বাংলাদেশকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সময়ে সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে

- মেজর মনজুর কাদের (অব.)
বিগত স্নায়ু যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চরম শত্রু সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন দেখলো পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শক্তি পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করছে এবং পূর্ব পাকিস্তানের পাতি বুর্জোয়া দলগুলো স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করছে এবং পিকিংপন্থী পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি ১৯৬৯ সালে (অন্যান্য বাম কিছু সংগঠনও সোচ্চার হয়) সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে কার্যক্রম শুরু করছে তখন ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল এবং জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়াকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানকে দিখন্ডিত করার জন্য ভারতের মাধ্যমে নীল নকশা তৈরি হয়।
অপরদিকে, সোভিয়েতকে মোকাবেলা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কুটনীতিক, হেনরি কিসিঞ্জার কুটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সঙ্গে পুঁজিবাদের নেতা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিরোধীতা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার নতুন মিত্র চীন, উভয়েই পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশের (১৯৭১) মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে।
জাতিসংঘে সোভিয়েত ইউনিয়নের শক্ত ভূমিকা নেয়ার কারণে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এ ভারতের সেনাবাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করার সুযোগ পায় ফলে সহজেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয় ।
এটি রুশ-ভারতের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের বিপক্ষে থাকার কারণে।
হাল ছাড়েনি যুক্তরাষ্ট্র
এরপর মার্কিনীদের কুটনীতির গতি সোভিয়েত ইউনিয়নের আশা আকাঙ্ক্ষাকে পদে পদে বাধা দিতে থাকে।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সোভিয়েত সমর্থিত ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানে বিরত থাকে। পশ্চিমা মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রকে এই অবস্থান গ্রহণের জন্য সমর্থন করে।
১৯৭২ সালের মার্চে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়। এর পরের মাসে, ৪ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় এবং সেইসাথে সহায়তার জন্য ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাহায্য প্রদান করে। সেসময় এই সাহায্য অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় ছিল সর্বোচ্চ পরিমাণ।
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের পছন্দ ছিল রুশ-ভারত ব্লক
______
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপরই বাংলাদেশে পুতুল সরকার বসিয়ে দিয়ে সুতার গুটি রুশ-ভারত নিজেদের হাতে রেখে দেয়। রক্ষী বাহিনী তৈরি করে হাজার হাজার প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের হত্যা করে এবং সেনাবাহিনী ধংস করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করার সকল অপকৌশল অবলম্বন করে ভারতের পুতুল সরকার।
১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষ
______________
স্বাধীনতার পর যে পরিমাণ সাহায্য বিদেশ থেকে পাওয়া গিয়েছিল তার বেশীরভাগই আত্নাসাত করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা, ফলে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে সমগ্র বাংলাদেশ। সকল প্রকার খাদ্য দ্রব্যের মওজুদের ব্যবসা সরকারী দল নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে দেখা দেয় ১৯৭৪ এর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ।
আর্থিক অব্যবস্থাপনা এবং ব্যাপক দুর্নীতির কারণে ১৯৭৪ সালের এই দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায়।
কারচুপির নির্বাচন : স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার
___________
১৯৭৩ সালের কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যায় সহযোগিতা করে ভারত। নিজ দেশে গণতন্ত্রের চর্চা করে পশ্চিমা বিশ্বের সুনজরে থাকার কৌশল অবলম্বন করে ভারত।
অপরদিকে, সকল প্রতিবেশী দেশে যাতে ভঙ্গুর গণতন্ত্র নিয়ে পশ্চিমার কাছে সমালোচনার মুখে পড়ে তার জন্য সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করতে থাকে আধিপত্য ও সম্প্রসারণবাদী দেশেটি।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যা
____________________
এতেও সন্তুষ্ট হয়নি ভারত। উলঙ্গভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যার খেলায় মেতে উঠে তারা।
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে একদলীয় শাসনের ( বাকশাল ) বিল পাস করা হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠান না করেই শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত দেখানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সংবাদপত্র ও টেলিভিশন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ তৈরি করার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে।
সিকিম বানানোর অপচেষ্টা
___________
এক দলীয় ব্যবস্থায় সিকিমের মতো পার্লামেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অঙ্গরাজ্য বানানোর সকল চক্রান্ত শেষপ্রান্তে যখন পৌঁছে যায় সেমূহুর্তে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন তরুন মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট মুজিবশাহীর পতন ঘটিয়ে দেন। ভারতের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
তবে এরপর বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক নাটকীয়ভাবে সুদৃঢ় হতে থাকে।
উন্নয়নের প্রধান অংশীদার হয়ে উঠে যুক্তরাষ্ট্র
___________
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অংশীদার হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭২ সাল থেকে ইউএসএইড প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য দিয়েছে বাংলাদেশকে।
অবকাঠামোগত উন্নয়নেও সহায়তা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যেমন নাসা স্পেস রিসার্চ অ্যান্ড রিমোট সেন্সিং অর্গানাইজেশন (স্পারসো) এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে ট্রিগা রিসার্চ সেন্টার খুলতে সহায়তা করেছে।
আমেরিকা সঙ্গে আছে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদান করতে থাকে।
জেনারেল জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব
_________
১৯৭১ সালের ২৬/২৭ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে কর্মরত মেজর পদে থাকা একজন দেশপ্রেমিক অফিসার জিয়াউর রহমান জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা (পরে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে) দিয়ে বিপদগ্রস্ত জনগণের সামনে চলে আসেন।
পরবর্তীতে দ্বিতীয়বারের মতো ( যা একজন ভাগ্যবান ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব) জাতির আরেক ক্রান্তিকালে, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাসীন হন এবং পূর্ববর্তী সরকারের সমাজতান্ত্রিক নীতি বাদ দিয়ে মুক্ত বাজার নীতি গ্রহণ করেন।
নতুন দিগন্ত উন্মোচিত
__________________
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গতিশীল শাসনামলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজারের দিগন্ত উন্মোচিত হয়, গার্মেন্টসসহ অসংখ্য শিল্প কারখানা স্থাপিত হয় এবং রফতানি বানিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে যার মাধ্যমে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এবং রফতানি বানিজ্যের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন শুরু হয়।
জেনারেল এরশাদের শাসনামল
__________________
অক্টোবর ২১, ১৯৮৩-এ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ( সিএমএলএ), লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোন্যাল্ড রিগ্যান হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানান। প্রেসিডেন্ট রিগ্যান শীতল যুদ্ধকালীন ( Cold War) ঢাকার অবস্থানের প্রশংসা করে বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে এর গঠনমূলক অবস্থানের জন্য করতালিতে সংবর্ধনা জানাতে চায়।”
এরপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে এরশাদ নভেম্বর ১৮, ১৯৮৮-এ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের আমন্ত্রণে ৫ দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যান।
প্রেসিডেন্ট এরশাদের শাসনামলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজার, গার্মেন্টস শিল্প, চামড়া শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা গড়ে উঠে এবং রফতানি বানিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে যার মাধ্যমে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এবং রফতানি বানিজ্যের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতে থাকে।
উপজেলা পদ্ধতি চালু করে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচিত নির্বাহী ব্যবস্থা প্রবর্তন করে বেসামরিক প্রশাসনে আমূল পরিবর্তন আনেন।
খালেদা জিয়ার যুক্তরাষ্ট্র সফর
____________
মার্চ ১৭, ১৯৯২-এ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন।
ব্যবসা বাণিজ্য শিল্পায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে এবং নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে থাকে।
উল্টোদিকে যাত্রা
______________
১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সমর্থনে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা ফ্যসিষ্টে রূপান্তরিত হওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু এরশাদ বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ৪-দলীয় জোটে অংশগ্রহণ করায় বিপদে পড়ে যায় হাসিনা।
তবে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরপরই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ শাসন শুরু করেন এবং নিজেই একজন ফ্যাসিস্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ভারত, রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করে চলতে থাকে।
পিতার পদাঙ্ক অনুসরণে বিপর্যয়
_______________
শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক ভুলের কারণে (একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম সহ অন্যান্য) আওয়ামী লীগ বিলুপ্তির মাধ্যমে বাকশাল কায়েম হয়েছিল এবং সেই ভুলের মাশুল হিসেবে হাজার নেতাকর্মীকে পরবর্তীতে নিগৃহীত হতে হয়েছে।
শেখ হাসিনা পিতার ভূল গুলোকে চিহ্নিত না করে তার সব কর্মকাণ্ডকে সঠিক হিসেবে গ্রহণের মাধ্যমে ‘ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ( personal cult) বৃদ্ধির চেষ্টা করতে গিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে হাজার হাজার মুর্তি নির্মাণ করে । ধীরে ধীরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা যে একারণে ক্ষিপ্ত হতে থাকে তা বুঝতে হাসিনা ব্যর্থ হন।
যুক্তরাষ্ট্রকে বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন
____________________
২০০৮ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র যতবার গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে ততবারই দেশটিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েছেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা।
ফ্যাসিস্টের পতন এবং রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে যদি বিন্দুমাত্র জ্ঞান তার থাকত তাহলে গত সাড়ে পনেরো বছর এভাবে উদ্ভ্রান্তের মতো দেশ তিনি পরিচালনা করতেন না।
পতন তার অনিবার্য ছিল। ছাত্র জনতা সৃষ্ট জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমেই তার সৃষ্ট ফ্যাসিবাদের তাই পতন হয়েছে।
আবার বাংলাদেশ পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র
_________
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, ইউএস প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক স্বীকৃতি ইউএস কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল অর্জনকারী
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট কর্তৃক বিধ্বস্ত হওয়া বাংলাদেশ এখন নতুন করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাইছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় বাংলাদেশ পুনর্গঠন এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য এগিয়ে এসেছে যেমনটি এসেছিল বিগত স্নায়ু যুদ্ধের সময়।
নতুন স্নায়ু যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের যেমন বাংলাদেশকে প্রয়োজন তেমনি বাংলাদেশেকেও প্রয়োজন মার্কিনীদের।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ
____________________
ঠিক এই সময়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গতকাল (সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪) সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদানকারী মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থ বিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান। তার সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ‘বর্তমান সময়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত।’ তিনি ছাত্রদের নেতৃত্বে সংঘটিত বিপ্লব সম্পর্কে বলেন, এই বিপ্লব বাংলাদেশে নতুন আশাজাগানিয়া যুগের সূচনা করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্নীতির মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির এক গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত ছিলাম।’
দুর্নীতির একটি নমুনা
_________________
প্রথম আলো পত্রিকা সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪-এ লিখেছে:
‘আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্পের একটি বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট যা আর্থিক ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়েছে।
এতে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি। স্যাটেলাইটের আয়ুষ্কাল ১৫ বছর—অর্থাৎ ২০৩৩ সালের পর এর অস্তিত্বই থাকবে না তাই প্রকল্পের খরচ পুনরুদ্ধারের সময়ও শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রত্যাশা
____________________
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন।
মার্কিন প্রতিনিধিদল ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারলে ওয়াশিংটন আনন্দিত হবে বলে উল্লেখ করেন মার্কিন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।
বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ড. ইউনূস সরকারের বাস্তবায়নাধীন সংস্কার কর্মসূচিতে তাঁরা প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী।
যুক্তরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা
_________________
যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের প্রয়োজনে এই স্নায়ু যুদ্ধে জিতে পুনরায় বিশ্বাব্যাপী একক শক্তি হওয়ার চেষ্টা করছে যেমনটি করেছিল পথম স্নায়ু যুদ্ধের সময়।
১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ু যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে একক বিশ্ব মোড়লে রূপান্তরিত হয়।
সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘণিষ্ঠ দোসর ভারত রাতারাতি পুরানো বন্ধুকে ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিজয় গান গাইতে গাইতে আঞ্চলিক শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ে। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোকে এর কাফফারা দিতে হয়েছে ১৯৯১ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত।
তাই বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কে ভারত যেন আবার মেইন ফ্যাক্টর না হয়ে ওঠে তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে বাংলাদেশের জনগণকে।
সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদল বলেছেন সংস্কারে সরাসরি থাকবে যুক্তরাষ্ট্র ।
যুক্তরাষ্ট্র তার প্রয়োজনে বাংলাদেশকে এখন সমর্থন দেবে। তাই দেশের স্বার্থে জাতীয় ঐক্যমত গঠন করে নিজেদের স্বার্থে কাজ করা প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর । এই সুযোগ বেশীদিন থাকে না। একারণেই ডঃ. ইউনূস বারবার বলছেন যে এই সুযোগ হাতছাড়া করলে বাংলাদেশ বিপদে পড়বে।
এই সুযোগ যাতে বাংলাদেশ ব্যবহার না করতে পারে তার জন্য আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তি উঠে পড়ে লেগেছে।
এদের ষড়যন্ত্র ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে নতুন প্রজন্মের মেধাবীদের সকল দেশপ্রেমিকদের সঙ্গে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।