থানা ছাত্রদল সভাপতি মাহাবুব হাসান সুজন ও ৫ নং ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি কাজী ফরহাদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা মাযহারুল ইসলাম রাসেল, আল আমিন, আসাদুজ্জামান রানা, বংশাল থানা ছাত্রদল নেতা মো. চঞ্চল প্রমুখ। এখনও তাদের পরিবার ও স্বজনরা অপেক্ষা করে আছে!
১২) ২০১৪ সালের একদলীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ মধ্যরাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল এরশাদকে তুলে নিয়ে যায় র্যা বের কর্নেল জিয়া এবং দল, এবং ডিজিএফআই প্রধান মেজর জেনারেল আকবরের সামনে হাজির করে। তাকে ইলেকশনে অংশ নেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়। কিন্তু রাজী না হওয়ায় জেনারেল এরশাদকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে মাসাধিক কাল সিএমএইচে আটকে রেখে নির্বাচনী নাটক সম্পন্ন করা হয়।
র্যা বে থাকতে জিয়াউল আহসানের গুম ও খুনের কাহিনী নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি হয়, ফলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সরকার তারে র্যা ব থেকে সরিয়ে প্রথমে ডিজিএফআইতে বদলী করা হয়, পরে ২০১৬ সালে এনএসআইতে দেয়া হয়, এবং সর্বশেষে ২০১৭ সালে বসানো হয় টেলিফোন আড়িপাতা সংস্খা এনটিএমসির পরিচালক ও পরে মহাপরিচালক হিসাবে।

আমেরিকায় ঢোকার পথে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ব্যাপক জিজ্ঞাবাসাদের মুখে ফেরত পাঠাতে পারে বেনজিরকে, হতে পারে স্টৃপ সার্চের শিকার

গুরুতর মানবাধিকার হরণের অপরাধে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ ঘোষিত বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান বেনজির আহমদেকে জাতিসংঘের বার্ষিক পুলিশ প্রধান সম্মেলনে অংশ নিতে কঠিন শর্তে ৪৮ ঘন্টার জন্য আমেরিকার ভিসা মঞ্জুর করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নিউইয়র্কে প্রবেশের অনুমতি পাবেন কি না তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা থাকলেই সবাইকে সে দেশে ঢুকতে দেয়া হয় না, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও স্বার্থে ক্ষতিকারক যে কাউকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ আটকে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি।

নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আগামী ৩১ আগষ্ট ও ১লা সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় পুলিশ সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশেকে আমন্ত্রন জানানো হলে বাংলাদেশের হাসিনা সরকার এই সুবিধাটি নিয়ে আইজিপি বেনজির আহমদেকে জাতিসংঘে পাঠিয়ে তার ওপরে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া স্যাংশনকে খাট করার একটি কূটকৌশল গ্রহণ করে। প্রথম দফায় বেনজিরের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। এরপরে দ্বিতীয় চেষ্টায় অনেক তয় তদবীর এবং লবিয়িং চালায় বেনজির ও সেগুণবাগিচা। বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আপীল করে জাতিসংঘের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের করা চুক্তির অধীনে মেম্বার স্টেটের যেকোনো প্রতিনিধিকে (তার উপরে স্যাংশন থাকলেও) যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেয়ার নিশ্চয়তা দানের কথা, বিশেষ করে ঐ বিধানে রাশিয়া এবং ইরানের নিষিদ্ধ কূটনীতিকরাও জাতিসংঘে আসা যাওয়া করে। এই যুক্তি এবং তদবীরে ফলে কেবলমাত্র সম্মেলনস্থলে অংশগ্রহণের শর্তসাপেক্ষে দেশটির ভিসা মিলেছে বেনজীরের। অবস্থানের সময় ৪৮ ঘন্টা। তবে মেনে চলতে হবে কঠিন শর্ত, যার ব্যতিক্রম ঘটালে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে হলে আটক হতে পারেন গুম-খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত বেনজীর আহমেদ। উল্লেখ্য, এর আগে জাতিসংঘের অধিবেশনে এসে এরূপ শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ভেনিজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আটক করা হয়েছিল নিউইয়র্কে।

মানবাধিকার হরণে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত আইজিপি বেনজীরকে ডেলিগেশন তালিকায় না রাখার অনুরোধ উপেক্ষা করে জাতিসংঘের চিফ অব পুলিশ সামিটে (ইউএনকপ) সম্মেলনের জন্য মনোনীত করে ক্ষমতাসীন হাসিনা সরকার। তাই ভিসা দিলেও বাড়াবাড়ির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে দু’দিন অবেস্থানকালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দাদের নেটওয়ার্কে থাকবেন বেনজির। ভিসার শর্তানুসারে তিনি নিউইয়র্কে ৪৮ ঘন্টার বেশী অবস্থানের সুযোগ পাবেননা। এছাড়া নিউইয়র্কে সম্মেলনস্থল ও হোটেলের বাইরে দেশটির অন্য কোনো জায়গায় যাওয়ার, অন্য কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বা রিসেপশনে যোগ দেয়া, বা শপিং বা সাক্ষাতের কোনো সুযোগ নেই বাংলাদেশের আইজিপি বেনজিরের। যেতে পারবেন না যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এবং সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ৪৮ ঘন্টার বেধে দেয়া এই সময়সীমার শর্ত কিছুতেই লঙ্ঘন করতে পারবেননা বেনজির। এর ব্যতয় ঘটালে কিংবা নির্ধারিত এলাকার বাইরে গেলে অথবা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে হলে তাকে আটক করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। আর তখন জাতিসংঘের চুক্তির সুযোগ নিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ব্যক্তিকে কৌশলে নিউইয়র্কের পাঠানোর সুযোগটি বাংলাদেশের জন্য বুমেরাং হতে পারে।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রবেশকালে নিউ ইয়র্ক এয়ারপোর্টে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও স্টৃপ সার্চ (ন্যাংটো করে তল্লাশির) মুখে পরতে পারেন বেনজির। এর আগে ভারতীয় এক কূটনীতিক দেবযানী খোবড়াগাডেকে গ্রেফতার করে স্টৃপ সার্চ করা হয়েছিল। অন্যদিকে মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছ থেকে শত শত চিঠি মেইল গেছে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিডিউরিটির কাছে, যাতে করে কুখ্যাত এই মানবাধিকার হরণকারীকে যুক্তরাষ্ট্রে যেন ঢুকতে না দেয়া হয়। কেননা তিনি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার হরণ করেছেন, মানুষ খুন করেছেন, গুম করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এসেও তার বিরোধিতাকারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত আমেরিকান নাগরিকদের অনেকের ক্ষতিসাধন করতে পারেন। অন্যদিকে বহুগামী বেনজির বালোদেশের অনেক সিনেমা আর্টিস্ট, ছাত্রী, প্রতিকারপ্রার্থী, রাজনৈতিক নেত্রী, নারী পুলিশ কর্মকর্তা, এমনকি পতিতাদের শয্যাসঙ্গী করেছেন বেনজির। এই তালিকায় ইডেন কলেজের শারমিন, চিত্রনায়িকা কেয়া, বিদ্যা সিনহা মীম, পরীমনি, এক এডিশনাল এসপির স্ত্রী, লাস্যময়ী পুলিশ কর্মকর্তা সোনালী সেন সহ অনেকের নাম মিডিয়াতে ঘুরছে। ফলে সন্দেহ করা হয় তিনি এইডস বা এসটিডিতে ভুগতে পারেন, যা আমেরিকায় ছড়িয়ে দিতে পারেন, এমন তথ্য জানানো হয়েছে দেশটির প্রশাসনকে। এর পাশাপাশি তিনি তার পাচার করা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের সম্পদ উদ্ধারে আমেরিকাতে লোক ভাড়া করে অনেকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটাতেও পারেন। তাই সম্ভাব্য ভুক্তভোগিরা প্রটেকশন চেয়ে দেশটির বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার কাছে আবদন করেছেন। ফলে বেনজিরের আমেরিকা অবস্থানকালে তার চলাফেরা, যোগাযোগ, এমনকি টেলিকথপোকথন, মেইল চালাচালির উপর গোয়েন্দা নজরদারীর আবেদন জানানো হয়েছে। গ্লোবাল ম্যাগনেটস্কি আইনে স্যাংশনে থাকায় বেনজির কার কার সাথে যোগাযোগ করে লেনদেন করে তাদের উপরেও ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নজরদারী করা হতে পারে। ফলে যারাই তার কানেকশনে যাবেন, আটকে যেতে পারে তাদের সহায় সম্পদ।

বেনজিরকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মহা ক্যাচালে হাসিনা

গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের দায়ে মার্কিন স্যাংশনপ্রাপ্ত আইজিপি বেনজিরকে নিয়ে মহা ব্যস্ত হয়ে উঠেছে হাসিনা ও ভারত। তারা মনে করছে, বেনজিরকে যেকোনো ভাবে জাতিসংঘে পাঠাতে পারলে সেটা তাদের একটা বিজয় হবে, এবং ভেঙে পড়া মনোবল জাগাতে পারবে!

এই লক্ষে তারা জাতিসংঘের পুলিশ সম্মেলনে বেনজিরকে পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষে মার্কিন রাষ্টদূতের সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের বৈঠকের পরিণতিও ব্যর্থ হয়েছে। আইজিপি বেনজিরকে ভিসা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।

এ অবস্থায় শেখ হাসিনা সরকার নতুন চালাকির আশ্রয় নিয়েছে। আর তা হলো- সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তার নিজের সফরে আইন ভঙ্গ করে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা দলের অগ্রবর্তী দলের প্রধান হিসাবে বেনজিরকে নমিনেশন দিয়ে তার ভিসা চেয়ে পূণরায় চিঠি পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে এবং স্টেইট ডিপার্টমেন্টে। অথচ দেশের আইন অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব এসএসএফের। তাতে পুলিশ প্রধানকে নেয়ার কোনো সুযোগ নাই। অথচ বিনাভোটের প্রধানমন্ত্রী গো ধরেছেন, বেনজিরকে ভিসা না দিলে তিনি নিজেও জাতিসংঘে যাবেন না। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনকে চ্যালেঞ্জ করতে চাইছে। আর এই শিশসুলভ আবদারে ভারত কূটনৈতিক লবিয়িংয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট, মানবাধিকার বিষয়ক সিনেট কমিটি সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলি বসে নেই, তারা যা করার করছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরাও জয়েন্ট ক্যাম্পেন নিয়ে আগাচ্ছে।

ফের ব্যাংকক মিশন!

আগামী ২৯ আগস্ট থাইল্যান্ডের ব্যাংককের সুকুম্বি এলাকায় আবার সমবেত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্ষমতা প্রত্যাশী ছোট ছোট দলের কিছু রাজনীতিকরা! অবশ্য বিএনপির কিছু কম ঈমানের নেতারাও আছেন এই প্রকৃয়ায়। কয়েক নেতা ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছেন সেখানে!

মার্কিন প্রবাসী মাসুদ করিম ওরফে এনায়েত করিম নামে এক টাউটের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শতাধিক নেতারা ওখানে আমন্ত্রন পেয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, ওখানে নাকি আগামী জাতীয় নির্বাচনের সিট ভাগাভাগি হবে, এবং যারা আগ্রহী তারা যেন প্রত্যেকে ৩ কোটি টাকার জোগাড় করেন, আপাতত ১ কোটি টাকা জমা দিতে হবে!

মুলত, স্বাভাবিক নির্বাচন হলে যারা বড় কোনো দলের নমিনেশন পাবেন না বা নিশ্চিতএমপি হতে পারবেন না, তারাই চাচ্ছে এই মারেফতি ব্যবস্খায় ক্ষমতায় যেতে! ‍দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো রেজা কিবরিয়ার মত লোক (যিনি হাসিনাকে নামিয়ে গদি চান) তিনিও এই তরিকায় বিশ্বাস করে ওখানে যাচ্ছেন। মান্না ভাইও নাকি আছে এতে! গত ২/৩ বছর ধরে রাজধানীতে ৩/৪ দফা রাজপথ দখল করে ক্ষমতা বদলানোর ব্যর্থ চেষ্টার পরে এবারে মাসুদ করিমকে তারা আবারও বিশ্বাস করছেন, তার কারণ নাকি এবারে ডিজিএফআই সরাসরি যুক্ত আছে ক্ষমতা বদলের প্রক্রিয়ার সাথে! ডিজিএফআই তাদেরকে ক্ষমতায় বসাবে- বুঝুন কাণ্ড!

দেশের মানুষ ইতোমধ্যে জেনে গেছে, মাসুদ করিম নামের ঐ প্রবাসী আমেরিকান বাংলাদেশী এর আগেও ব্যাংকক কাঠমান্ডুতে এরকম সম্মেলন আয়োজন করেছিল। তিনি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে নটঘট করলেও মাসুদ আসলে বাংলাদেশের সরকারী গোয়েন্দা সংস্খা ডিজিএফআইর পেইড এজেন্ট। মেজর জেনারেল খালেদ মামুন শেখ হাসিনা সরকারের ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক থাকতে মাসুদ করিমকে রিক্রুট করা হয়। এরপর থেকে মাসুদ করিম সিএইএর পরিচয় দিয়ে বিএনপির ওপরে কাজ শুরু করেন: বিভিন্ন নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের ওপরে প্রভাব বিস্তার করে তাদেরকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হন যে, সিআইএকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে দখলদার হাসিনা সরকারের পতন ঘটাকে সক্ষম হবেন। সিঁড়ি বেয়ে অনেক ওপরে পৌছে যায় মাসুদ, তবে সঠিক হস্তক্ষেপের ফলে সে আটকা পড়ে। সরকার নামানোর কথা বলে মাসুদ প্রায়শই বাংলাদেশী কিছু পলিটিশিয়ানদের নিয়ে দেশে বিদেশে মিটিং করেন। অনেককে টাকা পয়সা ও বিমানের টিকেটও দেন। কিন্তু এর পেছনে যে তিনি তার কয়েক গুণ টাকা সংগ্রহ করেন সে কথাটি থেকে যায় আড়ালে। আমাদের জানা শোনা অনেকের কাছে টাকা চেয়ে ইমেইলও করেছে মাসুদ। ফ্রডবাজি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে আমেরিকায় মামলা হয়েছে তার নামে, তাই সে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। সে এত চালাক যে, তার ছবি কেউ তুলতে পারে না।

মাসুদ করিম কোনো সিআইএর দায়িত্বশীল কেউ নয়, হয়ত কয়টা সাদা চামড়ার সাথে পরিচয় থাকতে পারে। এর উপর ভর করে উন্নত প্রজাতির টাউটারি চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশে! মাঝখানে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এদেশের রাজনীতি ও কিছু হতাশ রাজনীতিক।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনারের বাংলাদেশ সফর ঘিরে মানবাধিকার হরণকারী নৈশ সরকারের ঘৃন্য নাটক

মানবাধিকার পীড়িত বাংলাদেশে একটি জঘন্যতম ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে এ সপ্তাহে। আর তা হলো, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের আগামীকাল থেকে বাংলাদেশ সফরকালে শেখ হাসিনা সরকার ১০ ব্যক্তিকে সাজিয়ে গুছিয়ে হাজির করবে যারা গুম/আটক থেকে ফিরেছেন, তাদেরকে দিয়ে বলানো হবে, “বিএনপি জামায়াতের নেতাদের প্ররোচনায় সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য তারা নিজেরাই লুকিয়ে ছিলেন”!

এই কাজের জন্য সরকার একটি ডকুমেন্টারি নির্মান করেছে, যা ঐ টিমকে দেয়া হবে। আর এই ভিডিও তৈরি প্রযোজনা করেছেন পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মিডিয়া এন্ড পাবলিসিটি মো. কামরুজ্জামান। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সরকারি তত্ত্বাবধানে গুম খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে ১৪ই আগস্ট থেকে ১৮ই আগস্ট বাংলাদেশ সফরে আসছেন।

সূত্রমতে, সরকারী নাটকে অভিনয় করার জন্য গুম ফেরত ১০ জনকে ভয়ভীতি ও নির্যাতনের হুমকি দিয়ে নির্ধারিত দিনে হাজির করা হবে মিশেল বেচলেটের সামনে (তালিকা সংযুক্ত)। তারা প্রত্যেকেই শেখানো জবানবন্দি দিয়ে বলবে স্বেচ্ছায় লুকিয়ে থাকার জন্য তারা রাষ্ট্রের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। নাটকটি আয়োজন করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নৈশভোট সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও সাংসদ কাজী নাবিল ও স্যাংশন খাওয়া আইজিপি বেনজিরকে। তারাই এআইজি কাজরুজ্জামানকে দিয়ে এই নাটক বানিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, এই অপকর্মে সাংবাদিক ম্যানেজ করা, সাক্ষাৎ দেয়া হবে এমন ব্যক্তিদের আনা এবং তাদের মিথ্যা, বানোয়াট এবং শেখানো সাক্ষাৎকার নেয়া, তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, বিশেষ ড্রেস সরবারহ করা, অডিও এবং ভিডিও তৈরি করাসহ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের সহযোগিতায় যাবতীয় কাজের সমন্বয় করছেন শাহরিয়ার আলম ও কাজী নাবিল। নাটকটি প্রচারের দায়িত্বে আছে কাজী শাহেদ আহমদ পরিবারের দীপ্ত টিভি। আর এই দীপ্ত টিভির এমডি কাজী জাহেদুল হাসাকে বিশেষ ব্যবস্থায় আইসিটি মামলায় জামিন দেয়া হয়েছে গত মাসেই। ২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা সানোয়ারা পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেডের মামলায় প্রথমে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশের পর রিভিউ পিটিশন করে জামিন দেয়া হয়েছে কাজী জাহেদুল হাসানেকে। রিভিউ পিটিশন করে জামিন- যেখানে দেশের সম্মানিত সিনিয়র নাগরিকরা্ও জামিন পান না।

এদিকে মানবাধিকার কমিশনের এই সফরে বাংলাদেশের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং গুমসহ গুরুতর সকল নির্যাতন বন্ধে প্রকাশ্যে আহ্বান জানানো উচিৎ মিশেল ব্যাচেলেটের মর্মে বুধবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নিজস্ব ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও এ সফরে মানবাধিকার কমিশনার যাতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারকে চাপ দেন সেই আহ্বান জানিয়েছে ৯টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। এক বিবৃতিতে সংস্থাগুলো বলেছে, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, এই সফরে যদি তিনি এই নির্যাতনের নিন্দা না জানান কিংবা সংশোধনের আহ্বান না জানান, তাহলে শাসক দল আওয়ামী লীগ তার নীরবতাকে নিজেদের নিপীড়ন এবং এক্টিভিস্টদের দমনকে বৈধতা দিতে ব্যবহার করতে পারে।

The Bangladesh government has made a list of ten people who have returned from enforced disappearance, and Dipta TV will interview them. They will say in that interview that they disappeared voluntarily and speak on behalf of the government,.Their faces may not be shown on TV, but their voices will be heard. That interview will be listened to and submitted to the UN High Commissioner for Human Rights, Michele Bachlete.

গুম ও মানবাধিকার হরণকারী সরকারের এহেন ঘৃন্য নাটক সম্পর্কে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এম্বেসী এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বকে অবহিত করতে বিষয়টি বহুল প্রচার প্রয়োজন।

#USTreasury #UnitedNationsHumanRights #HumanRightsWatch

আরব আমিরাতে মানি লন্ডারিং মামলার কয়েক আসামী গ্রেফতার

মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি
বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিচারাধীন বহুল আলোচিত মানি লন্ডারিং মামলার একাধিক আসামীকে গতকাল (বহস্পতিবার) গ্রেফতার করেছে শারজাহ পুলিশ। মানি লন্ডারিং ও রাষ্ট্রদ্রোহি মামলার রায়ের আসামীদের কেউ ছিলেন জামিনে, আবার কেউ আছেন পলাতক। ২৯ জুন মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

শারজাহ পুলিশ আজ যাদের গ্রেফতার করেছে তারা হলেন শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনির স্বামী তৌফিক নওয়াজের ম্যানেজার ইকবাল, প্রধানমন্ত্রী কন্যা পুতুলের সাবেক স্বামী মিতুর সহযোগী ফয়সাল, মিতুর কেয়ারটেকার শফিক, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ব্যক্তিগত সহকারি আসমা আক্তার রুমি।

মামলায় যারা অভিযুক্ত:
১) শেখ হাসিনা,
২) শেখ রেহানা,
৩) সায়মা ওয়াজেদ পুতুল,
৪) খন্দকার মাসরুর হোসেন মিতু,
৫) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান,
৬) মো. আবদুল মাবুদ সাবেক পরিচালক,
৭) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রেফায়েত উল্লাহ,
৮) লে. কর্নেল একেএম বদরুদ্দোজা,
৯) মো. সফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব
১০) মেজর মো. আতাউল করিম,
১১) মেজর মো. জাহিদুল ইসলাম,
১২) মেজর শরিফুল ইসলাম
১৩) মেজর সিরাজ উদ্দিন,
১৪) কর্নেল আবদুল লতিফ তালুকদার,
১৫) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মির্জা এনামুল হক মরিশাস,
১৬) লে. রাশেদ উল করিম,
১৭) মেজর এএসএম আশরাফুল আলম,
১৮) তৌফিক নেওয়াজ।
তাদের সবাইকে পলাতক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা অর্থ পাচার ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আসামি। এদের বেশির ভাগই চোরাচালানকৃত টাকার ক্যারিয়ার ছিলেন।

শারজাহ আদালত এনসিইএমএকে নির্দেশ দিয়েছে মামলার সাথে যুক্ত অন্যরা যেনো দেশত্যাগ করতে না পারে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৬ই জানুয়ারী কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচারের প্রমানাদিসহ আরব আমিরাতের শারজাহ শহরে গ্রেফতার হন শেখ হাসিনার মেয়ের জামাই খন্দকার মাসরুর হোসেন মিতু। মামলা হওয়া ঠেকাতে শেখ হাসিনা খুব দ্রুতই ছুটে যান আবুধাবী (১১ জানুয়ারী ২০২০)। কিন্তু তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এমনকি আরব আমিরাতের জাতির মাতা শেখা ফাতিমাকে ‘মা’ ডেকে তাঁর মাধ্যমে তদবীর চালিয়েও কোনো সুবিধা করতে পারেননি। এর কারণ হলো, শারজাহতে শরীয়া আইন চলে, এবং শাসক শেখ সুলতান বিন মুহাম্মদ আল কাসিমি নিয়মনীতিতে খুব কড়া, দ্বিতীয়ত শারজাহ শাসকের সাথে কেন্দ্রের শাসকের সম্পর্ক ভালো না। ফলে শেখ হাসিনা দুবাই বা আবুধাবীর শাসকের মাধ্যমে তদবীর চালিয়ে কোনো সুবিধা করতে পারেননি। তাছাড়া ঢাকাস্থ আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আলমেহিরিকে তদবীর করতে আবুধাবী পাঠান, কিন্তু কেনো লাভ তো হয়ইনি, উল্টো রাষ্ট্রদূত চাকরি হারিয়েছে। অবশেষে অর্থ পাচার সহ বেশ কয়েকটি মামলা হয় মিতুর নামে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে মিতু জানান, পাচারকৃত ঐ অর্থের মালিক তিনি নন, এর প্রকৃত মালিক তার শ্বাশুড়ি শেখ হাসিনা এবং তার স্ত্রী পুতুল। ফলে তাদেরকে সহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। শ্বাশুড়ির নাম বলে দেয়ায় হাসিনা চাপে পড়ে যায়, এবং অবশেষে তার কন্যার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান। আসামী তালিকায় ঢোকার পর থেকে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও বিভিন্ন মন্ত্রীদের পাঠিয়ে অনেক চেষ্টা তদবীর চালান, এবং ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ভিভিআইপি বিবেচনায় একটি বিশেষ ব্যবস্থায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি মামলায় হাজিরা দিতেন। ৫/৬ দফা এভাবে হাজিরা দিলেও শেষের দিতে তিনি গর হাজির থাকেন, এমনকি হাজিরা দিতে অস্বীকৃতি জানান! ফলে আদালত বিরক্ত হয়ে তাকে সতর্ক করে। সতর্ক করার পরও একই ঘটনা ঘটান, যা আদালত অবমাননার সামিল। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে কোর্ট চুড়ান্তভাবে নির্দেশ দেয়, ৯ই মার্চ ২০২২ তাকে সশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, নইলে একতরফা ভাবে বিচারকার্য শেষ করা হবে। সেই হাজিরা দিতেই তিনি চলতিবছর ৭ই মার্চ বিকালে যান আরব আমিরাতে।

1 2 3 8