বাংলাদেশকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সময়ে সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে

  • মেজর মনজুর কাদের (অব.)

বিগত স্নায়ু যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চরম শত্রু সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন দেখলো পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শক্তি পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করছে এবং পূর্ব পাকিস্তানের পাতি বুর্জোয়া দলগুলো স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করছে এবং পিকিংপন্থী পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি ১৯৬৯ সালে (অন্যান্য বাম কিছু সংগঠন‌ও সোচ্চার হয়) সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে কার্যক্রম শুরু করছে তখন ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল এবং জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হ‌ওয়াকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানকে দিখন্ডিত করার জন্য ভারতের মাধ্যমে নীল নকশা তৈরি হয়।

অপরদিকে, সোভিয়েতকে মোকাবেলা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কুটনীতিক, হেনরি কিসিঞ্জার কুটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সঙ্গে পুঁজিবাদের নেতা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিরোধীতা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার নতুন মিত্র চীন, উভয়েই পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশের (১৯৭১) মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে।

জাতিসংঘে সোভিয়েত ইউনিয়নের শক্ত ভূমিকা নেয়ার কারণে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এ ভারতের সেনাবাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করার সুযোগ পায় ফলে সহজেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয় ।

এটি রুশ-ভারতের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের বিপক্ষে থাকার কারণে।

হাল ছাড়েনি যুক্তরাষ্ট্র

এরপর মার্কিনীদের কুটনীতির গতি সোভিয়েত ইউনিয়নের আশা আকাঙ্ক্ষাকে পদে পদে বাধা দিতে থাকে।

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হ‌ওয়ার পর সোভিয়েত সমর্থিত ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানে বিরত থাকে। পশ্চিমা মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রকে এই অবস্থান গ্রহণের জন্য সমর্থন করে।

১৯৭২ সালের মার্চে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়। এর পরের মাসে, ৪ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় এবং সেইসাথে সহায়তার জন্য ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাহায্য প্রদান করে। সেসময় এই সাহায্য অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় ছিল সর্বোচ্চ পরিমাণ।

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের পছন্দ ছিল রুশ-ভারত ব্লক

______

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপরই বাংলাদেশে পুতুল সরকার বসিয়ে দিয়ে সুতার গুটি রুশ-ভারত নিজেদের হাতে রেখে দেয়। রক্ষী বাহিনী তৈরি করে হাজার হাজার প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের হত্যা করে এবং সেনাবাহিনী ধংস করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করার সকল অপকৌশল অবলম্বন করে ভারতের পুতুল সরকার।

১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষ

______________

স্বাধীনতার পর যে পরিমাণ সাহায্য বিদেশ থেকে পাওয়া গিয়েছিল তার বেশীরভাগই আত্নাসাত করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা, ফলে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে সমগ্র বাংলাদেশ। সকল প্রকার খাদ্য দ্রব্যের ম‌ওজুদের ব্যবসা সরকারী দল নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে দেখা দেয় ১৯৭৪ এর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ।

আর্থিক অব্যবস্থাপনা এবং ব্যাপক দুর্নীতির কারণে ১৯৭৪ সালের এই দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায়।

কারচুপির নির্বাচন : স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার

___________

১৯৭৩ সালের কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যায় সহযোগিতা করে ভারত। নিজ দেশে গণতন্ত্রের চর্চা করে পশ্চিমা বিশ্বের সুনজরে থাকার কৌশল অবলম্বন করে ভারত।

অপরদিকে, সকল প্রতিবেশী দেশে যাতে ভঙ্গুর গণতন্ত্র নিয়ে পশ্চিমার কাছে সমালোচনার মুখে পড়ে তার জন্য সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করতে থাকে আধিপত্য ও সম্প্রসারণবাদী দেশেটি।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যা

____________________

এতেও সন্তুষ্ট হয়নি ভারত। উলঙ্গভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যার খেলায় মেতে উঠে তারা।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে একদলীয় শাসনের ( বাকশাল ) বিল পাস করা হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠান না করেই শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত দেখানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সংবাদপত্র ও টেলিভিশন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ তৈরি করার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে।

সিকিম বানানোর অপচেষ্টা

___________

এক দলীয় ব্যবস্থায় সিকিমের মতো পার্লামেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অঙ্গরাজ্য বানানোর সকল চক্রান্ত শেষপ্রান্তে যখন পৌঁছে যায় সেমূহুর্তে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন তরুন মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট মুজিবশাহীর পতন ঘটিয়ে দেন। ভারতের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।

তবে এরপর বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক নাটকীয়ভাবে সুদৃঢ় হতে থাকে।

উন্নয়নের প্রধান অংশীদার হয়ে উঠে যুক্তরাষ্ট্র

___________

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অংশীদার হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭২ সাল থেকে ইউএসএইড প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য দিয়েছে বাংলাদেশকে।

অবকাঠামোগত উন্নয়নেও সহায়তা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যেমন নাসা স্পেস রিসার্চ অ্যান্ড রিমোট সেন্সিং অর্গানাইজেশন (স্পারসো) এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে ট্রিগা রিসার্চ সেন্টার খুলতে সহায়তা করেছে।

আমেরিকা সঙ্গে আছে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদান করতে থাকে।

জেনারেল জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব

_________

১৯৭১ সালের ২৬/২৭ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে কর্মরত মেজর পদে থাকা একজন দেশপ্রেমিক অফিসার জিয়াউর রহমান জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা (পরে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে) দিয়ে বিপদগ্রস্ত জনগণের সামনে চলে আসেন।

পরবর্তীতে দ্বিতীয়বারের মতো ( যা একজন ভাগ্যবান ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব) জাতির আরেক ক্রান্তিকালে, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাসীন হন এবং পূর্ববর্তী সরকারের সমাজতান্ত্রিক নীতি বাদ দিয়ে মুক্ত বাজার নীতি গ্রহণ করেন।

নতুন দিগন্ত উন্মোচিত

__________________

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গতিশীল শাসনামলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজারের দিগন্ত উন্মোচিত হয়, গার্মেন্টসসহ অসংখ্য শিল্প কারখানা স্থাপিত হয় এবং রফতানি বানিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে যার মাধ্যমে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এবং রফতানি বানিজ্যের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন শুরু হয়।

জেনারেল এরশাদের শাসনামল

__________________

অক্টোবর ২১, ১৯৮৩-এ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ( সিএমএলএ), লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোন্যাল্ড রিগ্যান হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানান। প্রেসিডেন্ট রিগ্যান শীতল যুদ্ধকালীন ( Cold War) ঢাকার অবস্থানের প্রশংসা করে বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে এর গঠনমূলক অবস্থানের জন্য করতালিতে সংবর্ধনা জানাতে চায়।”

এরপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে এরশাদ নভেম্বর ১৮, ১৯৮৮-এ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের আমন্ত্রণে ৫ দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যান।

প্রেসিডেন্ট এরশাদের শাসনামলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজার, গার্মেন্টস শিল্প, চামড়া শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা গড়ে উঠে এবং রফতানি বানিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে যার মাধ্যমে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এবং রফতানি বানিজ্যের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতে থাকে।

উপজেলা পদ্ধতি চালু করে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচিত নির্বাহী ব্যবস্থা প্রবর্তন করে বেসামরিক প্রশাসনে আমূল পরিবর্তন আনেন।

খালেদা জিয়ার যুক্তরাষ্ট্র সফর

____________

মার্চ ১৭, ১৯৯২-এ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন।

ব্যবসা বাণিজ্য শিল্পায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে এবং নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে থাকে।

উল্টোদিকে যাত্রা

______________

১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সমর্থনে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা ফ্যসিষ্টে রূপান্তরিত হ‌ওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু এরশাদ বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ৪-দলীয় জোটে অংশগ্রহণ করায় বিপদে পড়ে যায় হাসিনা।

তবে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরপরই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ শাসন শুরু করেন এবং নিজেই একজন ফ্যাসিস্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ভারত, রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করে চলতে থাকে।

পিতার পদাঙ্ক অনুসরণে বিপর্যয়

_______________

শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক ভুলের কারণে (একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম সহ অন্যান্য) আওয়ামী লীগ বিলুপ্তির মাধ্যমে বাকশাল কায়েম হয়েছিল এবং সেই ভুলের মাশুল হিসেবে হাজার নেতাকর্মীকে পরবর্তীতে নিগৃহীত হতে হয়েছে।

শেখ হাসিনা পিতার ভূল গুলোকে চিহ্নিত না করে তার সব কর্মকাণ্ডকে সঠিক হিসেবে গ্রহণের মাধ্যমে ‘ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ( personal cult) বৃদ্ধির চেষ্টা করতে গিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে হাজার হাজার মুর্তি নির্মাণ করে । ধীরে ধীরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা যে একারণে ক্ষিপ্ত হতে থাকে তা বুঝতে হাসিনা ব্যর্থ হন।‌

যুক্তরাষ্ট্রকে বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন

____________________

২০০৮ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র যতবার গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে ততবারই দেশটিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েছেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা।

ফ্যাসিস্টের পতন এবং রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে যদি বিন্দুমাত্র জ্ঞান তার থাকত তাহলে গত সাড়ে পনেরো বছর এভাবে উদ্ভ্রান্তের মতো দেশ তিনি পরিচালনা করতেন না।

পতন তার অনিবার্য ছিল। ছাত্র জনতা সৃষ্ট জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমেই তার সৃষ্ট ফ্যাসিবাদের তাই পতন হয়েছে।

আবার বাংলাদেশ পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র

_________

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, ইউএস প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক স্বীকৃতি ইউএস কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল অর্জনকারী

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট কর্তৃক বিধ্বস্ত হ‌ওয়া বাংলাদেশ এখন নতুন করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাইছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় বাংলাদেশ পুনর্গঠন এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য এগিয়ে এসেছে যেমনটি এসেছিল বিগত স্নায়ু যুদ্ধের সময়।

নতুন স্নায়ু যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের যেমন বাংলাদেশকে প্রয়োজন তেমনি বাংলাদেশেকেও প্রয়োজন মার্কিনীদের।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ

____________________

ঠিক এই সময়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গতকাল (সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪) সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদানকারী মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থ বিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান। তার সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ‘বর্তমান সময়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত।’ তিনি ছাত্রদের নেতৃত্বে সংঘটিত বিপ্লব সম্পর্কে বলেন, এই বিপ্লব বাংলাদেশে নতুন আশাজাগানিয়া যুগের সূচনা করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্নীতির মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির এক গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত ছিলাম।’

দুর্নীতির একটি নমুনা

_________________

প্রথম আলো পত্রিকা সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪-এ লিখেছে:

‘আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্পের একটি বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট যা আর্থিক ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়েছে।

এতে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি। স্যাটেলাইটের আয়ুষ্কাল ১৫ বছর—অর্থাৎ ২০৩৩ সালের পর এর অস্তিত্বই থাকবে না তাই প্রকল্পের খরচ পুনরুদ্ধারের সময়ও শেষ হয়ে যাচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রত্যাশা

____________________

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন।

মার্কিন প্রতিনিধিদল ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারলে ওয়াশিংটন আনন্দিত হবে বলে উল্লেখ করেন মার্কিন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ড. ইউনূস সরকারের বাস্তবায়নাধীন সংস্কার কর্মসূচিতে তাঁরা প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী।

যুক্তরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা

_________________

যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের প্রয়োজনে এই স্নায়ু যুদ্ধে জিতে পুনরায় বিশ্বাব্যাপী একক শক্তি হ‌ওয়ার চেষ্টা করছে যেমনটি করেছিল পথম স্নায়ু যুদ্ধের সময়।

১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ু যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে একক বিশ্ব মোড়লে রূপান্তরিত হয়।

সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘণিষ্ঠ দোসর ভারত রাতারাতি পুরানো বন্ধুকে ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিজয় গান গাইতে গাইতে আঞ্চলিক শক্তিতে রূপান্তরিত হ‌ওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ে। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোকে এর কাফফারা দিতে হয়েছে ১৯৯১ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত।

তাই বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কে ভারত যেন আবার মেইন ফ্যাক্টর না হয়ে ওঠে তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে বাংলাদেশের জনগণকে।

সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদল বলেছেন সংস্কারে সরাসরি থাকবে যুক্তরাষ্ট্র ।

যুক্তরাষ্ট্র তার প্রয়োজনে বাংলাদেশকে এখন সমর্থন দেবে।‌ তাই দেশের স্বার্থে জাতীয় ঐক্যমত গঠন করে নিজেদের স্বার্থে কাজ করা প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর । এই সুযোগ বেশীদিন থাকে না। একারণেই ডঃ. ইউনূস বারবার বলছেন যে এই সুযোগ হাতছাড়া করলে বাংলাদেশ বিপদে পড়বে।

এই সুযোগ যাতে বাংলাদেশ ব্যবহার না করতে পারে তার জন্য আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তি উঠে পড়ে লেগেছে।

এদের ষড়যন্ত্র ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে নতুন প্রজন্মের মেধাবীদের সকল দেশপ্রেমিকদের সঙ্গে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইউক্রেনের পটপরিবর্তনের প্রধান নিয়ামক ন্যুল্যান্ড আসছেন ঢাকায়

বাংলাদেশে আসছেন গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন অফিসিয়ালরা। এই প্রথমবারের মত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে ৪ সিনিয়র কূটনীতিক: তিন জন আন্ডার সেক্রেটারি, একজন এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি, এবং এরা সবাই খুব কামেল লোক।

এরা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড,

বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া,

অর্থনীতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি হোজে ডব্লিউ ফার্নান্দেজ, এবং

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

এখানে উল্লেখ্য যুক্তরাষ্ট্রে নামকরণ সবকিছুই একটু উল্টোপাল্টা। বিশ্বে সর্বত্র যখন সরকারে মন্ত্রী থাকে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এই পদটির নাম সেক্রেটারি, যেমন পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে তারা বলে সেক্রেটারি অব স্টেটস। তার অধীনে থাকে দু’জন ডেপুটি সেক্রেটারী, ঠিক তার নিচেই থাকে ছ’জন আন্ডার সেক্রেটারি (ইনারা বাংলাদেশের সচিব পর্যায়ের ব্যক্তি), তার অধীনে থাকে সহকারী সচিব (মানে সহকারী মন্ত্রী)। তো সরকারের ৬ জন আন্ডার সেক্রেটারীর মধ্যে ৩ জনকেই এবার ঢাকায় পাঠাচ্ছে। এর দ্বারা বুঝতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র কী করতে যাচ্ছে।

এরমধ্যে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বিখ্যাত হয়ে আছেন ২০১৪ সালে ইউক্রেনে পটপরিবর্তন সফল করা নিয়ে, এবং ডোনাল্ড লু পাকিস্তানে ইমরান খানের অপসারনের সাথে। দুটো সরকার পতনই এত সিস্টেমেটিক ভাবে করা হয়েছে, যেন মনে হতে পারে, গানিতিক নিয়ম মেনেই তা হয়েছে।

২০১৪ সালের শুরুর দিকে পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে মর্যাদার বিপ্লব বা ‘ময়দান বিপ্লব’ নামে একটি অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়, যাতে বিক্ষোভকারী ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষের পর রুশপন্থি প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হন। ২০১৩ সালের শুরুতে ইউক্রেনীয় পার্লামেন্ট ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যোগদানের জন্য চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য অনুমোদন করেছিল। এটি প্রত্যাখ্যান করতে রাশিয়া প্রবলভাবে চাপ প্রয়োগ করে এবং রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ তাতে সায় দেন। ফলে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পরিবর্তে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক জোরদার করার আকস্মিক সিদ্ধান্ত নিলে তার প্রতিক্রিয়ায় বৃহৎ আকারের গণবিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে। গণবিক্ষোভ প্রবল হতে থাকে যাতে দাবী ওঠে রাশিয়াপন্থী প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ। আজারভ সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার, অলিগার্কিদের প্রভাব, পুলিশি বর্বরতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ হচ্ছিল। সরকার মিটিং মিছিলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তা বিক্ষোভকে আরও উস্কে দেয়। বিরোধী দলগুলি একযোগে সহিংস আন্দোলন শুরু করে, তাদের সাথে যোগ দেয় ৩ জন সাবেক প্রেসিডেন্ট।

প্রায় একমাস ধরে প্রচণ্ড গণআন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। ‘ময়দান বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত প্রতিবাদ শিবির মধ্য কিয়েভের স্বাধীনতা স্কোয়ার দখল করে। বিক্ষোভকারী এবং সরকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ১০৮ জন বিক্ষোভকারী এবং ১৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা মারা যায়, এবং আরও অনেকে আহত হয়। এক পর্যায়ে ঢাল এবং হেলমেট সহ কর্মীদের নেতৃত্বে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সংসদের দিকে অগ্রসর হয় এবং পুলিশ স্নাইপাররা তাদের উপর গুলি চালায়। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাজধানী কিয়েভে অবস্থিত স্বাধীনতা চত্বরসহ পার্লামেন্ট ভবনের সামনে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ চালায়। রাজধানী থেকে আন্দোলন ধীরে ধীরে সারা দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ আর টানা অবরোধের কারণে সরকারি কার্যক্রমসহ নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারি, ইয়ানুকোভিচ এবং সংসদীয় বিরোধী দল অন্তর্বর্তীকালীন ঐক্য সরকার, সাংবিধানিক সংস্কার এবং আগাম নির্বাচনের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ কেন্দ্রীয় কিয়েভ ছেড়ে যায় এবং বিক্ষোভকারীরা নিয়ন্ত্রণ নেয়। এর আগে জনগণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পুলিশ প্রেসিডেন্টের বাসভবনটি ছেড়ে দিলে সেখানে বিরোধীদলীয় বিক্ষোভকারীরা প্রবেশ করে। প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকভিচ সেই সন্ধ্যায় শহর ছেড়ে পালিয়ে যান। যদিও বিক্ষোভের শুরুতেই এটা সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের পতন ঘটে।


যেভাবে ইউক্রেনে পালাবদল ঘটান ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড

২০১৩ সাল থেকে ইউক্রেনে যখন সরকার বিরোধী আন্দোলন চলছিল, তখন সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডকে বসানো হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ইরোপিয়ান এবং ইউরোএশিয়া ডেক্সের সহকারী মন্ত্রী হিসাবে। নতুন দায়িত্ব লাভের পরপরই তিনি সংকট সমাধানে ইউক্রেনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জিওফ্রে পাইটের সাথে ঘনিষ্ট ভাবে কাজ করতে থাকেন। নিয়মিতভাবে আলোচনা ও পরামর্শ দানের পাশাপাশি নুল্যান্ড কিয়ভ সফর করেন কয়েকবার, ঢুকে পড়েন আন্দোলনরত শিবিরে। মূলত নুল্যান্ড ইউক্রেনের ‘মর্যাদার বিপ্লবে’র জন্য নেতৃত্বদানকারী মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যক্তি ছিলেন, যিনি প্রধান কূটনীতিক হিসাবে কাজ করতে গিয়ে ইউরোপীয় মিত্রদের রাশিয়ান সম্প্রসারণবাদের উপর কঠোর লাইন নিতে চাপ দেন। ২০১৪ সালে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণের গ্যারান্টি সহ ইউক্রেনের জন্য ঋণের নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ইউক্রেনীয় সামরিক ও সীমান্ত রক্ষীদের জন্য অ-মারাত্মক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন নুল্যান্ড। তখন সেক্রেটারি অফ স্টেট জন কেরি এবং সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স অ্যাশ কার্টারের সাথে নুল্যান্ডকে ইউক্রেনে প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র সরবরাহের নেতৃস্থানীয় সমর্থক হিসাবে দেখা যায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট মিত্র হওয়া সত্ত্বেও ইউক্রেন সংকটে ইউরোপিয়ান নেতারা নিজ নিজ স্বার্থে বহুধাবিভক্ত ছিল, ফলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের পাশে সমন্বিতভাবে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়, যা নুল্যান্ডকে বিব্রত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টতই আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। ফলে বাধ্য হয়েই নুল্যান্ড জাতিসংঘকে ব্যবহার করেন। এমনকি তিনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের উদ্দেশ্যে “ফাক ইইউ” শব্দটি প্রয়োগ করেন। এই আন্দোলনের শুরু থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার বার বলেছে যে, একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানোর জন্য সঙ্কটের সব পক্ষের সাথে কাজ করছে, কিন্তু বাস্তবে ‘মর্যাদার লড়াইয়ে’ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি প্রধান দলের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রেখে গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়েই দেশটির ভবিষ্যত নির্ধারণ করেন। নুল্যান্ড কিয়েভে এসে বিরোধী তিন নেতার সাথে যেমন বৈঠক করেছেন, পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচের সাথে হেসে হেসে কথা বলেছেন, কিন্তু ঘটনা যা ঘটার প্লান ছিল, সেটাই ঘটেছে। ইউক্রেনের গণতন্ত্রাতিক আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের প্রতি জোরালো সমর্থনের অংশ হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ২০১৪ সালের ৩ মার্চ কিয়েভে যান বিরোধী দলের নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে।
 

কেবল পটপরিবর্তন ঘটিয়েই ক্ষান্ত হননি নুল্যান্ড, ২০১৬ সালে ইউক্রেনকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচার শুরু করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন: “এটি এমন লোকদের আটকে রাখা শুরু করার সময় যারা ইউক্রেনের জনসংখ্যাকে অনেক দিন ধরে ছিঁড়ে ফেলেছে এবং এটি দুর্নীতির ক্যান্সার নির্মূল করার সময়”।

You Might Also Like

রাষ্ট্রীয় গুম হত্যার ইতিহাসে চ্যাঞ্চল্যকর বিচারের ঘটনা ঘটছে মেক্সিকোতে

গত ২৫ আগস্ট মেক্সিকোর এক বিচারক ২০১৪ সালে সংঘটিত ৪৩ জন ছাত্রের গুম ও হত্যার ঘটনা গোপন করা ও মিথ্যা তথ্যদানের অভিযোগে দেশটির সাবেক অ্যাটর্ণী জেনারেল হিসাস মুরিলো কারামকে আটকাদেশ দেয়, এবং পুরো বিচারকালে তাকে আটকই থাকতে হবে। কারাম এক সময়ের ক্ষমতাসীন পিআরআই দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ছিল। দেশের ফেডারেল জুডিসিয়ারি কাউন্সিলের শুনানীর পরে স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেয়া হয়, ঐ ঘটনার ব্যাপারে ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় এটর্ণী জেনারেল কারাম যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তা ছিল ‘হিস্টোরিকাল ট্রুথ’।

কারামের অপরাধ হচ্ছে, ২০১৪ সালে ৩৪জন শিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রীয় ‘গুম’ করার সাথে তার সংশ্লিষ্টতা এবং দায়িত্বে থাকাকালে এই বিষয়ে মিথ্যা তথ্য প্রদান। তার বিচার করা হবে গুম, নির্যাতন এবং বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার অভিযোগে। ঐ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আরও ৮০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, কমপক্ষে ৫০ জন আটক হয়েছেন। এদের মধ্যে ঐ এলাকায় দায়িত্বে ছিলেন সেনাবাহিনীর এমন তিনজন সাবেক শীর্ষ কমান্ডারও আটক হয়েছেন।

দেশের ট্রুথ কমিশন ২০১৪ সালে কলেজ ছাত্রদের গুম হবার ঘটনাটিকে ‘রাষ্ট্র সংঘটিত অপরাধ’ (স্টেট ক্রাইম) হিসাবে চিহ্নিত করেছে। ঘটনা সম্পর্কে যতটুকু জানা গেছে,
২৬ জুলাই ২০১৪ আয়োতজিনাপা গ্রামীণ শহরের একটি শিক্ষক কলেজ থেকে ৪৩ জন যুবক মেক্সিকো সিটির দক্ষিণে ইগুয়ালা শহরে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছিল। তৎকালীন সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী ঐ শিক্ষার্থীরা হাঙ্গামা করতে যাচ্ছে এই সন্দেহে পথে পুলিশ তাঁদের আটক করে এবং মেক্সিকোর একটি ড্রাগ গ্যাং-এর হাতে তুলে দেয়। এই মাদক ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের হত্যা করে, তাঁদের মৃতদেহ পুড়িয়ে সেগুলো নদীতে ফেলে দেয়। সেনাবাহিনী দাবী করেছিল যে, তাঁদের আটকের ব্যাপারে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছিলো না। কিন্তু পরে জানা গেছে যে, ঐ তরুণদের আটকের পরে তাঁদের ভাগ করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। এর মধ্যে কয়েক জনকে সেনাবাহিনীর স্থানীয় ঘাটিতেও নেয়া হয়। এদের কেউ কেউ বেশ কিছুদিন বেঁচেও ছিলেন। কথিত অপহরণকারী ও হত্যাকারীদের সাথে সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো। কিন্ত তা স্বত্বেও রাষ্ট্রীয় উচ্চ পর্যায় থেকে গুম, হত্যা, অস্বীকার এবং তা ধামাচাপা দেবার এই ঘটনাটি এখন অনেক বেশি আলোচিত।

২৫ আগস্ট মেক্সিকোর আদালতে যা ঘটেছে সেই রকম ঘটনা অহরহ ঘটেনা, তবে যা ঘটেছে, তার তাৎপর্য কেবল মেক্সিকোর জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, সম্ভবত এর তাৎপর্য গোটা বিশ্বে ঘটা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গুম ও হত্যার জন্য একটি বড় মেসেজ। মেক্সিকোর এই বিচারিক ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, এই ধরণের রাষ্ট্রীয় অপরাধ কখনো তামাদি হয়ে যায়না, উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা তা থেকে দায়মুক্তি পেতে পারেনা, এবং ন্যায় বিচারে যারা বাধা দেয় তাঁরাও অপরাধী বলেই বিবেচিত হয়।

আমিরাতের জাতির মাতার সাক্ষাৎ পেলেন না শেখ হাসিনা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) জাতির মাতা শেইখা ফাতিমার সাক্ষাৎ পেলেন না বাংলাদেশের (অনেকের কাছে বিনাভোটের. অনেকে ডাকে মিডনাইট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা থেকে যাওয়ারকালে রাজপরিবারের এই মুরব্বীর সাথে সাক্ষাতের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে সাক্ষাতের অনুমতি দেয়া হয়নি। এর কারণ হিসাবে জানা গেছে, শারজাহর মানি লন্ডারিং মামলা। প্রভাবশালী এই রাজপরিবারের সদস্যকে ব্যবহার করে মুক্তি পেতে চান হাসিনা। এর আগেও তিনি একই চেষ্টা করেছিলেন।

২০২০ সালের ৬ ই জানুয়ারী শেখ হাসিনার মেয়ের জামাতা খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতু সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ অঙ্গরাজ্যে বিপুল পরিমানে অবৈধ অর্থ এবং মাদক সহ ধরা পড়ে। খবর পেয়ে ১১ জানুয়ারী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে দ্রুত ছুটে যান আবুধাবি, অথচ মাস দুয়েক আগেই তিনি ঐ দেশটি সফর করে দুবাই এয়ার শো দেখে আসেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে তার পূণর্বার সেখানে হঠাৎ জরুরী সফরের কোনো কারণ জাতিকে জানানো হয়নি।

ঐ সফরে তিনি আরব আমিরাতের ক্ষমতাসীন শাসক পরিবারকে ব্যবহার করে ব্যাপক তদবীর চালিয়ে নিজ জামাইকে মানি লন্ডারিং মামলা থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করেন। এমনকি আরব আমিরাতের জাতির মাতা শেইখা ফাতিমাকে ‘মা’ ডেকে তাঁর মাধ্যমে তদবীর চালান। কিন্তু সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তার কারণ, শারজাহর শাসক শেখ সুলতান বিন মুহাম্মদ আল কাসিমি ভিন্ন পরিবারের লোক, নিয়মনীতিতে খুব কড়া, সেখানে শরীয়া আইন কার্যকর। তাছাড়া কাসিমীর সাথে আবুধাবীর শাসকের সম্পর্ক ভালো না। ফলে আবুধাবীর শাসকের বা জাতির মাতার তদবীর কোনো কাজে আসেনি। তদুপরি ঢাকায় নিযুক্ত ইউএই রাষ্ট্রদূত আলমেহিরিকে একই কাজে আবুধাবী পাঠিয়ে তদবীর করান শেখ হাসিনা, কিন্তু ফল উল্টো হয়, আলমেহিরি চাকরি হারান, এবং বাংলাদেশে আর ফিরতেই পারেননি।

অবশেষে অর্থ পাচার সহ বেশ কয়েকটি মামলা হয় মিতুর নামে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে মিতু জানান, পাচারকৃত ঐ অর্থের মালিক তিনি নন, এর প্রকৃত মালিক হচ্ছে তার শ্বাশুড়ি শেখ হাসিনা এবং তার স্ত্রী পুতুল। ফলে তাদেরকে সহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে অভিযোগপত্র দাখিল করে শারজাহ পুলিশ ও AML ইউনিট। শ্বাশুড়ির নাম বলে দেয়ায় হাসিনা চাপে পড়ে যায়। অবশেষে তার কন্যার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান জামাই জেলে থাকা অবস্থায়।

আজ শান্তি আলোচনা: তুরস্কে পৌঁছেছেন ইউক্রেন ও রাশিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা

শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে তুরস্কে পৌঁছেছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা। আজ বৃহস্পতিবার তুরস্কের আন্তালিয়া শহরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকটির আয়োজন করেছে তুরস্ক।

তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলিত সাভাসগলুর আমন্ত্রণে বৈঠকে অংশ নিতে গতকালই তুরস্কে যান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।

পরে গেছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবাও।

এর আগে দিমিত্র কুলেবাও এক ভিডিও বার্তায় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘দোষারোপের দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে শুভচিন্তা নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে।’

এর পর গতকাল রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘ইউক্রেনকে জোটনিরপেক্ষ করার লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করবে মস্কো।’ তবে আলোচনার মাধ্যমেই তা অর্জন করার পক্ষে রাশিয়া।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এই প্রথম দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হতে যাচ্ছে। বৈঠকে লাভরভ ও কুলেবার সঙ্গে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাভাসগলুর অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আশা করছেন, আন্তালিয়ার এ আলোচনায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দরজা খুলবে।

আরেক মধ্যস্থতাকারী পক্ষ ইসরায়েলের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ের অবস্থান আগের চেয়ে নমনীয় হয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে শুধু দনবাস অঞ্চলকে নিরস্ত্রীকরণের কথা বলা হচ্ছে।

এর আগে বেলারুশে তিন দফার শান্তি আলোচনা হয়। কিন্তু এ আলোচনার অগ্রগতি সামান্য।

মানি লন্ডারিং মামলায় হাজিরা দিতে আরব আমিরাতে গেলেন শেখ হাসিনা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহে বিশেষ আদালতে মানি লন্ডারিং মামলায় শারীরিক হাজিরা দিতে ৬ দিনের জন্য দেশটিতে গেছেন বাংলাদেশের নৈশভোটের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও ঢাকার সরকারী তরফ থেকে দাবী করা হয়েছে দুবাইর শাসকের আমন্ত্রনে গেছেন। আসলে বিষয়টি তেমন নয়, বরং শারজাহ আদালতের নির্দেশে গেছেন।
 
৯ই মার্চ বেলা ২টায় শারজাহ কোর্টে মানি লন্ডারিং মামলায় ভিভিআইপি আসামীর হাজিরা অনুষ্ঠিত হবে। কোর্ট লোকেশন- নূরাণী মসজিদের পার্শ্বে। মামলার নম্বর ৫২৫১। তাকে পুলিশের গাড়িতে করে (হাজতি আসামীকে যেভাবে নেয়) আদালতে নেয়া হবে। তবে এই বিশেষ আসামীর আদালতে নেয়া উপলক্ষে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও আদালতে কড়াকড়ি থাকবে। ইতোমধ্যে ৯ ইং মার্চ স্থানীয় সময় দুপুর ১:৪৫ মিনিট থেকে দুপুর ১:৫৫ মিনিট পর্যন্ত শারজাহর ইমিগ্রেশন রোড এবং দুপুর ২:১৫ থেকে ৩:৪৫ মিনিট পর্যন্ত শারজার কোর্ট এলাকার রোড, এবং ক্রাইম সিভিল কোর্ট ভবনের ২ হাজার মিটারের আশপাশ সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সূত্র মতে, ২০২০ সালে মামলা দায়েরের পর থেকে তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি মামলায় হাজিরা দিতেন। বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রপতি, অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সেনাপ্রধান, এবং কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে তদবীর চালিয়ে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ভিভিআইপি সুবিধা নিয়ে ভার্চুয়াল কোর্টে ৫/৬ দফা হাজিরা দেন। এরমধ্যে একবার হাজিরায় ২০ মিনিটের মতো থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বেরিয়ে গেছেন, তিন বার হাজির হননি, এবং দু’বার বিচার চলাকালে ‘আমি থাকতে পারবো না’ বলেই চলে গেছেন! এরপর আদালত বিরক্ত হয়ে তাকে সতর্ক করে। সতর্ক করার পরও দ্বিতীয় বার একই ঘটনা ঘটিয়েছে। মানি লন্ডারিংয়ের মত গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়েও রাষ্ট্রীয়ভাবে ভিভিআইপি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তার অপব্যবহার এবং বিচারককে অসম্মান করা হয়, যা আদালত অবমাননার সামিল। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে চুড়ান্তভাবে কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, তিনি যে ই হোন না কেনো, আগামী ৯ই মার্চ আদালতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, নইলে একতরফাভাবেই বিচারকার্য শেষ করা হবে। সেই হাজিরা দিতেই তিনি ৭ই মার্চ বিকালে গেছেন আরব আমিরাতে।

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার কন্যার সাবেক স্বামী খন্দকার মাসরুর হোসাইন মিতুর (ফরিদপুরের নূরা রাজাকারের নাতি) আরব আমিরাতে অর্থ পাচার মামলায় কন্যা পুতুল সহ শেখ হাসিনা নিজেও আসামী। ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে আরব আমিরাতের শারজাহ শহরের বুহাইরা এলাকায় আল নাসির-৫ টাওয়ারের ৩০১৩ নম্বর এপার্টমেন্ট থেকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন মাসরুর হোসেন মিতু। তার কিছুদিন আগে হঠাৎ কাতার থেকে সাড়ে ৪ কোটি দিরহাম (যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা) অর্থ এডিসিবি ব্যাংকে জমা হয় মিতুর ব্যক্তিগত একাউন্টে। নিষিদ্ধ রাষ্ট্র কাতার থেকে এত মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের হিসাব দেখে আরব আমিরাত মানি লন্ডারিং ইউনিটকে (AML) ব্যবহার করে অনুসন্ধান চালায়। কারণ ঐ সময় কাতারের সাথে আরব আমিরাতের সকল সম্পর্ক ছিন্ন সহ সকল প্রকার চুক্তি বাতিল করেছিল আরব আমিরাত। পরে শারজাহে মিতুর ফ্লাটে তল্লাশি চালিয়ে ল্যাপটপ, আইপ্যাড, অনেকগুলো ফোন ও সিম, বিপুল পরিমানে মদ ও মাদক উদ্ধার করে পুলিশ। মিতুর পাসপোর্ট জব্দ করে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন একাউন্ট এবং ট্রানজেকশনে ৬৮০ মিলিয়ন ইউরো জব্দ করে শারজাহর AML ইউনিট। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি মানি লন্ডারিং মামলা হয় মিতুর নামে। জিজ্ঞাসাবাদে মিতু দাবী করে, ঐ অর্থের আসল মালিক তার স্ত্রী পুতুল এবং শ্বাশুরি শেখ হাসিনা। তিনি শুধু ক্যারিয়ার মাত্র। এরপরে মিতুর মামলায় পুতুল এবং শেখ হাসিনাকে সহযোগি আসামী করা হয়। দীর্ঘদিন হাজতবাস করার পরে সম্প্রতি মিতু জামিনে বের হয়েছে। কিন্তু তার আগেই মিতুর সাথে কন্যার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটনা শেখ হাসিনা।

ফরিদপুরের কুখ্যাত নুরু রাজাকারের নাতি ও আ’লীগের সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পুত্র খন্দকার মাসরুর হোসেন মিতু বেশ কয়েক বছর যাবৎ স্ত্রী পুতুল সহ আরব আমিরাতে বসবাস করছেন, এর আগেও মানি লন্ডরিং সহ বিভিন্ন মামলায় পড়ে কানাডা থেকে বিতাড়িত। মুলত বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে দুর্নীতিলব্ধ এবং শেখ হাসিনা ও পুতুলের কমিশন বাবদ প্রাপ্ত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার পাচার করে এনে ব্যাংকে রাখা, বিভিন্ন ব্যবসায় লগ্নি করা ছিল মিতুর কাজ। তার ব্যবসার মধ্যে রয়েছে হুন্ডি ব্যবসা, বিভিন্ন দেশ থেকে কালো টাকা আদান-প্রদান।

আরব আমিরাতের ৭টি আমিরাতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শারজাহ আমিরাতের আইন কানুন অন্য আমিরাতগুলি থেকে আলাদা। এখানে শরীয়া আইন কার্যকর। তাছাড়া ২০১৮ সালে নতুন এন্টি মানি লন্ডারিং আইন (AML) কার্যকর করার পর থেকে দেশটিতে মানি লন্ডারিং ড্রাইভ জোরদার হয়। সেই আইনী বিপদেই পড়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মেয়ের সাবেক জামাই, এবং তার সাথে বিনাভোটের প্রধানমন্ত্রী এবং তার কন্যা। ঘটনা ঘটার পরে মামলা যাতে না হয় সেই চেষ্টা করতে ২০০০ সালের ১১ জানুয়ারী শেখ হাসিনা নিজেই ছুটে যান আরব আমিরাতে (যদিও ২ মাস আগেই আমিরাত সফর করেছিলেন)। আরব আমিরাতের শাসক পরিবারকে ব্যবহার করার তদবীর করেন, এমনকি আরব আমিরাতের জাতির মাতা শেখা ফাতিমাকে ‘মা’ ডেকে তাঁর মাধ্যমে তদবীর চালিয়েও কোনো সুবিধা করতে পারেননি। ঐ সময় ঢাকায় নিযুক্ত ইউএই রাষ্ট্রদূত আলমেহিরিকে দেশে পাঠিয়ে তদবীর চালান শেখ হাসিনা, কিন্তু উল্টো ফল হয়, আলমেহিরি চাকরি হারান, এবং বাংলাদেশে আর ফিরতেই পারেননি। জানা গেছে, শারজাহর শাসক শেখ সুলতান বিন মুহাম্মদ আল কাসিমি নিয়মনীতিতে খুব কড়া, দ্বিতীয়ত শারজাহ শাসকের সাথে কেন্দ্রের শাসকের সম্পর্ক ভালো না। ফলে শেখ হাসিনা দুবাই শাসকের মাধ্যমে তদবীর চালিয়ে কোনো সুবিধা করতে পারেননি। কেবল, একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ভার্চুয়াল হাজিরার সুবিধা লাভ করেছিলেন, কিন্তু তা বরখেলাপ করায় বর্তমান ব্যক্তিগত হাজিরার সম্মুখীন।

জেলেনেস্কির কি ঢোলা পাজামা নাই?

১৯৭১ সাল। পূর্বপাকিস্তানের জনগনের উপরে হামলা করলো ইয়াহিয়ার হানাদার বাহিনী। অবশ্য আগো হামলার খবর পেয়ে যান নির্বাচিত নেতা মুজিব, এবং হোল্ডঅল রেডি করে তৈরি হয়ে থাকলেন, প্রবাসে আরামে থাকার জন্য বেগম সাহেব ঢোলা পাজামায় ফিতাও ভরে দিলেন। গণদাবীর প্রেক্ষিতে এবং নিজ নেতৃবৃন্দের শত অনুরোধেও তিনি স্বাধীনতার ঘোষনা দিতে সাহস করেননি, যুদ্ধ তো দূরের কথা। নেতাদের পালিয়ে যেতে কানে কানে বলে দিলেন, সন্তানদের গোপন ডেরায় পাঠিয়ে তিনি চলে গেলেন পশ্চিমে! সাথে নিতে ভুললেন না প্রিয় পাইপ এবং এরিনমোর তামাক! দেশের মানুষকে কিন্তু কোনো সতর্ক করলেন না, তারা প্রাণ দিলো লাখে লাখ! দেশ স্বাধীন হলে তিনি ফিরে এলেন। এবার দাবী করেন, আমিই দিয়েছি ঘোষণা, যুদ্ধও হয় আমার হুকুমে!

২০২২ সাল। পূর্ব ইউরোপের স্বাধীন দেশ ইউক্রেন, যা আয়তনে বাংলাদেশের ৪ গুণ, তবে মানূষ মোটে ৪ কোটি, এত খাদ্য উৎপাদন হয় যেনো বিশ্বের খাদ্যভান্ডার। প্রতিবেশি পরাশক্তি রাশিয়া হামলা করলো ইউক্রেনের ওপর। দেশ রক্ষা করতে জনগনকে সাথে নিয়ে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নেমে গেলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনেস্কি নিজেই। তিনিই প্রেসিডেন্ট তিনিই কমান্ডার। অনেকে তাকে পরামর্শ দিলেন, জেলেনেস্কি তুমি পালিয়ে যাও, পাশের দেশে নিরাপদ আশ্রয় নাও, কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করলেন, বরং দেশ রক্ষায় জনগনের সাথে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ইউক্রেন দখল করার পুতিনের অহমিকাকে ভুল প্রমান করে সপ্তাহ পার হতে চলল, প্রতিরোধের খবরই আসছে বেশি।

নেটিজেনরা বলাবলি করছেন, জেলেনেন্সি এত বোকা যে, ঢোলা পাজামা নিয়ে ধরাও দিলেন না – তাই আর বঙ্গবন্ধুও হতে পারলেন না! তবে যেভাবে যাচ্ছে, যুদ্ধে জিতুক আর মরুক, যেটাই হোক, ইতিহাসের মহানায়ক হওয়ার পথে ৪৪ বছরের তরুণ জেলেনেস্কি।

হাসিনার কারনে আটকে যাচ্ছে বাঙালিদের আমেরিকার নাগরিকত্ব!

বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরাতে মার্কিন স্যাংশনের ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশী জনগনের মধ্যে যারা আমেরিকান সিটিজেন হতে যাচ্ছে, তাদের ওপর। এবার পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হচ্ছে, এদের মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান কতৃত্ববাদী সরকারের খুন গুমে জড়িত মানবাধিকার হরণকারী এবং গণতন্ত্র ধংসকারী চিহ্নিত কেউ আছে কি না। এবার অনেকের আমেরিকান সিটিজিন হিসাবে শপথ গ্রহন স্থগিত করে পরীক্ষা নীরিক্ষায় ফেলা হয়েছে!
সূত্র নাগরিক টিভি।

নিপীড়নকারী সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে দাঁড়াবে যুক্তরাষ্ট্র, অবস্থান পরিষ্কার করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বিবৃতি

যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বেশ সচেতন মানবাধিকার নিয়ে। আর এই কারনে তারা শুধু তাদের দেশ নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও নজর রেখে থাকে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে। এ ছাড়াও বিশ্বের কোন দেশে যদি সে দেশের সরকার দমন-নিপীড়ন চালায় তা নিয়েও প্রতিবাদি ভুমিকা পালন করে থাকে দেশটির প্রশাসন। আর এরই ধারাবাহিকতায় তারা আবারো কঠোর হতে শুরু করেছে দেশটির প্রশাসন। জানা গেছে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল (ইন্দো-প্যাসিফিক) নিয়ে নিজ অবস্থান প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস রোববার এক বিবৃতিতে এই অবস্থান তুলে ধরে। এতে বলা হয়, যেকোনও নিপীড়নকারী অত্যাচারী সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে যুক্তরাষ্ট্র।

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় গত ১৪ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিনকেনের দেয়া বক্তব্যে এই বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হয়।

ব্লিনকেন তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা সেসব দেশের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অবশ্যই দাঁড়াব, যাদের মাধ্যমে তাদের নিজ দেশের নাগরিকরা নির্যাতিত হয়।’

ইন্দো-প্যাসিফিকের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়ে দেয়া বক্তব্যে এমনটি জানিয়েছেন বিশ্বের শক্তিধর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিকে আমরা মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবে পরিণত করতে কাজ করব।

‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করবে। এটি বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক অঞ্চল। বিশ্ব অর্থনীতির ৬০ শতাংশ এবং গত পাঁচ বছরে পুরো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করছে এটি। এই অঞ্চলে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের বসবাস। বিশ্বের অনেক বড় অর্থনীতির দেশের অবস্থানও এখানেই।’

ব্লিনকেন তার বক্তব্যে এই অঞ্চলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির পাঁচটি মূল দিক তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমরা একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিককে এগিয়ে নেব, যেখানে সমস্যাগুলো খোলামেলাভাবে মোকাবিলা করা হবে। নিয়মগুলো স্বচ্ছভাবে সবার কাছে পৌঁছানো হবে এবং তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ হবে। এখানে পণ্য, চিন্তা ও মানুষ স্বাধীনভাবে ভূমি, সাইবারস্পেস এবং উন্মুক্ত সমুদ্র জুড়ে চলাচল করবে। এখানে শাসন ও শাসক নির্বাচিত হবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এবং তা হবে জনগণের প্রতি সংবেদনশীল।’

ব্লিনকেন বলেন, ‘আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে একত্রে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার উপায় খুঁজছি। সাম্প্রতিক সামিট ফর ডেমোক্রেসি এর একটি। এর মধ্য দিয়ে দেশে এবং বিদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য নতুন প্রতিশ্রুতি, সংস্কার ও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷’

‘মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র একটি আন্তর্জাতিক জোট গঠন করেছে যা সেখানে সহিংসতা বন্ধ করতে, অন্যায়ভাবে আটক সবাইকে মুক্তি দিতে, মানবিক সহায়তা বহাল রাখায় বাধাহীন প্রবেশের অনুমতি নিশ্চিত করতে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রে মিয়ানমারকে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে চাপ দেবে।’ যোগ করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটি উন্মুক্ত, আন্তঃপরিচালনযোগ্য, নির্ভরযোগ্য এবং সুরক্ষিত ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিশ্চিত করব। ‌এর মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং চিন্তা বিকাশের ক্ষেত্র উন্মুক্ত হবে- যা এখন এই অঞ্চলের সরকারগুলোর আক্রমণের মুখে রয়েছে; যারা জবাবদিহিতার একটি মাধ্যম হিসাবে ইন্টারনেটের সম্ভাবনাকে সীমিত করার জন্য কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একই সময়ে, আমরা আমাদের মিত্র এবং অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছি যাতে অঞ্চলটিতে সবাই প্রবেশাধিকার পান। আমরা দক্ষিণ চীন সাগরে সমুদ্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি আমাদের গভীর আগ্রহ রয়েছে।’

ব্লিনকেনের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বলা হয়, ‘আমরা এই অঞ্চলের অভ্যন্তরে এবং এর বাইরেও কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করব। আমরা অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের মৈত্রী চুক্তি আরও গভীর করব। এই মিত্রদের মধ্যে বড় ধরনের সহযোগিতা আরও বাড়াবো এবং আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে মিত্রদের একত্রিত করার উপায় খুঁজব-যেমনটি আমরা কোয়াডভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে করেছি।’

‘এই অঞ্চলের সঙ্গে ফেডারেল সরকারের উচ্চ-পর্যায়ের সম্পৃক্ততা যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বব্যাপী ইন্দো-প্যাসিফিকের গুরুত্ব প্রকাশ করে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম যে দুই বিদেশি নেতার সঙ্গে দেখা করেন, তারা হলেন জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তিনি গত মাসে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইডোডোর সঙ্গেও দেখা করেন।

‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থার একাধিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে জুলাইয়ে অ্যাপেক ইনফর্মাল লিডারস রিট্রিট, মার্চ ও সেপ্টেম্বরে কোয়াড লিডারদের অ্যানগেজমেন্ট, অক্টোবরে ইউএস-আসিয়ান সামিট ও ইস্ট এশিয়া সামিট এবং নভেম্বরে অ্যাপেক ইকোনমিক লিডারস সম্মেলন অন্যতম।

‘ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস প্রধান অংশীদারদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে এবং মূল সরবরাহ চেইনের স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করার মতো সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম সফর করেছেন।’

ব্লিনকেন বলেন, ‘আসিয়ান জোট ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতার ভিত্তি। আমরা আসিয়ানের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব জোরদার করতে থাকব। কারণ জরুরি সংকট ও দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন আসিয়ান জোট অপরিহার্য।

‘প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী মাসে ওয়াশিংটনে আয়োজিত একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আসিয়ানের নেতাদের আমন্ত্রণ জানাবেন।

‘আমরা মেকং-ইউএসসহ অন্যান্য আঞ্চলিক অংশীদারের সঙ্গে আমাদের কৌশলগত অংশীদারত্ব ও সম্পর্ক জোরদার করছি। ঠিক যেভাবে আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আমাদের সম্পর্কগুলোকে শক্তিশালী করছি । যেমনটা আমরা ইউরোপের সঙ্গেও করেছি।’

তৃতীয় কারণ সম্পর্কে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এক ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ করেছে এবং আমরা এই অঞ্চলে আরও কিছু করব।

‘প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্দেশে আমরা একটি বিস্তৃত ইন্দো-প্যাসিফিক ইকনোমিক ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছি যার মাধ্যমে বাণিজ্য সুবিধা, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং প্রযুক্তি, স্থিতিস্থাপক সাপ্লাই চেইন, ডিকার্বনাইজেশন ও ক্লিন এনার্জি, অবকাঠামো, কর্মীদের দক্ষতা এবং অন্যান্য বিষয়ে কৌশল বিনিময় করবো।’

ব্লিনকেন বলেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমরা আমাদের মানুষের জন্য সুযোগগুলো উন্মুক্ত করতে এবং শক্তিশালী ডেটা গোপনীয়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বর্ধিত ডিজিটাল অর্থনীতির নিয়ামকগুলোকে আইনের আওতায় আনবো।

‘এই সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সঙ্গে, আমরা এই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ উন্নত করতে একটি নতুন সাবমেরিন ক্যাবল নির্মাণের জন্য ফেডারেটেড স্টেটস অফ মাইক্রোনেশিয়া, কিরিবাতি এবং নাউরু’র সঙ্গে একটি অংশীদারত্ব ঘোষণা করেছি৷’

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সাপ্লাই চেইনকে আরও নিরাপদ ও স্থিতিস্থাপক করতে অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছি। কোভিড মহামারি আমাদের সরবরাহ চেইনগুলোর দুর্বল দিক তুলে ধরেছে এবং মাইক্রো-চিপের ঘাটতিসহ বন্দরগুলোর দুর্বলতা ও ঘাটতি প্রকাশ করেছে।

‘সব সময়, আমরা এই অঞ্চলের জন্য মানসম্পন্ন, উচ্চ মানের পরিকাঠামো সরবরাহ করব। বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড, যা আমরা জুন মাসে জি-৭ অংশীদারদের সঙ্গে চালু করেছি। এ খাতে আগামী বছরগুলোতে শত শত বিলিয়ন ডলারের স্বচ্ছ ও টেকসই বিনিয়োগে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রও এই অঞ্চলে টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাণিজ্যিক কার্যকলাপকে সমর্থন করছে। উদাহরণ স্বরূপ অক্টোবরে ইন্দো-প্যাসিফিক বিজনেস ফোরামের কথা বলা যায়, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত যৌথভাবে আয়োজন করেছিল। এতে ২৩ শ’ ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তা অংশ নেন। সম্মেলনে এই অঞ্চলের ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরিতে ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি মিলেছে।

যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ‘চতুর্থত, আমরা আরও স্থিতিস্থাপক ইন্দো-প্যাসিফিক গড়ে তুলতে সাহায্য করবো। কোভিড-১৯ মহামারি এবং জলবায়ু সংকট এই কাজের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে।

‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী ৩০০ মিলিয়ন ডোজ নিরাপদ ও কার্যকর করোনা প্রতিরোধী টিকা বিতরণ করেছে। আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ১০০ মিলিয়নেরও বেশি ডোজ পাঠিয়েছি। হাসপাতালগুলোর জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা-সরঞ্জাম থেকে চিকিৎসা সামগ্রী, অক্সিজেন পর্যন্ত পাঠিয়েছি। জীবন বাঁচাতে আমরা এই অঞ্চলে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত সহায়তা দিয়েছি।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যেহেতু আমরা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, আমরা পরবর্তী মহামারি প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আরও ভাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি করছি।

‘শুধুমাত্র আসিয়ানে আমরা গত ২০ বছরে জনস্বাস্থ্যে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছি। আমরা যৌথ গবেষণা ত্বরান্বিত করা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি ক্রমবর্ধমান প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দিতে আরও কয়েক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছি৷

‘আমরা পুরো অঞ্চল জুড়ে ক্লিন এনার্জি এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা প্রকল্পে আরও কয়েক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছি, যা যুক্তরাষ্ট্র এবং সমগ্র ইন্দো-প্যাসিফিক উভয় অঞ্চলে পরিষ্কার ও সবুজায়ন প্রকল্পে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।

‘আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা জোরদার করবো। অঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকি বাড়ছে এবং আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবশ্যই পাল্লা দিয়ে বাড়াতে হবে। এটি করার জন্য, আমরা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তির ওপর নির্ভর করব সেটা হচ্ছে আমাদের জোট এবং অংশীদারত্ব।’

ব্লিনকেনকে উদ্বৃত করে বিবৃতিতে বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘সমন্বিত প্রতিরোধ’ কৌশল গ্রহণ করবে যা আমাদের মিত্র এবং অংশীদারদের সঙ্গে আমাদের জাতীয় শক্তির সব উপকরণকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে একত্রিত করবে।

‘অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের উন্নত ত্রিপক্ষীয় অংশীদারত্ব একটি প্রধান উদাহরণ। এটি আমাদের কৌশলগত স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, আন্তর্জাতিক নিয়ম-ভিত্তিক শৃঙ্খলা বজায় রাখবে এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রচার করবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংকে বলেছেন যে আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা যাতে সংঘাতের দিকে না যায় তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা দায়িত্ব ভাগ করে নেব। সেই দায়িত্ব পালনে কূটনীতি আমাদের প্রথম হাতিয়ার হয়ে থাকবে। আমাদের লক্ষ্য হবে এই অঞ্চলে সংঘাতের আশঙ্কাকে কমিয়ে শেষ পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় করা।

‘যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করে যে, বিশ্বের সম্ভাবনা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে লেখা হবে। এই অঞ্চলের প্রতি আমাদের স্থায়ী প্রতিশ্রুতি এবং আমাদের মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা আমাদের সবার জন্য একটি উন্মুক্ত, আন্তঃসংযুক্ত, সমৃদ্ধ, স্থিতিস্থাপক এবং নিরাপদ অঞ্চল অর্জনে সহায়তা করবে।’

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার রদবদল হওয়ার পর থেকেই বেশি কিছু নিতী তারা করেছে পরিবর্তন এবং সংশোধন। বিশেষ করে বিশ্বের শান্তি এবং মানবাধিকার রক্ষায় তারা যথেষ্ট ইতিবাচক সব পদক্ষেপ নিয়েছে ইতিমধ্যে।যার ফলে অনেক নিপীড়নকারী দেশগুলো এখন চিন্তিত হচ্ছে এই সব বিষয় নিয়ে।

গণবিপ্লব এবং একটি সংক্ষিপ্ত আদালত: প্রেক্ষাপট রুমানিয়া

২৫ ডিসেম্বর ১৯৮৯: ছোট্ট একটি সামরিক আদালত বসে রুমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে। সেখানে দু’দিন আগেকার প্রেসিডেন্ট নিকোলাই চসেস্কু এবং তার স্ত্রী এলেনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

পূর্ব ইউরোপের তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক রুমানিয়া, আয়তন ৮২ হাজার বর্গমাইল, লোক সংখ্যা ২ কোটি। ১৯৬৫ সাল থেকে দেশটি শাসন করছিলেন রুমানিয়া কমিউনিস্ট পার্টির নেতা নিকোলাস চসেস্কু (Nicolae Ceauşescu)। তিনি ছিলেন এক নিকৃষ্ট স্বৈরাচার, তার অত্যাচারের মাত্র এতটাই ভয়াবহ ‍ছিল যে, চসেস্কুর পচিশ বছরের শাসনে সিক্রেট পুলিশ বাহিনীর হাতে কয়েক লাখ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়। চসেস্কুর চেয়ে ‍অত্যাচারে এক ডিগ্রি এগিয়ে ছিলেন তার স্ত্রী এলিয়েনা। চসেস্কুর লুটপাটের ফলে অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ে, খাদ্যের জন্য নাগরিকরা দোকানে লম্বা লাইনে থাকত, শীতের দেশ হওয়ার পরেও প্রজারা কোনো হিটার ব্যবহার করতে পারত না। জনগনের প্রতিবাদ বা কথা বলার কোনো অধিকার ছিলো না। সরকারী গোয়েন্দাদের উৎপাতে সভা-সমাবেশ করতে পারত না। বিরোধী শক্তিকে নির্মমভাবে দমন করা হতো, এমনকি হাজার হাজার গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটে।

১৯৮৯ সালের শেষ দিকে চসেস্ক‍ুর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে জনগন। ১৬ ডিসেম্বর বিপুল সংখ্যায় মানুষ রাজপথে নেমে আসে, আর তা দমন করতে পুলিশের পাশাপাশি সেনা ও ট্যাংক নামিয়ে দেয় চসেস্কু। ২০-২১ ডিসেম্বর দু’দিনেই প্রায় দু’হাজার মানুষ নিহত হয়। বুখারেস্টের রেড স্কোয়ারে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে গুলি চালিয়ে, তাদের হটিয়ে দিয়ে, কমিনিউস্ট পার্টির ক্যাডার নামিয়ে পাল্টা জনসভার আয়োজন করে সেখানে ভাষণ দেন চসেস্কু। বিশ্ববাসীকে তাই দেখানো হয়!

কিন্তু না, গল্প এখানে শেষ হয়নি। তখনও গোটা বিশ্ব বুঝতে পারেনি কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। বর্হিবিশ্ব দূরের কথা, চসেস্কু নিজেও বাস্তব অবস্থা বুঝতে সক্ষম হননি। ২১ ডিসেম্বর লাখ লাখ লোক রাজপথ দখল করে নেয়। এ আন্দোলনের প্রধান শক্তি ছিলো টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার। গণআন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে অবস্থা বেগতিক দেখে সেনারাও কেউ কেউ জনতার সাথে হাত মেলায়। এমনকি চসেস্কুর ডিফেন্স মিনিস্টার পক্ষ ত্যাগ করে। মাত্র ১দিন আগে চসেস্কু যে লোকগুলিকে কামান বন্দুকের সাহায্য নিয়ে নিজের সমর্থনে নামিয়েছিলো, এক দিন পরে তারাই ভয়মুক্ত হয়ে চসেস্কুকে ধাওয়া করে। অবস্থা বেগতিক দেখে বুখারেস্টের রাজপ্রাসাদ থেকে হেলিকপ্টারে ঐদিনই পালিয়ে যায় চসেস্কু। কিন্তু রাষ্ট্রীয় জঙ্গিবিমান কয়েক মিনিটের মধ্যেই হেলিকপ্টারটি ইন্টারসেপ্ট করে নামিয়ে আনে চসেস্কুকে। এনেই বসানো হয় তাৎক্ষণিক সেনা আদালত। সামারি ট্রায়ালের পরে চসেস্কু ও তার স্ত্রী এলিয়েনাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়। সাথে সাথে সেনারা বেধে ফেলে চসেস্কু ও এলিয়েনাকে, এবং ভবনের পেছনে নিয়ে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। গণবিপ্লবের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয় রুমানিয়ায়।
– ফেইসবুক থেকে

1 2 3 7