36 July

On August 5, 2024, the 16 years tyrant of Bangladesh Sheikh Hasina government came to end in the wake of the student movement.
I, Md. Shamsul Alam (a Bangladeshi bureaucrat exiled in USA living at New York) had been involving in anti-fascist movement of Bangladesh through online and using social medias Facebook, Twitter, and other means.
I have previously written over on my Facebook wall that after the fake elections in Bangladesh on January 7, 2024, the world’s most influential intelligence agency informed me that “the Hasina regime will ceased by July, 2024.” Earlier, in the mid of 2023, the influential embassy source in Dhaka also indicated about ending of Hasina regime by July 2024.
In the 2nd week of July 2024, dictator Hasina returned to the country after a failed mission in China, and she called a press conference the students “Grand children of Rajakars”, which had angered the students of Dhaka University and students from all around the country. Before that movement, the anti-quota movement had started earlier that month. The target was to bring down the fascist Hasina this July.
But even after the end of July 2024, when Hasina regime did not fall, my God-feeling suddenly sparked me to extend the area of July month. So, I declared on Facebook – “July has been extended until victory – today is the 32nd, tomorrow is the 33rd… in this way, the calendar of liberation will end with victory!” https://www.facebook.com/share/p/193BTC34eG/
That is, July will not end until Hasina falls. To accelerate the movement, a new theory was given that the movement in July, we will throw her in July also. We do not accept in August or later. The day the fall of Hasina occurred, July month ends. Therefore date of Tyrant fall is July 36 (August 5).
This theory also increased the psychological pressure on the July freedom fighters of 2024 no matter how many lives laid, and no matter what happens, Hasina must be brought down. And that was what happened, by bringing back the “March to Dhaka” program from August 6 to August 5. On the same day, millions of people surrounded Ganabhaban (in my language, the Bastille fortress) and according to my calendar fascist Hasina Fall date was- “July 36”. This theory is my patent item.
It’s a historic moment!
Signed by
© Md Shamsul Alam

৩৬ জুলাই: যেভাবে প্রতীকী ক্যালেন্ডার হয়ে উঠল জাতীয় প্রতিরোধের হাতিয়ার

বাংলাদেশে ব্যাপক ছাত্র-আন্দোলন ও দেশব্যাপী গণবিক্ষোভের মধ্যে দিয়ে সোমবার পতন ঘটেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৬ বছরব্যাপী শাসনের। আন্দোলনকারীরা এ দিনটিকে ৫ আগস্ট নয়, বরং প্রতীকীভাবে ঘোষণা করেছেন “জুলাই ৩৬” হিসেবে — একটি মানসিক ও কৌশলগত প্রতিরোধের প্রতীক, যা তাদের আন্দোলনের সময়কালকে সম্প্রসারিত করেছে।

আন্দোলনের সূচনা হয় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। কিন্তু পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র আন্দোলনকারীদের “রাজাকারদের নাতি” বলে উল্লেখ করেন। এই মন্তব্য দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

শামসুল আলমের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ থেকে নেয়া

প্রতিবাদ ক্যালেন্ডারের নতুন সংজ্ঞা:
“জুলাই ৩৬” ধারণাটি প্রথম প্রবর্তন করেন মোঃ শামসুল আলম, বাংলাদেশ সরকারের সিনিয়র আমলা, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে নির্বাসিত অবস্থায় বাংলাদেশের স্বৈরাচার হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। সামাজিক মাঝ‍্যম ব‍্যহবার করে তিনি তার চিন্তাভাবনা, বয়ান, শ্লোগান, নানা পরামর্শ, আন্দোলন পরিচালনার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। সংগ্রামীদের সাথে নিহিড় যোগাযোগে ছিলেন। বিভিন্ন গোয়েন্দা এবং কূটনৈতিক সূত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তিনি প্রচার করেছিলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের মধ‍্যে স্বৈরশাসক হাসিনার পতন ঘটবে।

এরপরে মধ‍্য জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে সরকারী বাহিনীর ও গুন্ডাদের আক্রমনের মুখে শত শত শিক্ষার্থী আহত/ নিহত হতে লাগল প্রতিদিন। আন্দোলনের ছন্দ পতন ঘটলেও আবার ঘুরে দাড়ায়। কিন্তু দেখা যায় জুলাই মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে, অথচ হাসিনা সরকারের পতন না ঘটায়, তিনি ফেসবুকে ঘোষণা দেন: “বিজয়ের আগ পর্যন্ত জুলাই মাস বাড়িয়ে দেয়া হলো। আজ ৩২, আগামীকাল ৩৩… এভাবে মুক্তির ক্যালেন্ডার শেষ হবে যেদিন হাসিনার পতন ঘটবে সেদিন। এই প্রতীকী ক্যালেন্ডার দ্রুত সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। স্লোগান হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে: “হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত জুলাই শেষ হবে না।” আন্দোলনের একটি ঐক্যবদ্ধ বার্তায় রূপ নেয় এই নতুন ক্যালেন্ডার।

গণভবন ঘেরাও:
সোমবার, লক্ষ লক্ষ মানুষ “ঢাকা অভিযাত্রা” কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজধানীতে সমবেত হন, যা মূলত ৬ আগস্টের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি দেখে এটি একদিন এগিয়ে আনা হয়। ৫ আগস্ট আন্দোলনকারীরা ঘেরাও করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন “গণভবন”, যেটিকে আন্দোলনকারীরা “বাংলাদেশের বাস্তিল দুর্গ” হিসেবে উল্লেখ করেন।

ঐদিন ঢাকার বিকেলে সেনাপ্রধান সহ একাধিক সরকারি সূত্র নিশ্চিত করে যে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন। রাজধানী শহরজুড়ে আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে মানুষ। শাহবাগ, টিএসসি এবং মতিঝিল এলাকায় জাতীয় পতাকা ও স্বাধীনতার স্লোগানে মুখরিত হয় রাজপথ।

পূর্বাভাস ছিল আগেই:
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন—যেটিকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্কিত ও প্রহসনমূলক বলা হয়েছিল—তার পর থেকেই সরকারের পতনের পূর্বাভাস আসতে থাকে।
জনাব শামসুল আলম জানান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা ও কূটনৈতিক সূত্র তাকে জানিয়েছিল যে হাসিনা সরকার ২০২৪ সালের জুলাইয়ের পরে আর টিকবে না। “যখন জুলাই পেরিয়ে গেল, আমি আমার আত্মিক অনুভূতিকে বিশ্বাস করলাম এবং জুলাই মাসকে পতন অবধি বাড়িয়ে দিলাম,” নিউ ইয়র্ক থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন আলম।” এই প্রতীকী ঘোষণা আন্দোলনকারীদের জন্য একটি মানসিক রণকৌশলে রূপ নেয়—এবং ইতিহাস তার নিজপথে চললো।”

বাংলাদেশের সামনে নতুন অধ্যায়: শেখ হাসিনা সরকারের পতন বাংলাদেশে আধুনিক রাজনৈতিক ইতিহাসের এক মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অনেকে এটিকে “দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ” বলেও আখ্যা দিচ্ছেন। ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক সমাজ ইতিমধ্যে ‘জুলাই ৩৬‘-কে জাতীয় মুক্তি দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানিয়েছে—যা সাধারণ জনগণের প্রতিরোধের শক্তিকে উদযাপন করবে। বর্তমানে বাংলাদেশ এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক রূপান্তরের সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে নতুন নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নির্ধারণে কাজ শুরু করেছে।

ডিজিএফআই দ্বারা অপহৃত ও প্রহৃত হলেন আওয়ামীলীগের নতুন এমপি আরাফাত!

নির্বাচনে জেতার পরে এমপি আরাফাত একটি গোয়েন্দা সংস্থা কতৃক অপহৃত এবং মারধরের শিকার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের অতিপ্রিয় গবেষক ও প্রধানমন্ত্রী পুত্রের ঘনিষ্ট বন্ধু মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে ঢাকা-১৭ নির্বাচনী এলাকার উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী করেন শেখ হাসিনা। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল বগুড়ার এক সাধারণ যুবক আশরাফুল আলম (হিরো আলম নামে পরিচিত)। নির্বাচন শেষে বেসরকারিভাবে আরাফাতকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

কিন্তু ফলাফল হাতে পাওয়ার পরে আরাফাত দেখতে পান ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তিনি কোনো ভোটই পাননি। এতে বিরক্ত এবং উত্তেজিত হয়ে তিনি ফোনে কাউকে গালিগালাজ করতে থাকেন এবং বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ঘাতক এই আর্মি আমাকে ভোট দিবে কেনো? জননেত্রী এত কিছু দেয়ার পরেও এই দশা! শুয়ারের বাচ্চাদেরকে আমি দেখে নেব।”

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দার নিয়মিত টেলিফোন মনিটরিংয়ে ধরাপড়ে আরাফাতের এই গালিগালাজ। ডিজিএফআই প্রধান মেজর জেনারেল হামিদের নির্দেশে একটি টিম ছুটে যায় আরাফাতের কাছে। সোমবার ১৭ জুলাই মধ্যরাতের পরে আরাফাতকে তুলে এনে কচুক্ষেতের ১৪ তলা ভবনে ঢোকানো হয়। হাত মুখ বেঁধে অন্ধকার ঘরে বেধরক পেটানো হয় তাকে, ইলেকট্রিক শক দিয়ে কথা বের করা হয়। আর্মিকে গালিগালাজ করার কারণে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে ভিকটিম। পরে ডাক্তারটি এনে চিকিৎসা শেষে ভোররাতে তাকে বাড়িতে পৌছে দেয় সংস্থাটি।

আরাফাতকে তুলে নেয়ার পর একটি মাধ্যম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করে। তবে তিনি অপহৃত আরাফাতেকে রক্ষায় কোন চেষ্টাই করেননি। কারণ হিসাবে সূত্র জানায়, সেনাবাহিনীর ক্ষোভ প্রকাশ নিয়ে তিনি দ্বিমত পোষণ করার সাহস করেননি। বলা হয়ে থাকে, ১৯৭৪ সালে মেজর ডালিমের স্ত্রীকে অপহরণের পর তার পিতা প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব সেনাবাহিনীর ক্ষোভের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কয়েক ডজন সেনা অফিসারকে চাকরিচ্যুত করেছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে ঘটে ১৫ আগস্টের ক্রাকডাউন এবং সপরিবারে শেখ মুজিব হত্যাকান্ড।

শাসক দলের তরুণ এমপিকে প্রথম রাতেই পেটানো নিয়ে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন শুরু হয়েছে দেশময়। অনেকেই এটাকে শেখ হাসিনার ক্ষমতা হারানোর আগাম আলামত হিসাবে দেখছেন।

হিরো আলমের ওপর আওয়ামী হামলার পরে হাসিনার চরম বিপর্যয়

১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ নির্বাচনী এলাকায় উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি এখন জমজমাট। আওয়ামীলীগ প্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাতের বিপরীতে চ্যালেঞ্জিং ক্যান্ডিডেট ছিল ‘হিরো আলম’ নামে কথিত বগুড়ার এক যুবক আশরাফুল আলম। দেশে রাজনীতির চরম দুরাবস্থার কারনে এই উপনির্বাচনে মূলধারার কোনো দল অংশ নেয়নি। যার ফলে হিরো আলমকে নিয়ে কিছু লোকের অনাহুত বাড়াবাড়ি, অনেকে আবার রাজনীতির ওপর বিতশ্রদ্ধ হয়ে হিরো আলমকেই ভোট দিবে এমন আওয়াজ করে।

এরই মাঝে ভোটের দিনে যখন সবগুলো সেন্টার প্রায় ভোটার শূণ্য, সময় শেষ হবার আধাঘন্টা আগে বানানীর একটি কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা ’জয়বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমকে বেধকর মারধর করে। কিল, চড়. থাপ্পড়, লাত্থি কিছুিই বাদ রাখেনি। এমনকি সে দৌড়ে পালাচ্ছিল, আবার পেছন থেকে ‍ছুটে গিয়ে হামলাকারীরা ধরে মাটিতে ফেলে মারতে থাকে। কাউকে বলতে শোনা যায়, বেশি মারিস না মরে যাবে।

সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে এই মারধরের ভিডিও দেশের সর্বত্র ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় দেশে-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই হামলার ঘটনায় খোদ জাতিসংঘের প্রতিনিধি বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসও হামলার ওই ঘটনা নিয়ে জানতে চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে দেশটির মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, আশা করি হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করবে বাংলাদেশ। ম্যাথু মিলার বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতার যেকোনো ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে বলব। সেই সঙ্গে যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনবে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করবে বলে আশা করি। আমরা ভোট প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করব।

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) এক টুইটে নিন্দা জানায় সংস্থাটি। টুইটে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘এ ধরনের হামলা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় দেশটির পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের আগে একটি আতঙ্কের বার্তা দিচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই অবিলম্বে এ হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

ফলে, বিশ্লেষকদের ধারণা হচ্ছে, সরকারের শেষ বেলায় এই একটি ঘটনা হাসিনা সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব এমন আর্গুমেন্টকে নাকচ করে দিতে পারে। যাকে বলা যায়, পচা শামুকে পা কাটা।

ইউক্রেনের পটপরিবর্তনের প্রধান নিয়ামক ন্যুল্যান্ড আসছেন ঢাকায়

বাংলাদেশে আসছেন গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন অফিসিয়ালরা। এই প্রথমবারের মত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে ৪ সিনিয়র কূটনীতিক: তিন জন আন্ডার সেক্রেটারি, একজন এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি, এবং এরা সবাই খুব কামেল লোক।

এরা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড,

বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া,

অর্থনীতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি হোজে ডব্লিউ ফার্নান্দেজ, এবং

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

এখানে উল্লেখ্য যুক্তরাষ্ট্রে নামকরণ সবকিছুই একটু উল্টোপাল্টা। বিশ্বে সর্বত্র যখন সরকারে মন্ত্রী থাকে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এই পদটির নাম সেক্রেটারি, যেমন পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে তারা বলে সেক্রেটারি অব স্টেটস। তার অধীনে থাকে দু’জন ডেপুটি সেক্রেটারী, ঠিক তার নিচেই থাকে ছ’জন আন্ডার সেক্রেটারি (ইনারা বাংলাদেশের সচিব পর্যায়ের ব্যক্তি), তার অধীনে থাকে সহকারী সচিব (মানে সহকারী মন্ত্রী)। তো সরকারের ৬ জন আন্ডার সেক্রেটারীর মধ্যে ৩ জনকেই এবার ঢাকায় পাঠাচ্ছে। এর দ্বারা বুঝতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র কী করতে যাচ্ছে।

এরমধ্যে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বিখ্যাত হয়ে আছেন ২০১৪ সালে ইউক্রেনে পটপরিবর্তন সফল করা নিয়ে, এবং ডোনাল্ড লু পাকিস্তানে ইমরান খানের অপসারনের সাথে। দুটো সরকার পতনই এত সিস্টেমেটিক ভাবে করা হয়েছে, যেন মনে হতে পারে, গানিতিক নিয়ম মেনেই তা হয়েছে।

২০১৪ সালের শুরুর দিকে পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে মর্যাদার বিপ্লব বা ‘ময়দান বিপ্লব’ নামে একটি অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়, যাতে বিক্ষোভকারী ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষের পর রুশপন্থি প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হন। ২০১৩ সালের শুরুতে ইউক্রেনীয় পার্লামেন্ট ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যোগদানের জন্য চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য অনুমোদন করেছিল। এটি প্রত্যাখ্যান করতে রাশিয়া প্রবলভাবে চাপ প্রয়োগ করে এবং রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ তাতে সায় দেন। ফলে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পরিবর্তে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক জোরদার করার আকস্মিক সিদ্ধান্ত নিলে তার প্রতিক্রিয়ায় বৃহৎ আকারের গণবিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে। গণবিক্ষোভ প্রবল হতে থাকে যাতে দাবী ওঠে রাশিয়াপন্থী প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ। আজারভ সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার, অলিগার্কিদের প্রভাব, পুলিশি বর্বরতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ হচ্ছিল। সরকার মিটিং মিছিলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তা বিক্ষোভকে আরও উস্কে দেয়। বিরোধী দলগুলি একযোগে সহিংস আন্দোলন শুরু করে, তাদের সাথে যোগ দেয় ৩ জন সাবেক প্রেসিডেন্ট।

প্রায় একমাস ধরে প্রচণ্ড গণআন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। ‘ময়দান বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত প্রতিবাদ শিবির মধ্য কিয়েভের স্বাধীনতা স্কোয়ার দখল করে। বিক্ষোভকারী এবং সরকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ১০৮ জন বিক্ষোভকারী এবং ১৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা মারা যায়, এবং আরও অনেকে আহত হয়। এক পর্যায়ে ঢাল এবং হেলমেট সহ কর্মীদের নেতৃত্বে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সংসদের দিকে অগ্রসর হয় এবং পুলিশ স্নাইপাররা তাদের উপর গুলি চালায়। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাজধানী কিয়েভে অবস্থিত স্বাধীনতা চত্বরসহ পার্লামেন্ট ভবনের সামনে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ চালায়। রাজধানী থেকে আন্দোলন ধীরে ধীরে সারা দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ আর টানা অবরোধের কারণে সরকারি কার্যক্রমসহ নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারি, ইয়ানুকোভিচ এবং সংসদীয় বিরোধী দল অন্তর্বর্তীকালীন ঐক্য সরকার, সাংবিধানিক সংস্কার এবং আগাম নির্বাচনের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ কেন্দ্রীয় কিয়েভ ছেড়ে যায় এবং বিক্ষোভকারীরা নিয়ন্ত্রণ নেয়। এর আগে জনগণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পুলিশ প্রেসিডেন্টের বাসভবনটি ছেড়ে দিলে সেখানে বিরোধীদলীয় বিক্ষোভকারীরা প্রবেশ করে। প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকভিচ সেই সন্ধ্যায় শহর ছেড়ে পালিয়ে যান। যদিও বিক্ষোভের শুরুতেই এটা সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের পতন ঘটে।


যেভাবে ইউক্রেনে পালাবদল ঘটান ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড

২০১৩ সাল থেকে ইউক্রেনে যখন সরকার বিরোধী আন্দোলন চলছিল, তখন সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডকে বসানো হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ইরোপিয়ান এবং ইউরোএশিয়া ডেক্সের সহকারী মন্ত্রী হিসাবে। নতুন দায়িত্ব লাভের পরপরই তিনি সংকট সমাধানে ইউক্রেনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জিওফ্রে পাইটের সাথে ঘনিষ্ট ভাবে কাজ করতে থাকেন। নিয়মিতভাবে আলোচনা ও পরামর্শ দানের পাশাপাশি নুল্যান্ড কিয়ভ সফর করেন কয়েকবার, ঢুকে পড়েন আন্দোলনরত শিবিরে। মূলত নুল্যান্ড ইউক্রেনের ‘মর্যাদার বিপ্লবে’র জন্য নেতৃত্বদানকারী মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যক্তি ছিলেন, যিনি প্রধান কূটনীতিক হিসাবে কাজ করতে গিয়ে ইউরোপীয় মিত্রদের রাশিয়ান সম্প্রসারণবাদের উপর কঠোর লাইন নিতে চাপ দেন। ২০১৪ সালে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণের গ্যারান্টি সহ ইউক্রেনের জন্য ঋণের নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ইউক্রেনীয় সামরিক ও সীমান্ত রক্ষীদের জন্য অ-মারাত্মক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন নুল্যান্ড। তখন সেক্রেটারি অফ স্টেট জন কেরি এবং সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স অ্যাশ কার্টারের সাথে নুল্যান্ডকে ইউক্রেনে প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র সরবরাহের নেতৃস্থানীয় সমর্থক হিসাবে দেখা যায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট মিত্র হওয়া সত্ত্বেও ইউক্রেন সংকটে ইউরোপিয়ান নেতারা নিজ নিজ স্বার্থে বহুধাবিভক্ত ছিল, ফলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের পাশে সমন্বিতভাবে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়, যা নুল্যান্ডকে বিব্রত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টতই আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। ফলে বাধ্য হয়েই নুল্যান্ড জাতিসংঘকে ব্যবহার করেন। এমনকি তিনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের উদ্দেশ্যে “ফাক ইইউ” শব্দটি প্রয়োগ করেন। এই আন্দোলনের শুরু থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার বার বলেছে যে, একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানোর জন্য সঙ্কটের সব পক্ষের সাথে কাজ করছে, কিন্তু বাস্তবে ‘মর্যাদার লড়াইয়ে’ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি প্রধান দলের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রেখে গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়েই দেশটির ভবিষ্যত নির্ধারণ করেন। নুল্যান্ড কিয়েভে এসে বিরোধী তিন নেতার সাথে যেমন বৈঠক করেছেন, পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচের সাথে হেসে হেসে কথা বলেছেন, কিন্তু ঘটনা যা ঘটার প্লান ছিল, সেটাই ঘটেছে। ইউক্রেনের গণতন্ত্রাতিক আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের প্রতি জোরালো সমর্থনের অংশ হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ২০১৪ সালের ৩ মার্চ কিয়েভে যান বিরোধী দলের নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে।
 

কেবল পটপরিবর্তন ঘটিয়েই ক্ষান্ত হননি নুল্যান্ড, ২০১৬ সালে ইউক্রেনকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচার শুরু করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন: “এটি এমন লোকদের আটকে রাখা শুরু করার সময় যারা ইউক্রেনের জনসংখ্যাকে অনেক দিন ধরে ছিঁড়ে ফেলেছে এবং এটি দুর্নীতির ক্যান্সার নির্মূল করার সময়”।

You Might Also Like

২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসাররা কে কোথায়

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি দেশে “এক দলীয় ভোট” বা ”বিনাভোটের নির্বাচন” হিসাবে পরিচিত। ঐ জালিয়াতির নির্বাচনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলে ‘গভীর ত্রুটিপূর্ণ’ নির্বাচন, এবং এটি বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে এর জন্য দায় ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা সহ আরও ব্যবস্থার জন্য বিবেচিত হতে পারে।

ঐ নির্বাচনে বিএনপি সহ সকল বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছিল। কেবল অংশ নিয়েছিল আওয়ামীলীগ এবং জাতীয় পার্টি। এছাড়া সকল বিরোধী দলের সম্মিলিত বিরোধিতার মুখে ঐ নির্বাচনের চেষ্টা চালায় তৎকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন। সবখানে সারাদিন ভোটকেন্দ্রগুলো শূন্য পড়েছিল। কেউ ভোট দিতে আসেনি। বহু ভোটকেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। কোথাও কোথাও দু’চারটা করে ভোট পড়লেও এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল জাল। অথচ ভোটগ্রহণের শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচন কমিশন অভিমুখে ছুটাছুটি ও তৎপরতার পর রাতে লাখ লাখ এবং হাজার হাজার ভোট পড়েছে বলে দেখানো হয়। এতে পুরো প্রহসনটির সামান্যতম বিশ্বাসযোগ্যতাও আর অবশিষ্ট থাকেনি।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, ভোটের আগেই ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামীলীগের নৌকাকে নির্বাচিত ঘোষণা হয়। আর এটা করতে গিয়ে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে চরমতর অপরাধ সংঘটন করা হয়। ঐ ভোটারবিহীন নির্বাচনের শিডিউল অনুযায়ী প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ বিকাল ৫টা পর্যন্ত, নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয় ৮৬টি সিটে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। পরবর্তী তিন দিন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে চাপ, ভীতি, এবং টোপ দিয়ে প্রার্থীতা আরও ৬৮টি আসনের নৌকা বাদে সকল প্রার্থী প্রত্যাহার করা হয়। সমসীমার তিন দিন পরে ১৫ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয় ১৫৪ আসনে একক প্রার্থী। শিডিউল ভাঙার ফলে পুরো নির্বাচন ছিল অবৈধ। ঐ অবৈধ সংসদ সৃষ্ট সরকারও ছিল অবৈধ।

তৎকালীন ৬৪ জেলা প্রশাসক এবং রাজধানীর জন্য ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন ঐ অবৈধ নির্বাচন পরিচালনাকারী রিটার্নিং অফিসার। এদের মধ্যে যারা শিডিউলের পরেও যারা প্রার্থীতা প্রত্যাহারের সাথে জড়িত, তাদের অপরাধ রাষ্ট্র্রদ্রোহ বিবেচিত হতে পারে (অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল বা দখলের চেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহিতা)। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৩ জন সরকারের সচিবের দায়িত্বে এবং ৪ জন বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্বে ও অন্যান্য বিভাগীয় প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আছেন।

২০১৪ সালের কর্মস্থল, নাম ও পরিচিতি বর্তমান কর্মস্থল

—————————— ————-

ঢাকা বিভাগ________

১। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার: মোঃ জিল্লার রহমান (১০১৬)- অবসরপ্রাপ্ত সচিব।

২। ঢাকা জেলা: শেখ ইউসুফ হারুন (৫৩৭২)- সিনিয়র সচিব (অব), নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন (বেজা)।

৩। গাজীপুর জেলা: মোঃ নূরুল ইসলাম (৪১৮৫) – অবসরপ্রাপ্ত সচিব।

৪। নারায়ণগঞ্জ জেলা: মনোজ কান্তি বড়াল (৫২১৮) – যুগ্মসচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় (অবসরে)

৫। নরসিংদী জেলা: ওবায়দুল আজম (৪০৭৩)- অবসরে (অতিরিক্ত সচিব, বানিজ্য মন্ত্রণালয়)

৬। মানিকগঞ্জ জেলা: মোঃ মাসুদ করিম (৫৮২১)- অবসরে (অতিরিক্ত সচিব, শ্রম মন্ত্রণালয়)

৭। মুন্সীগঞ্জ জেলা: মোঃ সাইফুল হাসান বাদল (৫৭৭৭) – অবসরপ্রাপ্ত সচিব।

৮। ফরিদপুর জেলা: আবু হেনা মোর্শেদ জামান (৫৬৩৯) – সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়

৯। শরীয়তপুর জেলা: রাম চন্দ্র দাস (৪১৫৩) – অবসরে (ডিজি, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর – গ্রেড১)

১০। মাদারীপুর জেলা: জিএসএম জাফরউল্লাহ (৫৯৬৬) -বিভাগীয় কমিশনার, রাজশাহী বিভাগ

১১। গোপালগঞ্জ জেলা: মোঃ খলিলুর রহমান (৫৬৪২)- (অবসরে) সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়

১২। রাজবাড়ী জেলা: মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল (৫৮২৪) – সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়

১৩। কিশোরগঞ্জ জেলা: এস এম আলম (৬০৬৭) – অতিরিক্ত সচিব, শিল্প মন্ত্রনালয়

১৪। টাংগাইল জেলা: মোঃ আনিছুর রহমান মিঞা (৫৬৯৬) – অবসরের পর চেয়ারম্যান, রাজউক (চুক্তিতে)

চট্টগ্রাম বিভাগ________

১৫। বি.বাড়িয়া জেলা: ড. মো. মোশারাররফ হোসেন (৬০৯১) – কমিশনার, সিলেট বিভাগ

১৬। কুমিল্লা জেলা: মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া (৪১৪২) – মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

১৭। চাঁদপুর জেলা: মো. ইসমাইল (৫৭১৩) – সচিব, খাদ্য মন্ত্রণালয়

১৮। লক্ষীপুর জেলা: এ. কে. এম. মিজানুর রহমান (৫৪৪২) – (অবসরে) মহাপরিচালক, শ্রম অধিদপ্তর

১৯। ফেনী জেলা: মোঃ হুমায়ুন কবীর খোন্দকার (৫৬০৯) – সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয়

২০। নোয়াখালী জেলা: খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান (৫৪৫৬) – অবসরে (রেজিষ্ট্রার পেটেন্ট এন্ড ডিজাইন)

২১। চট্টগ্রাম জেলা: মো. আবদুল মান্নান (৫৩১১) – সচিব, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় (অবসরে)

২২। কক্সবাজার জেলা: মো. রুহুল আমিন (৫৮২৭) – উপ সচিব (সাসপেন্ড- কারাগারে)

২৩। বান্দরবান জেলা: কে. এম. তারিকুল ইসলাম (৪১৬৪) – (অবসরে) মহাপরিচালক, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো (গ্রেড-১)

২৪। রাঙ্গামাটি জেলা: মোস্তফা কামাল (৫৫২১) – সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়

২৫। খাগড়াছড়ি জেলা: মোঃ মাসুদ করিম (৫৫৫৯) ডিজি, কৃষি বিপনন অধিদপ্তর


সিলেট বিভাগ________

২৬। সিলেট জেলা: মোঃ শহিদুল ইসলাম (৫৫২২) – অতিরিক্ত সচিব (অবসরে)

২৭। মৌলভীবাজার জেলা: মোঃ কামরুল হাসান (৫৭২৭) – সচিব, ত্রান ও দুযোর্গ মন্ত্রণালয়

২৮। সুনামগঞ্জ জেলা: মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী (৪১৩১) – অবসরপ্রাপ্ত সচিব (এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য)

২৯। হবিগঞ্জ জেলা: জয়নাল আবেদীন (৫৭৬৮) – এমডি, ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট

ময়মনসিংহ বিভাগ________

৩০। ময়মনসিংহ জেলা: মো. খলিলুর রহমান (৬০৪৫) – সচিব, ভুমি মন্ত্রণালয়

৩১। নেত্রকোনা জেলা: মো. আবুল কালাম আজাদ (৫৮৪১) – ডিজি, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তর

৩২। শেরপুর জেলা: মোহাম্মদ জাকীর হোসেন (৪২৩৫) – অতিরিক্ত সচিব, জ্বালানী মন্ত্রণালয়

৩৩। জামালপুর জেলা: – মো. শাহাবুদ্দিন খান (৬০৬০) – ওএসডি, অতিরিক্ত সচিব, জনপ্রশাসন

রংপুর বিভাগ________

৩৪। পঞ্চগড় জেলা: অমল কৃষ্ণ মন্ডল (৫৯৯৭) – অতিরিক্ত সচিব, অর্থনেতিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ

৩৫। লালমনিরহাট জেলা: মোঃ হাবিবুর রহমান (৫৮০৬) – অতিরিক্ত সচিব (অবসরে)

৩৬। গাইবান্ধা জেলা: ডা. মো. জহিরুল ইসলাম রোহেল (৫৮৫৮) – ডিজি, মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল

৩৭। ঠাকুরগাঁও জেলা: মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাস (৫৬৫৭) – যুগ্মসচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ

৩৮। কুড়িগ্রাম জেলা: এ বি এম আজাদ (৫৫২৮) – চেয়ারম্যান, বিপিসি (চুক্তিতে)

৩৯। দিনাজপুর জেলা: আহমদ শামীম আল রাজী (৫৭৩১) – অতিরিক্ত সচিব (অবসরে)

৪০। নীলফামারী জেলা: মো. জাকির হোসেন (৬০৪৬) – এমডি, ওয়াসা, রাজশাহী

৪১। রংপুর জেলা: ফরিদ আহাম্মদ (৫৬৮২) – সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ

রাজশাহী বিভাগ________

৪২। নওগাঁ জেলা: মোঃ এনামুল হক (৫৮৪৪) – অতিরিক্ত সচিব (অবসরে)

৪৩। জয়পুরহাট জেলা: মো. ইয়াসিন (৫৭৭০) – অতিরিক্ত সচিব (অবসরে)

৪৪। বগুড়া জেলা: মো. শফিকুর রেজা বিশ্বাস (৫৯০২) – বিভাগীয় কমিশনার, ময়মনসিংহ

৪৫। রাজশাহী জেলা: মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী (৫৪৬৪) – সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

৪৬। নাটোর জেলা: মোঃ জাফর উল্লাহ (৪১৫২) – অতিরিক্ত সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়

৪৭। পাবনা জেলা: কাজী আশরাফ উদ্দিন (৫৬৯৮) – (অবসরে) চেয়ারম্যান, মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন

৪৮। সিরাজগঞ্জ জেলা: মো. বিল্লাল হোসেন (৬০১৫) – অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব

৪৯। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা: সরদার সরাফত আলী (৫৮০৩) – মারা গেছেন


খুলনা বিভাগ________

৫০। সাতক্ষীরা জেলা: নাজমুল আহসান (৫৯৬৩) – সচিব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়

৫১। যশোর জেলা: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (৫৫৭২) – সচিব, জন নিরাপত্তা বিভাগ

৫২। বাগেরহাট জেলা: মু: শুকুর আলী (৫৬৮৬) – যুগ্মসচিব, আইএমইডি

৫৩। খুলনা জেলা: আনিস মাহমুদ (৪১২৮) – চেয়ারম্যান, পাটকল করপোরেশন এবং মেসবাহউদ্দীন (৫৬৮৮) অবসরপ্রাপ্ত সচিব

৫৪। ঝিনাইদহ জেলা: মো. শফিকুল ইসলাম (৫৭৫১) – অতিরিক্ত সচিব (অবসরে)

৫৫। চুয়াডাঙ্গা জেলা: মো. দেলোয়ার হোসাইন (৫৫৪১) – অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়

৫৬। কুষ্টিয়া জেলা: সৈয়দ বেলাল হোসেন (৫৮২৩) – এমডি, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন

৫৭। মেহেরপুর জেলা: মো. মাহমুদ হোসেন (৫৪৮৭) – অতিরিক্ত সচিব, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়

৫৮। নড়াইল জেলা: আ. গফফার খান (৫৫৬৭) – ডিজি, পল্লী উন্নয়ন বোর্ড

৫৯। মাগুরা জেলা: মাসুদ আহ্‌মদ (৪২৪৩) – অতিরিক্ত সচিব (অবসরে)

বরিশাল বিভাগ________

৬০। বরিশাল জেলা: মোঃ শহীদুল আলম (৫৭২৬) – মহাপরিচালক,

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো

৬১। পিরোজপুর জেলা: একেএম শামীমুল হক সিদ্দিকী (৫৯৮৩) – চেয়ারম্যান, ভূমি আপীল বোর্ড

৬২। ভোলা জেলা: মো. সেলিম রেজা (৫৫১৩) – সিইও, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন

৬৩। ঝালকাঠি জেলা: মোঃ শাখাওয়াত হোসেন (৫৫৩৮) – মহাপরিচালক, খাদ্য অধিদপ্তর

৬৪। পটুয়াখালী জেলা: অমিতাভ সরকার (৫৫৯২) – সচিব (অবসরে)

৬৫। বরগুনা জেলা: মোঃ আবদুল ওয়াহাব ভূঞা (৫৬৬৮) – মহাপরিচালক, মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর।

এক নয়া রাজনীতির জন্ম দিলো বরিশাল

এ এক নতুন দৃশ্যপট।

তিন ঘণ্টার সমাবেশ। তিন দিন আগে থেকেই নেতাকর্মীদের অবস্থান। চাল, চুলা সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে একটি সমাবেশের অংশ হওয়ার মরিয়া চেষ্টা। বাসের সঙ্গে তিন চাকার যানও বন্ধ। বন্ধ লঞ্চ, স্পিড বোটসহ সব নৌযান। সড়ক পথের অন্য বিকল্প যানের ওপর কড়া নজর। এত কিছুর পরও গতকাল বরিশালে এক নয়া নজির তৈরি করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে নানা কৌশলে বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করে ঘরে ফিরেছেন তারা। এই সমাবেশ থেকে নয়া এক বার্তাও পৌঁছে গেছে দেশের রাজনীতিতে।

নয়া এক ট্রাম্প কার্ড হাজির হয়েছে রাজনীতির ময়দানে। বরিশালের ঐতিহাসিক বেলস পার্ক সাক্ষী হয়েছে নতুন ধরনের এক রাজনৈতিক কর্মসূচির।

আদতে দৃশ্যপট হওয়ার কথা ছিল এমন। বেলা দুইটায় শুরু হওয়া সমাবেশ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ৫টার মধ্যে। এই সমাবেশে অংশ নিতে হয়তো ওই দিন সকালে বিভিন্ন জেলা থেকে রওনা দিতেন নেতাকর্মীরা। দুপুরে এসে সমাবেশে যোগ দিয়ে বিকালে ফিরে যেতেন যার যার এলাকায়।

কিন্তু বিএনপি’র তিন ঘণ্টার এই সমাবেশ তিন দিনে রূপ নেয় শুধুমাত্র ‘সরকারি’ বাধার কারণে। এই বাধার কারণে মরিয়া মনোভাব তৈরি হয় নেতাকর্মীদের মাঝে। যে করেই হোক সমাবেশে অংশ নেবেন এমন ইচ্ছা নিয়ে দুই বা তিন দিন আগেই ঘর ছাড়েন তারা। হেঁটে, ছোট নৌকা বা ভ্যানে করে তারা ছুটে আসেন জেলা থেকে বিভাগীয় শহরে। অবস্থান নেন বেলস পার্ক। সেখানে দুই রাতও কাটিয়েছেন অনেকে। রান্নাবান্না হয়েছে উদ্যানে। রান্নার উপকরণও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন নেতাকর্মীরা। চুলা, লাকড়ি আনতেও ভুল করেননি। কেউ কেউ দুই দিনের জন্য শুকনা খাবার এবং পানি সঙ্গে নিয়ে হাজির হন।

শনিবার দুপুরে সমাবেশ। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই এক অভূতপূর্ব দৃশ্য ভেসে উঠে বরিশালবাসীর সামনে। দলে দলে আসা লোকজন ঠাঁই নেন খোলা মাঠে। মাথার উপরে সামিয়ানা টানিয়ে কেউ কেউ রাত যাপন করেছেন মাঠেই। কেউ হোটেলে, কেউ লঞ্চঘাটে রাত কাটান। সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার থেকেই কার্যত বরিশাল নগরী বিএনপি নেতাকর্মীদের দখলে চলে যায়। সমাবেশ ঘিরে বন্ধ রাখা হয় অনেক দোকানপাট। শহরের অভ্যন্তরে চলাচল করে এমন ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বৃহস্পতিবার থেকে। তাই দলে দলে বিএনপি নেতাকর্মীরা নগরজুড়ে ছুটে বেড়ান পায়ে হেঁটে। শনিবার ভোর থেকে বেলস পার্কে ঢল নামে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের। একের পর এক আসতে থাকে মিছিল। দুপুরে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকালেই পূর্ণ হয়ে যায় উদ্যান। নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের সড়কে।

বিরোধী দলের সমাবেশে বিঘ্ন ঘটাতে পরিবহন বন্ধ করে দেয়ার খেলা একেবারে নতুন নয়। এর আগেও এমনটি হয়েছে। কিন্তু বরিশালের সমাবেশ ঘিরে এই বাধা ছিল সর্বমুখী। এই সমাবেশে আসতে সীমাহীন বাধা পেরুতে হয়েছে নেতাকর্মীদের।

আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় সমাবেশে অংশ নিতে তাদের বেছে নিতে হয়েছে নানা কৌশল। ভোলা, পটুয়াখালীসহ আশপাশের জেলা থেকে নদী পথে ছোট ছোট নৌকায় করে অনেকে সমাবেশে হাজির হন। ভেঙে ভেঙে হেঁটে, রিকশা, ভ্যানে করে কেউ কেউ বরিশাল পর্যন্ত আসেন। এমন কী নদী সাঁতরেও সমাবেশে অংশ নিতে দেখা গেছে মানুষকে। দুই দিন আগেই সমাবেশ মাঠে অবস্থান নেয়া নেতাকর্মীরা বলছিলেন, সরকার বাধা দেবে এটি পুরনো কৌশল। এই কৌশলকে পরাজিত করে সমাবেশ সফল করতে তারা বিকল্প পরিকল্পনা নেন। এক দিন নয়, দুই দিন আগেই সমাবেশে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বরিশালে এসে খাবার পাওয়া যাবে না, পানি পাওয়া যাবে না এমনটিও ধরে নিয়েছিলেন তারা। তাই ভ্যানে করে চাল, ডাল, তেল, চুলা, লাকড়িও সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। তাই তাদের তেমন বেগ পেতে হয়নি। দুই দিন দুই রাত সমাবেশ মাঠে কাটিয়ে শনিবার নেতাদের বক্তব্য শোনে ফিরে গেছেন নিজ নিজ এলাকায়। মানবজমিনের পক্ষ থেকে মাঠে অবস্থান করা অনেকের কাছে প্রশ্ন ছিল খাবার-দাবারের আয়োজন হলো কীভাবে। নেতাকর্মীরা বলছিলেন নিজেরা চাঁদা তুলে এই আয়োজন করেছেন। অবশ্য স্থানীয় অনেক নেতাকেও কর্মীদের খাবার দাবারের তদারকি করতে দেখা গেছে।

বিএনপি’র সমাবেশ বানচাল করতে সর্বমুখী চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনো চেষ্টাই কাজে আসেনি। বরং দ্বিগুণ মনোবল নিয়ে ছুঠে আসেন নেতাকর্মীরা। বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে বরিশালে পা রাখার পর তাদের অনেকের মধ্যে ছিল রাজ্য জয়ের আনন্দ। রাজনীতির পুরনো কৌশল বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবলের কাছে হার মেনেছে বরিশালে। বড় সমাবেশ করে চাঙ্গা নেতাকর্মীরা।

বরিশালের এই সমাবেশ ঘিরে নানা শঙ্কা ছিল আগে থেকেই। বরিশালের একজন নেতা চাইলে সমাবেশ সাফা হয়ে যাবে- এমন কথাও বলা হচ্ছিল আগে থেকেই। অনেকে ধরে নিয়েছিলেন সমাবেশ ঘিরে সংঘাত হতে পারে। কিন্তু ওই অর্থে তেমন কিছু ঘটেনি। ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে। আরও কিছু জায়গায় হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। এর বাইরে শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে সমাবেশ।

বিএনপি’র বিভাগীয় এই গণসমাবেশ ঘিরে সাধারণ মানুষের কষ্ট আর দুর্ভোগের মাত্রা ছিল সীমাহীন। দুই দিন বিভাগীয় শহর কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জেলার মানুষের তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অতিরিক্ত পেরেশানিতে থাকতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও। অনেক অযৌক্তিক ধাঁচের পরিবহন ধর্মঘটের কারণে কর্মহীন সময় কেটেছে কয়েক হাজার পরিবহন শ্রমিকের।

বেশি বাধা, বড় সমাগম: প্রায় এক যুগ পর বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে বিএনপি। এই সমাবেশ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে জল্পনা-কল্পনার কমতি ছিল না। সমাবেশকে সামনে রেখে এক সপ্তাহ আগে গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণা আসে। ঘোষণা আসে লঞ্চ চলাচল বন্ধেরও। কেমন হবে বরিশালে বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশ। এমন প্রশ্ন ছিল মানুষের মুখে মুখে। ছিল নানা আশঙ্কা। নেতাকর্মীরাও ছিলেন আতঙ্কে। গত কয়েকদিনে বরিশাল নগরীর পরিস্থিতি ছিল থমথমে। অবশেষে নির্ধারিত মহাসমাবেশ করেছে বিএনপি। হাজার হাজার মানুষ সেই সমাবেশে সমবেত হয়েছেন। কানায় কানায় পূর্ণ ছিল সমাবেশস্থল বেলস পার্ক। নগরীর অলিগলিও ছিল নেতাকর্মীদের দখলে। মাঠে জায়গা না পেয়ে সড়কে, ফুটপাথে, লঞ্চ টার্মিনালে, নদীর ধারে, বাসাবাড়ির ছাদে বসে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শুনছেন সমাবেশের উদ্দেশ্যে আসা মানুষ। স্লোগান স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো বরিশাল নগরী।

বিএনপি’র নেতারা ও স্থানীয়রা বলছেন, শনিবার অনুষ্ঠিত বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইতিপূর্বে বরিশালের ইতিহাসে এত বড় সমাগম দেখেনি বরিশালবাসী। সমাবেশ ঘিরে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে বরিশালের বেলস পার্ক ও তার পার্শ্ববতী এলাকা। এমনকি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সামনে বসেও মাইকে বক্তব্য শুনছেন তারা। বিএনপি’র নেতাকর্মীরা বলছেন-চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরের চেয়ে বেশি বাধা পড়েছে বরিশাল সমাবেশে। এজন্যই মানুষ ফুঁসে উঠেছেন। সরকারদলীয় লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা বাধা উপেক্ষা করে তারা বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। পথে বাধা, হামলা ও ধর্মঘট না দিলে এত বড় সমাগম হতো না। সমাবেশে বাধা না আসলে শনিবার একদিনই সমাবেশ হতো। এখন সমাবেশ ৩ দিন হয়েছে।

সমাবেশের উদ্দেশ্যে ট্রলারে ট্রলারে মানুষের ঢল:

গণপরিবহন ও বাস বন্ধ থাকায় বিকল্প উপায়ে নদী পথে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার মানুষ। সমাবেশের ১/২ দিন আগে আসলেও অনেকেই সমাবেশের দিন সকালে ট্রলারে করে বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। গতকাল ভোর থেকেই সারি সারি ট্রলার কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে এসে ভিড়ে। মেঘনা, তেঁতুলিয়া ও সুগন্ধাসহ অসংখ্য নদী ও খাল পেরিয়ে বরিশালে আসেন তারা। এর মধ্যে ভোলা জেলার মনপুরা, চরফ্যাশন, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, ভোলা সদর, তজুমুদ্দিন ও দৌলতখান থেকে কয়েক হাজার ট্রলার আসে কীর্তনখোলায়। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ, মুলাদী, কাজিরহাট, হিজলা, বাবুগঞ্জ, উজিরপুর, বাকেরগঞ্জ, বরগুনার, পাথরঘাটা, আমতলী, তালতলী, বামনা, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, ইন্দুরকানি (জিয়ানগর), কাউখালী, স্বরূপকাঠি, ভাডারিয়া, মঠবাড়িয়া ও নেছারাবাদ; ঝালকাঠি জেলার সদর, রাজাপুর, কাঠালিয়া ও আমুয়া; পটুয়াখালীর সদর, বাউফল, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, দুমকি ও কলাপাড়ার নেতাকর্মীরা মাছ ধরার হাজারো ট্রলার নিয়ে বরিশালে আসেন। সকাল থেকে বরিশাল নগরীর পলাশপুর থেকে ৩০ গোডাউন পর্যন্ত অন্তত ১০ হাজারের অধিক ট্রলার কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে ঘাট করে রাখা হয়। সেখান থেকে কেউ প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে সমাবেশস্থলে মিছিল নিয়ে আসেন তারা। কেউ কেউ ট্রলারে অবস্থান করেন। একই ভাবে সমাবেশে যোগ দিতে বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রলার ও বালুবাহী জাহাজ-বাল্কহেড শুক্রবার মধ্যরাতেও নগরীতে প্রবেশ করেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের।

বরিশালের কাজীর হাট থানার বিদ্যানন্দনপুর ইউনিয়ন থেকে ট্রলারযোগে সমাবেশে এসেছেন রিমন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা হুমকি দিয়েছে, যাতে সমাবেশে না আসি। আওয়ামী লীগের নেতারা যেকোনো মূল্যে আমাদের বাধা দেবে, আসতে দেবে না- এ জন্য ভোর ৪টায় রওনা দিয়েছি। একই ইউনিয়ন থেকে ৭টি ট্রলারে মোট আড়াইশ’ নেতাকর্মী সমাবেশে এসেছে বলে জানান তিনি। মেহেন্দীগঞ্জ থেকে আসা যুবদলের কর্মী মো. উজ্জল বলেন, আমাদের অনেক হুমকি দেয়া হয়েছে, কিন্তু এসব বাধা হুমকি উপেক্ষা করে বিএনপি’র সমাবেশে এসেছি।

কীর্তনখোলা নদীতে রাত্রি যাপন:

এদিকে গণপরিবহন ও যাত্রীবাহী লঞ্চ বন্ধ থাকায় নির্ধারিত দিনের আগেই বরিশালে বিএনপি’র সমাবেশস্থলে আসেন বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ। নদীপথে আসা বেশির ভাগ নেতাকর্মী কীর্তনখোলা নদীতে রাত যাপন করেন। লঞ্চেই সেরেছেন তাদের খাওয়া-দাওয়া ও ঘুম-বিশ্রাম। গতকাল সকালে নগরীর বন্দর ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-ভোলা রুটের ‘এমভি ভোলা’ নামের বিশালাকৃতির লঞ্চে বিএনপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মী অবস্থান করেন। আবুল কালাম নামের একজন বলেন, বরিশালে আসার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এ জন্য ভোলা জেলার বিএনপি’র সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরের লঞ্চ আমরা রিজার্ভ করে এসেছি। প্রায় ৪ হাজার নেতাকর্মী এই লঞ্চে ঠাসাঠাসি করে এসেছে।

কয়েকজন বলেন, লঞ্চ থেকে সমাবেশস্থল খুব কাছে। আগে চলে আসায় আমরা লঞ্চেই রাতযাপন করছি। সমাবেশ শুরু হলে মাঠে আসি। যত কষ্টই হোক, আওয়ামী সরকারকে না হটানো পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন থামবে না।

চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপি’র নেতা কাজী মনজুর হোসেন জানান, তিন দিন আগে থেকেই চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বরিশালে এসে পৌঁছেছেন।

বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশে অংশে নিতে আসা নেতাকর্মীরা সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন। গতকাল সব চেয়ে বেশি হামলা হয়েছে বরিশালের গৌরনদীতে। এদিন সকালে বিএনপি নেতা ইশরাকের গাড়িবহরে হামলা করে সরকারদলীয় বাহিনী। এর কিছুক্ষণ পর গৌরনদীর একই স্থানে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুলের গাড়িবহর ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেত্রী সেলিনা সুলতানা নিশিতাকে বহনকারী গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

গৌরনদী প্রতিনিধি এম আলম জানান, সমাবেশের দিন বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। কয়েক দফায় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। গৌরনদীর মাহিলাড়া বাজারের কাছে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় কয়েকজনকে পুলিশ আটক করেছে। এতে গাড়িবহরে থাকা বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বিএনপি’র নেতারা জানান, ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু ও ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুলের গাড়িতে ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য জাহিদুল ইসলাম রনি। এ হামলা ও বাধার সময় ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজুসহ নেতারা তাদের পেশাগত পরিচয়পত্র দেখানোর পরও দুর্বৃত্তরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাদের মারতে উদ্যত হন। এক পর্যায়ে তারা গাড়িবহর ঘুরিয়ে দেন। এ ছাড়া শামীম রাব্বি সঞ্চয়ের বহনকারী গাড়িতেও হামলা করে দুর্বৃত্তরা। ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেত্রী সেলিনা সুলতানা নিশিতা, রওনক জাহান শাহীন, কোহিনুর ফারজানা আরজুর বহনকারী গাড়িতে দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে স্থানীয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় গাড়িতে থাকা তিন জনই আহত হন। পাশাপাশি অকথ্য ভাষায় তাদের গালিগালাজ করেন হামলাকারীরা। পরে ঢাকার দিকে ফিরে যান তারা।

এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় পটুয়াখালী থেকে বরিশালে বিএনপি’র গণসমাবেশে আসার পথে সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান খানের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা আরও ৫ জন‌ আহত হয়েছেন। জেলার গাবুয়া এলাকা অতিক্রমকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে। জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শিপলু খান বলেন, রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করছে সরকার। শুক্রবার সন্ধ্যার পরে শাহজাহান খান বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে বরিশাল যাওয়ার পথে পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের গাবুয়া এলাকায় অতিক্রমকালে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না-ফখরুল:

মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের সমস্ত অর্জনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে। আজকে ১৪ বছর ধরে এদেশের মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের চরিত্রের মধ্যে দু’টি জিনিস আছে; একটা হচ্ছে চুরি, আরেকটা সন্ত্রাস। সন্ত্রাস করবে আর চুরি করবে। তারা ২০১৪ সালে ভোট চুরি করেছে, ২০১৮ সালে ভোট চুরি করেছে। এখন আবার ভোট চুরির নতুন নির্বাচন দিয়ে কোনো রকমে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের কথা পরিষ্কার- শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।

ফখরুল বলেন, এই বরিশালের যত উন্নয়ন হয়েছে সবই হয়েছে বিএনপি আমলে। বেগম খালেদা জিয়া বরিশালবাসীকে বিভাগ দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন। অথচ এই সরকার দিয়েছে দুর্ভিক্ষ। বাজারে যাওয়া যাচ্ছে না। সব কিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর থেকে আমরা মুক্তি চাই। জাতি মুক্তি চায়। জাতিকে মুক্ত করতে হবে এই আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে। আওয়ামী লীগের আমলে দেশে দুর্ভিক্ষ হয় আর বিএনপি’র আমলে দেশে শুধু উন্নয়ন হয়। তবে বিএনপি’র চলমান আন্দোলন জাতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষার জন্য।

মহাসচিব বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে সরকার খুব ঢাকঢোল পিটিয়েছে। এমন ঢাকঢোল পিটিয়েছে, যেন বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে। সেই বিদ্যুৎ আর নেই। আজকে সকালে আমি যে হোটেলে ছিলাম সেখানে কমপক্ষে ১০ বার বিদ্যুৎ গেল আর এল। এর আগে ৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় ছিল, বিদ্যুৎ গেলে সবাই বলতো এই হাসিনা গেল, বিদ্যুৎ আসলে বলতো এই হাসিনা এল। আজকেও একই অবস্থা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠন করবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আর কোনো বিবাদ নয়, ঝগড়াঝাটি নয়, জাতির প্রয়োজনে সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। এই আন্দোলন শুধু বিএনপি’র নয়, এই আন্দোলন কেবল খালেদা জিয়ার নয়, এই আন্দোলন শুধু তারেক রহমানের জন্য নয়, এই আন্দোলন সমস্ত জাতির, এই আন্দোলন আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছি, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, এটা পরিষ্কার কথা।

আপনাকে (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং সেই কমিশনের অধীনে ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, আমরা মুক্তি চাই, এদেশের মানুষ আর কোনো কথা শুনতে চায় না। ফয়সালা হবে রাজপথে। এই রাজপথে ফায়সালা করে আমরা বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনবো। যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। আজকে নতুন করে আবার সেই বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনার জন্য বলেছে আমাদের নেতা তারেক রহমান।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন, দেননি। বলেছেন ১০ টাকা সের চাল খাওয়াবে, তাও দেয়নি; তাহলে আপনাদেরকে নতুন কী দিয়েছে, দুর্ভিক্ষ। তাছাড়া কী দিয়েছে হামলা-মামলা। এতদিন তারা ঢোল পিটাইলেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে। খালি উন্নয়ন, উন্নয়ন, উন্নয়ন, এই উন্নয়ন ছাড়া কিছুই দেখছে না বাংলাদেশে। এই উন্নয়নে ৪০ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।

বরিশাল মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার পথে পথে বাধা দিয়েছে। এত বাধাবিপত্তি পেরিয়ে জনসমাবেশকে জনসমুদ্রে রূপ দিয়েছেন এই দেশের জনগণ। এটাই প্রমাণ করে বিএনপি’র প্রতি দেশের প্রতি আপনাদের ভালোবাসা কতোটা। এই সরকারকে বিদায় জানাতে হবে ভোটের মাধ্যমে। না হলে দেশের আর কিছু বাকি থাকবে না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি’র সমাবেশের জন্য গাড়ি, লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছে এই সরকার। তারপরেও নেতাকর্মীরা যেভাবে বরিশাল সমাবেশে উপস্থিত হয়েছে, এতে তারা বিপ্লব ঘটিয়েছে। গাড়ি ও লঞ্চ ব্যতীত বরিশালের মানুষ যে সমাবেশ সফল করতে পারে এটা প্রমাণ করেছে। তিনি বলেন, আমাদের শত শত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে, আগামী দিনে আমরা শত শত জীবন দিতে প্রস্তুত রয়েছি। মানুষ খেতে পারছে না, বিদ্যুতের অভাবে অন্ধকারে বাস করছে, গ্যাসের অভাবে রান্না করতে পারছে না, মানুষের ভোটাধিকার নেই, দেশে আইনের শাসন নেই, বাকস্বাধীনতা নেই, ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চলছে।

গণসামবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএন‌পি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, এডভোকেট জয়নুল আবেদিন, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, হাবিবুন নবী খান সোহেল, বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

উৎসঃ মানবজমিন

বেনজিরকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মহা ক্যাচালে হাসিনা

গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের দায়ে মার্কিন স্যাংশনপ্রাপ্ত আইজিপি বেনজিরকে নিয়ে মহা ব্যস্ত হয়ে উঠেছে হাসিনা ও ভারত। তারা মনে করছে, বেনজিরকে যেকোনো ভাবে জাতিসংঘে পাঠাতে পারলে সেটা তাদের একটা বিজয় হবে, এবং ভেঙে পড়া মনোবল জাগাতে পারবে!

এই লক্ষে তারা জাতিসংঘের পুলিশ সম্মেলনে বেনজিরকে পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষে মার্কিন রাষ্টদূতের সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের বৈঠকের পরিণতিও ব্যর্থ হয়েছে। আইজিপি বেনজিরকে ভিসা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।

এ অবস্থায় শেখ হাসিনা সরকার নতুন চালাকির আশ্রয় নিয়েছে। আর তা হলো- সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তার নিজের সফরে আইন ভঙ্গ করে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা দলের অগ্রবর্তী দলের প্রধান হিসাবে বেনজিরকে নমিনেশন দিয়ে তার ভিসা চেয়ে পূণরায় চিঠি পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে এবং স্টেইট ডিপার্টমেন্টে। অথচ দেশের আইন অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব এসএসএফের। তাতে পুলিশ প্রধানকে নেয়ার কোনো সুযোগ নাই। অথচ বিনাভোটের প্রধানমন্ত্রী গো ধরেছেন, বেনজিরকে ভিসা না দিলে তিনি নিজেও জাতিসংঘে যাবেন না। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনকে চ্যালেঞ্জ করতে চাইছে। আর এই শিশসুলভ আবদারে ভারত কূটনৈতিক লবিয়িংয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট, মানবাধিকার বিষয়ক সিনেট কমিটি সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলি বসে নেই, তারা যা করার করছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরাও জয়েন্ট ক্যাম্পেন নিয়ে আগাচ্ছে।

ফের ব্যাংকক মিশন!

আগামী ২৯ আগস্ট থাইল্যান্ডের ব্যাংককের সুকুম্বি এলাকায় আবার সমবেত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্ষমতা প্রত্যাশী ছোট ছোট দলের কিছু রাজনীতিকরা! অবশ্য বিএনপির কিছু কম ঈমানের নেতারাও আছেন এই প্রকৃয়ায়। কয়েক নেতা ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছেন সেখানে!

মার্কিন প্রবাসী মাসুদ করিম ওরফে এনায়েত করিম নামে এক টাউটের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শতাধিক নেতারা ওখানে আমন্ত্রন পেয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, ওখানে নাকি আগামী জাতীয় নির্বাচনের সিট ভাগাভাগি হবে, এবং যারা আগ্রহী তারা যেন প্রত্যেকে ৩ কোটি টাকার জোগাড় করেন, আপাতত ১ কোটি টাকা জমা দিতে হবে!

মুলত, স্বাভাবিক নির্বাচন হলে যারা বড় কোনো দলের নমিনেশন পাবেন না বা নিশ্চিতএমপি হতে পারবেন না, তারাই চাচ্ছে এই মারেফতি ব্যবস্খায় ক্ষমতায় যেতে! ‍দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো রেজা কিবরিয়ার মত লোক (যিনি হাসিনাকে নামিয়ে গদি চান) তিনিও এই তরিকায় বিশ্বাস করে ওখানে যাচ্ছেন। মান্না ভাইও নাকি আছে এতে! গত ২/৩ বছর ধরে রাজধানীতে ৩/৪ দফা রাজপথ দখল করে ক্ষমতা বদলানোর ব্যর্থ চেষ্টার পরে এবারে মাসুদ করিমকে তারা আবারও বিশ্বাস করছেন, তার কারণ নাকি এবারে ডিজিএফআই সরাসরি যুক্ত আছে ক্ষমতা বদলের প্রক্রিয়ার সাথে! ডিজিএফআই তাদেরকে ক্ষমতায় বসাবে- বুঝুন কাণ্ড!

দেশের মানুষ ইতোমধ্যে জেনে গেছে, মাসুদ করিম নামের ঐ প্রবাসী আমেরিকান বাংলাদেশী এর আগেও ব্যাংকক কাঠমান্ডুতে এরকম সম্মেলন আয়োজন করেছিল। তিনি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে নটঘট করলেও মাসুদ আসলে বাংলাদেশের সরকারী গোয়েন্দা সংস্খা ডিজিএফআইর পেইড এজেন্ট। মেজর জেনারেল খালেদ মামুন শেখ হাসিনা সরকারের ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক থাকতে মাসুদ করিমকে রিক্রুট করা হয়। এরপর থেকে মাসুদ করিম সিএইএর পরিচয় দিয়ে বিএনপির ওপরে কাজ শুরু করেন: বিভিন্ন নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের ওপরে প্রভাব বিস্তার করে তাদেরকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হন যে, সিআইএকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে দখলদার হাসিনা সরকারের পতন ঘটাকে সক্ষম হবেন। সিঁড়ি বেয়ে অনেক ওপরে পৌছে যায় মাসুদ, তবে সঠিক হস্তক্ষেপের ফলে সে আটকা পড়ে। সরকার নামানোর কথা বলে মাসুদ প্রায়শই বাংলাদেশী কিছু পলিটিশিয়ানদের নিয়ে দেশে বিদেশে মিটিং করেন। অনেককে টাকা পয়সা ও বিমানের টিকেটও দেন। কিন্তু এর পেছনে যে তিনি তার কয়েক গুণ টাকা সংগ্রহ করেন সে কথাটি থেকে যায় আড়ালে। আমাদের জানা শোনা অনেকের কাছে টাকা চেয়ে ইমেইলও করেছে মাসুদ। ফ্রডবাজি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে আমেরিকায় মামলা হয়েছে তার নামে, তাই সে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। সে এত চালাক যে, তার ছবি কেউ তুলতে পারে না।

মাসুদ করিম কোনো সিআইএর দায়িত্বশীল কেউ নয়, হয়ত কয়টা সাদা চামড়ার সাথে পরিচয় থাকতে পারে। এর উপর ভর করে উন্নত প্রজাতির টাউটারি চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশে! মাঝখানে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এদেশের রাজনীতি ও কিছু হতাশ রাজনীতিক।

নাগরিক টিভির নামে টিটু-সাকিবের ৬ লক্ষ ডলার চাঁদাবাজি!

একটি ভুয়া নাগরিক টিভির নাম ব্যবহার করে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের কাছ থেকে ৬ লাখ ডলার ঘুস নিয়েছে ঐ ভুয়া টিভির সিইও টিটু এবং নির্বাহী সম্পাদক সাকিব। আর এটা ঘটাতে তারা আনভীরের নামে একের পর এক পোস্টার তৈরি করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়। এগুলা থামাতে লাখ লাখ ডলার চাঁদা বা ঘুস লেন দেন হয়।
শুধু তাই নয়, এই পুচকে সাংবাদিক সাকিব বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে অবমাননাকর ঔধ্যত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে। এমনকি তার দাবী, ১/১১র সব লোকেরা নাকি তার লোক ছিল, ব্রিগেডিয়ার বারী দিনে দু’বার ফোন করে তাকে!এছাড়াও, সাকিবের দাবী, আগামীতে যারাই ক্ষমতায় আসবে, তারাও নাকি এই ভুয়া নাগরিক টিভির লোক হবে। নতুন সরকার হলে বসুন্ধরা গ্রুপকে রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে এই ভন্ড সাংবাদিক সাকিব।শেষ বেলায় টিটু রহমান নিজেও সাকিরে ঘুস নেয়ার কন্ট্রাক্টের সাথে একমত পোষণ করে।এখন জনতার প্রশ্ন, লাখ লাখ ডলার ঘুস নেয়া এই ক্রিমিনালগুলি কি সাংবাদিক, নাকি ভন্ড? এদের উপযুক্ত বিচার হওয়া দরকার।
বিস্তারিত লিংকে ৬ কোটি টাকা চাঁদাবাজির ফোনালাপ ফাস|| Elias Hossain|| 15 Minutes – YouTube

1 2 3 9