নির্বাচনে জেতার পরে এমপি আরাফাত একটি গোয়েন্দা সংস্থা কতৃক অপহৃত এবং মারধরের শিকার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের অতিপ্রিয় গবেষক ও প্রধানমন্ত্রী পুত্রের ঘনিষ্ট বন্ধু মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে ঢাকা-১৭ নির্বাচনী এলাকার উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী করেন শেখ হাসিনা। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল বগুড়ার এক সাধারণ যুবক আশরাফুল আলম (হিরো আলম নামে পরিচিত)। নির্বাচন শেষে বেসরকারিভাবে আরাফাতকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
কিন্তু ফলাফল হাতে পাওয়ার পরে আরাফাত দেখতে পান ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তিনি কোনো ভোটই পাননি। এতে বিরক্ত এবং উত্তেজিত হয়ে তিনি ফোনে কাউকে গালিগালাজ করতে থাকেন এবং বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ঘাতক এই আর্মি আমাকে ভোট দিবে কেনো? জননেত্রী এত কিছু দেয়ার পরেও এই দশা! শুয়ারের বাচ্চাদেরকে আমি দেখে নেব।”
প্রতিরক্ষা গোয়েন্দার নিয়মিত টেলিফোন মনিটরিংয়ে ধরাপড়ে আরাফাতের এই গালিগালাজ। ডিজিএফআই প্রধান মেজর জেনারেল হামিদের নির্দেশে একটি টিম ছুটে যায় আরাফাতের কাছে। সোমবার ১৭ জুলাই মধ্যরাতের পরে আরাফাতকে তুলে এনে কচুক্ষেতের ১৪ তলা ভবনে ঢোকানো হয়। হাত মুখ বেঁধে অন্ধকার ঘরে বেধরক পেটানো হয় তাকে, ইলেকট্রিক শক দিয়ে কথা বের করা হয়। আর্মিকে গালিগালাজ করার কারণে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে ভিকটিম। পরে ডাক্তারটি এনে চিকিৎসা শেষে ভোররাতে তাকে বাড়িতে পৌছে দেয় সংস্থাটি।
আরাফাতকে তুলে নেয়ার পর একটি মাধ্যম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করে। তবে তিনি অপহৃত আরাফাতেকে রক্ষায় কোন চেষ্টাই করেননি। কারণ হিসাবে সূত্র জানায়, সেনাবাহিনীর ক্ষোভ প্রকাশ নিয়ে তিনি দ্বিমত পোষণ করার সাহস করেননি। বলা হয়ে থাকে, ১৯৭৪ সালে মেজর ডালিমের স্ত্রীকে অপহরণের পর তার পিতা প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব সেনাবাহিনীর ক্ষোভের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কয়েক ডজন সেনা অফিসারকে চাকরিচ্যুত করেছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে ঘটে ১৫ আগস্টের ক্রাকডাউন এবং সপরিবারে শেখ মুজিব হত্যাকান্ড।
শাসক দলের তরুণ এমপিকে প্রথম রাতেই পেটানো নিয়ে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন শুরু হয়েছে দেশময়। অনেকেই এটাকে শেখ হাসিনার ক্ষমতা হারানোর আগাম আলামত হিসাবে দেখছেন।
১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ নির্বাচনী এলাকায় উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি এখন জমজমাট। আওয়ামীলীগ প্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাতের বিপরীতে চ্যালেঞ্জিং ক্যান্ডিডেট ছিল ‘হিরো আলম’ নামে কথিত বগুড়ার এক যুবক আশরাফুল আলম। দেশে রাজনীতির চরম দুরাবস্থার কারনে এই উপনির্বাচনে মূলধারার কোনো দল অংশ নেয়নি। যার ফলে হিরো আলমকে নিয়ে কিছু লোকের অনাহুত বাড়াবাড়ি, অনেকে আবার রাজনীতির ওপর বিতশ্রদ্ধ হয়ে হিরো আলমকেই ভোট দিবে এমন আওয়াজ করে।
এরই মাঝে ভোটের দিনে যখন সবগুলো সেন্টার প্রায় ভোটার শূণ্য, সময় শেষ হবার আধাঘন্টা আগে বানানীর একটি কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা ’জয়বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমকে বেধকর মারধর করে। কিল, চড়. থাপ্পড়, লাত্থি কিছুিই বাদ রাখেনি। এমনকি সে দৌড়ে পালাচ্ছিল, আবার পেছন থেকে ছুটে গিয়ে হামলাকারীরা ধরে মাটিতে ফেলে মারতে থাকে। কাউকে বলতে শোনা যায়, বেশি মারিস না মরে যাবে।
সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে এই মারধরের ভিডিও দেশের সর্বত্র ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় দেশে-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই হামলার ঘটনায় খোদ জাতিসংঘের প্রতিনিধি বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসও হামলার ওই ঘটনা নিয়ে জানতে চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে দেশটির মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, আশা করি হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করবে বাংলাদেশ। ম্যাথু মিলার বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতার যেকোনো ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে বলব। সেই সঙ্গে যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনবে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করবে বলে আশা করি। আমরা ভোট প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করব।
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) এক টুইটে নিন্দা জানায় সংস্থাটি। টুইটে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘এ ধরনের হামলা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় দেশটির পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের আগে একটি আতঙ্কের বার্তা দিচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই অবিলম্বে এ হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
ফলে, বিশ্লেষকদের ধারণা হচ্ছে, সরকারের শেষ বেলায় এই একটি ঘটনা হাসিনা সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব এমন আর্গুমেন্টকে নাকচ করে দিতে পারে। যাকে বলা যায়, পচা শামুকে পা কাটা।
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি দেশে “এক দলীয় ভোট” বা ”বিনাভোটের নির্বাচন” হিসাবে পরিচিত। ঐ জালিয়াতির নির্বাচনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলে ‘গভীর ত্রুটিপূর্ণ’ নির্বাচন, এবং এটি বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে এর জন্য দায় ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা সহ আরও ব্যবস্থার জন্য বিবেচিত হতে পারে।
ঐ নির্বাচনে বিএনপি সহ সকল বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছিল। কেবল অংশ নিয়েছিল আওয়ামীলীগ এবং জাতীয় পার্টি। এছাড়া সকল বিরোধী দলের সম্মিলিত বিরোধিতার মুখে ঐ নির্বাচনের চেষ্টা চালায় তৎকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন। সবখানে সারাদিন ভোটকেন্দ্রগুলো শূন্য পড়েছিল। কেউ ভোট দিতে আসেনি। বহু ভোটকেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। কোথাও কোথাও দু’চারটা করে ভোট পড়লেও এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল জাল। অথচ ভোটগ্রহণের শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচন কমিশন অভিমুখে ছুটাছুটি ও তৎপরতার পর রাতে লাখ লাখ এবং হাজার হাজার ভোট পড়েছে বলে দেখানো হয়। এতে পুরো প্রহসনটির সামান্যতম বিশ্বাসযোগ্যতাও আর অবশিষ্ট থাকেনি।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, ভোটের আগেই ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামীলীগের নৌকাকে নির্বাচিত ঘোষণা হয়। আর এটা করতে গিয়ে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে চরমতর অপরাধ সংঘটন করা হয়। ঐ ভোটারবিহীন নির্বাচনের শিডিউল অনুযায়ী প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ বিকাল ৫টা পর্যন্ত, নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয় ৮৬টি সিটে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। পরবর্তী তিন দিন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে চাপ, ভীতি, এবং টোপ দিয়ে প্রার্থীতা আরও ৬৮টি আসনের নৌকা বাদে সকল প্রার্থী প্রত্যাহার করা হয়। সমসীমার তিন দিন পরে ১৫ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয় ১৫৪ আসনে একক প্রার্থী। শিডিউল ভাঙার ফলে পুরো নির্বাচন ছিল অবৈধ। ঐ অবৈধ সংসদ সৃষ্ট সরকারও ছিল অবৈধ।
তৎকালীন ৬৪ জেলা প্রশাসক এবং রাজধানীর জন্য ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন ঐ অবৈধ নির্বাচন পরিচালনাকারী রিটার্নিং অফিসার। এদের মধ্যে যারা শিডিউলের পরেও যারা প্রার্থীতা প্রত্যাহারের সাথে জড়িত, তাদের অপরাধ রাষ্ট্র্রদ্রোহ বিবেচিত হতে পারে (অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল বা দখলের চেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহিতা)। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৩ জন সরকারের সচিবের দায়িত্বে এবং ৪ জন বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্বে ও অন্যান্য বিভাগীয় প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আছেন।
২০১৪ সালের কর্মস্থল, নাম ও পরিচিতি বর্তমান কর্মস্থল
—————————— ————-
ঢাকা বিভাগ________
১। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার: মোঃ জিল্লার রহমান (১০১৬)- অবসরপ্রাপ্ত সচিব।
২। ঢাকা জেলা: শেখ ইউসুফ হারুন (৫৩৭২)- সিনিয়র সচিব (অব), নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন (বেজা)।
৩। গাজীপুর জেলা: মোঃ নূরুল ইসলাম (৪১৮৫) – অবসরপ্রাপ্ত সচিব।
বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের সাধারন নির্বাচন আয়োজন নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে জোরালো অভিন্ন স্বার্থ দেখতে পেয়ে যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কথাই ভাবছে।
পাশ্চাত্যের সাথে মোটামুটিভাবে ইতিবাচক সহযোগিতা রক্ষাকারী উদার মুসলিম জনসাধারণ-সংবলিত বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের। অবশ্য এই সম্পর্ক এতটা ঘনিষ্ঠ নয় যা ওয়াশিংটনকে ব্যাপক সুবিধা দেবে।
শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে অবিশ্বাস্যভাবে ২৮৮টিতে জয়ী হয়েছে। আর বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া (তিনি কয়েক দশক ধরে তার তিক্ত শত্রু হিসেবে রয়েছেন) যেসব অভিযোগে কারাবন্দি রয়েছেন, বিরোধীরা বলছেন সেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অন্যদিকে সংবাদপত্র নতুন বিধিনিষেধে নিয়ন্ত্রিত।
নির্বাচনের আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর উদ্বেগ প্রকাশ করে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের রাশ টেনে ধরার অভিযোগ করে অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিল।
নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেখ হাসিনার সাফল্য কামনা করে একটি চিঠি দিলেও তিনি মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করার প্রতি প্রতিশ্রুতি নতুন করে ব্যক্ত করার অনুরোধ করেন বলে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ইসলামপন্থীদের প্রতি তীব্র বৈরী শেখ হাসিনা জামায়াতে ইসলামীর ওপর প্রবল দমন অভিযান পরিচালনা করেছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার অভিযোগে দলটির ৫ নেতার ফাঁসি পর্যন্ত কার্যকর করেছেন।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিয়ে সঙ্কটটিকে আরো বড় আঞ্চলিক মাত্রায় নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রেখে তিনি ওয়াশিংটনের প্রশংসা অর্জন করেছেন। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত নৃশংসতাকে জাতি নির্মূল বলে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
উইড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলার্সের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র এসোসিয়েট মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, বাংলাদেশ কার্যত একদলীয় স্বৈরতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়েছে। তবে এই দেশটির কার্যকারিতা অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মানানসই।
তিনি বলেন, মূল কথা হলো, শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্র দরকারি অংশীদার মনে করে। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খুবই কঠোর, তিনি বেশ লক্ষণীয় মাত্রায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছেন।
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র নেতা খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে, ছবি: এএফপি
তিনি বলেন, আমি মনে করি এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র তাকে একজন সমর্থক বিবেচনা করে এবং বাংলাদেশের খুবই গোলযোগপূর্ণ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী মনে করে। তবে বাংলাদেশ সরকার নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সেইসাথে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের উদ্বেগকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেনি।
সমালোচনার সীমিত সুযোগ
উন্মুক্ত, যুক্তরাষ্ট্র-বান্ধব ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য বাস্তবায়নে দেশটির সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার মতো উচ্চ পর্যায়ের অবকাঠামো চুক্তিও করেনি চীনের সাথে।
বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হচ্ছে আঞ্চলিক শক্তি ও উদীয়মান মার্কিন মিত্র ভারত। দেশটি শেখ হাসিনার কট্টর সমর্থক। ফলে বিকল্প থেকে থাকলেও ওয়াশিংটনের সামনে অন্য কিছু করার সুযোগ খুব কম। তবে বিরোধী দল আশা করছে, মার্কিন সমালোচনা ফল দেবে।
“বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে”- মার্কিন পররাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির কড়া চিঠি। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কারচুপির নির্বাচন মার্কিন স্বার্থের পরিপন্থি, এবং ঐ নির্বাচনে জালিয়াতি, অবৈধভাবে ভোট ডাকাতি, এবং ভোটারদের হয়রানির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানিয়েছেন। এ বছর এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে কারনে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত রাখার তৎপরতা বাংলাদেশ দিয়েই শুরু করতে হবে। চিঠিতে বলা হয়, ৩০ ডিসেম্বরের জালিয়াতির নির্বাচনে ভয়াবহ সন্ত্রাস, গণগ্রেফতার, এবং বাকস্বাধীনতাকে দাবিয়ে রাখা হয়। নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ৯৬% বিজয়ের দাবী করে , যা ২০১৪ সালের বয়কটের নির্বাচনে অর্ধেকের বেশী আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের বিজয়ের চেয়েও অধিক দেখানো হয়েছে!
Full text: Dear Mr. Secretary: We are gravely concerned by the negative trajectory of democracy in Bangladesh and request an outline of how the Department intends to respond to this trend, particularly in light of serious allegations that the outcome of the December 2018 elections lacked credibility. As you know, supporting democracy, rule of law, and human rights in the Indo-Pacific region is critical to advancing U.S. interests, and reports of widespread irregularities in Bangladesh’s recent elections seriously threaten those important interests. Bangladesh has a strong and proud democratic tradition, so we were particularly dismayed that the campaign leading up to the election was marred by violence, mass arrests, and a crackdown on free speech. The Awami League claimed 96 percent of the seats contested — more than the party and its allies won in 2014, when a key opposition party boycotted the general election and the Awami League ran unopposed in more than half of the seats contested. Although the government-appointed election commission has claimed the election was legitimate, we believe the allegations of widespread rigging and voter suppression must be taken seriously. According to press accounts, when polls across the country officially opened, reporters found that some ballot boxes looked suspiciously full. There are reports that Awami League activists barred some people from voting, claiming that the polling stations were closed for lunch or had run out of ballots. Some voters were even told their votes had already been cast. To make matters worse, the Government of Bangladesh failed to grant credentials and issue visas to most international election monitors, including those funded by the United States. There will be a series of elections taking place this year in Asia, including in Afghanistan, Indonesia, the Philippines, and Thailand. It is crucial that the United States demonstrate its continued commitment to and respect for democratic institutions, beginning with Bangladesh. Thank you for your attention to this matter. We look forward to your timely response.
Representative Michael T. McCaul (R-TX), the House Foreign Affairs Committee Lead Republican; Representative Eliot L. Engel (D-NY), Chairman of the Committee; Rep. Brad Sherman (D-CA), the Chairman of the Asia and Pacific Subcommittee; Rep. Ted Yoho (R-FL), the Ranking Member of the Asia and Pacific Subcommittee; Rep. Andy Levin (D-MI); and Rep. Ann Wagner (R-MO) CONTACT: HFAC GOP Press (McCaul): Caroline CampbellHFAC Press (Engel): (202) 226-9103Sherman: (202) 423-7302Yoho: Brian KaveneyLevin: (202) 603-0933Wagner: Arthur Bryant
জাতীয় ঐক্য গড়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আহ্বান জানিয়ে আসা বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রধানমন্ত্রীর ঐক্যের ডাককে প্রত্যাখ্যান করেছে। সেই সঙ্গে নাকচ করেছে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেওয়ার আহ্বানকে।
জোটের তিনজন শীর্ষ নেতা শর্ত বেঁধে দিয়ে বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন বাতিল করে জাতীয় সংলাপ হলে তারা এই আহ্বান নিয়ে ভেবে দেখবেন।
গতকাল সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দেশকে এগিয়ে নিতে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাৎক্ষণিকভাবে ঐক্যফ্রন্টের তিনজন নেতা প্রতিক্রিয়া জানান ঢাকা টাইমসের কাছে।
মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচিত ঐক্যফ্রন্টের নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যের বক্তব্য আমরা বহুবার দিয়েছি। তবে আপনি যদি আমার ব্যক্তিগত মত জানতে চান, তবে আমি বলব অপেক্ষা করুন। সময়মতো সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন।’
ঐক্যফ্রন্টের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, ‘শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক সংলাপ ও সমঝোতা হলেই কেবল জাতীয় ঐক্য হতে পারে। নইলে নয়।’
প্রধানমন্ত্রী ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে জেতা ঐক্যফ্রন্টের আটজন নেতাকে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘তাদের সংখ্যা কম হলেও তাদের বক্তব্যের গভীরতা মূল্যায়ন করা হবে। সংখ্যা দিয়ে আমরা তাদের বিবেচনা করব না। সংখ্যা যত কমই হোক, সংসদে যেকোনো সদস্যের ন্যায্য ও যৌক্তিক প্রস্তাব/আলোচনা/সমালোচনার যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে।’
এ প্রসঙ্গে আবদুল মালেক রতন বলেন, ‘আমরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে কেউ যদি নির্বাচিত হয়েও থাকে, তাদের শপথ নেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। এটার মধ্য তাদের বৈধতা দেওয়া হবে, তা করার যৌক্তিকতা দেখি না।’
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শপথ নিতে বলেছেন, সেটা ওনার (প্রধানমন্ত্রী) বক্তব্য। আমরা সংসদে শপথ নেব কি না তা এ মুহূর্তে বলছি না। এখানে জনগণ কী করবে, তারা মেনে নেবে কি না, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আপাতত তার (প্রধানমন্ত্রীর) বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা না-ই বলছি।’
যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন মর্মে সরকারি তরফে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। স্বয়ং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের নিকট চিঠির কপি বিলাচ্ছেন। বাংলাদেশের সরকার নিয়ন্ত্রিত বেশিরভাগ মিডিয়া হৈ হুল্লোড় তরে প্রেসিডেন্ট ট্রম্পের চিঠি প্রদানের খবর প্রকাশ করেছে। শুক্রবার কয়েকটি মাধ্যম থেকে হোয়াইট হাউস ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কয়েকদফা যোগাযোগ করেও ট্রাম্পের উক্তর চিঠির সত্যতা মিলেনি।
‘শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন’- একটি সংবাদ বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে সে বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিতে জানতে চাওয়া হলে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নয়েল ক্লে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউএসআইডি’র পরিচালক মার্ক গ্রিনের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকের অবস্থানের কথা তোলে ধরে বিবৃতির কপি পূনরায় প্রেরণ করেন এবং এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া অনুসরণের পরামর্শ দেন।
চিঠির বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে পূনরায় জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের দেয়া যে কোনো চিঠির বিষয়ে হোয়াইট হাউসে খোঁজ নিতে হবে।’
ট্রাম্পের চিঠি পাঠানো প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসের প্রেস অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা চিঠির বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে যে চিঠিটি নিয়ে সংবাদ তৈরি করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে এটি চলতি মাসের ১৮ তারিখে ইস্যু করা। ফলে পুরো বিষয়টি নিয়ে একরকমের ধুম্রজাল ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া চিঠিটিতে প্রচুর ভুল বানান, গ্রামার সমস্যা, এমনকি বার্মা শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে দেশটি মিয়ানমার নামে পরিচিত। এতসব ভুলভ্রান্তি এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও হোয়াইট হাউজের সত্যায়নের অভাবে পরিস্কার হয়ে গেছে- কথিত চিঠিটি বানোয়াট।
উল্লেখ্য, মার্ক গ্রিন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুলের সঙ্গে করা বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগে পুর্নব্যক্ত করেছিলেন। নির্বাচনে কারচুপি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, নির্যাতন ও সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট দেশটির হাতে রয়েছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্র সচিবের সাথে বৈঠকে মার্ক গ্রিনের উদ্বেগ
‘নির্বাচনে ভয়ভীতি প্রদর্শন, নির্যাতন ও অনিয়মের বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে’
বাংলাদেশে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে কারচুপি, ভয়প্রদর্শন এবং সহিংসতার যেসব কর্মকান্ড ঘটেছে তার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে। আর নির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ পুর্নব্যক্ত করা হয়েছে। ওয়াশিংটন সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হকের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কথা আবারো স্পষ্ট করে জানান দিলেন ইউএসএআইডি’র পরিচালক মার্ক গ্রিন।
বৈঠকে নির্বাচন ছাড়াও উঠে আসে রোহিঙ্গা, জুলহাস মান্নান হত্যাকান্ডসহ দ্বি-পাক্ষিক অংশীদারিত্বের অন্যান্য বিষয়গুলো। বৈঠকের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র টম ব্যাবিংটন বিবৃতির প্রকাশ করেন।
সদ্য সমাপ্ত সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে যেসব কারচুপির ঘটনাগুলো ঘটেছে, হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতা হয়েছে সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সে উদ্বেগের বিষয়টি জানান দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের এক সময়কার প্রভাবশালী সদস্য মার্ক গ্রিন।
ইউএসএইডের কর্মকর্তা জুলহাস মান্নানের বিচার নিশ্চিতের তাগাদা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে মার্ক গ্রিন তিন বছর আগে ঢাকায় নির্মমভাবে নিহত ইউএসএইডের কর্মকর্তা জুলহাস মান্নানের হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের তাগিদ ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, নাগরিক বান্ধব সরকার, সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নিশ্চিতের বিষয়ে বৈঠকে গুরুত্ব আরোপ করেন মার্ক গ্রিন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল না, বরং নির্বাচনের আগে ব্যলটবাক্স পূর্ণ করা হয়েছিল, তাই নতুন করে নির্বাচন প্রয়োজন, এভাবেই পর্যবেক্ষণে যুক্ত হয়ে অনুতপ্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন নামের একটি পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান ও তাদের একজন বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী। নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও তারা সন্দেহ পোষণ করেন। গত ৩০ ডিসম্বের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, নির্বাচনের আগের রাতে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ব্যালট বাক্স ভরে রেখেছেন এবং ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন। ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ও ভোটারদের কাছ থেকে নির্বাচনের এমন বিবরণ শোনার পর তার কাছে এখন মনে হচ্ছে, নতুন করে নির্বাচন হওয়ার দরকার।
সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি ৭৫ বছর বয়সী আব্দুস সালাম বলেন, এখন আমি সবকিছু জানতে পেরেছি এবং বলতে দ্বিধা নেই, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। ফাউন্ডেশনের হয়ে কাজ করা এক কানাডীয় পর্যবেক্ষক বলেন, তার কাছে এখন মনে হচ্ছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অংশ না নিলেই বোধ হয় ভালো হতো।
নির্বাচন চলাকালীন অনিয়মনের জন্য ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। পশ্চিমা দেশগুলোর বড় বড় ব্রান্ডের তৈরি পোশাকের গুরুত্বপূর্ণ রফতানিকারক হচ্ছে বাংলাদেশ। গার্মেন্ট পণ্য রফতানিতে চীনের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশটি।
গত সপ্তাহে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ৫০ আসনে জরিপ চালিয়ে ৪৭টিতেই অনিয়ম দেখতে পেয়েছে তারা। এতে বিশেষ করে জাল ভোট, জোর করে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরা, ভোটকেন্দ্রে বিরোধী দলীয় এজেন্ট ও ভোটারদের ঢুকতে বাধা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি জানায়, তাদের জরিপ করা সব এলাকাগুলোতে নির্বাচনী প্রচারে কেবল ক্ষমতাসীন দলটিই সক্রিয় ছিল। কখনো কখনো স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারি সম্পদের সহায়তা নেয়া হয়েছে।
বিশ্বাসযোগ্যতার অভাবের কথা বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তদন্ত নাকোচ করে দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সংস্থাটিকে বিরোধী দল বিএনপির ‘পতুল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আওয়ামী লীগ ও দলটির জোট সদস্যরা ৯৫ শতাংশ আসন নিশ্চিত করার পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। তখন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ভোট জালিয়াতি ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগের তদন্তের দাবি জানিয়েছে আসছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় সময়সীমার মধ্যে ভিসা ইস্যু না করায় ভোট পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে মার্কিন তহবিলের বেশকিছু পর্যবেক্ষক। ভিসা বিলম্বের অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, তারা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে।
কানাডা, ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকা থেকে পর্যবেক্ষক এনেছিল সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন। নির্বাচনের দিন ও তার পরে সুন্দর পরিভাষা ব্যবহার করে নির্বাচনের স্বচ্ছতার কথা বলেছে সংস্থাটি।
নির্বাচনের বিজয় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর নতুন বছরের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের বাসভবনে একটি সাদা রঙের গদিতে বসে সাংবাদিক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সামনে বক্তৃতা দেন।
তখন তিনি বলেন, নারী ও তরুণ প্রজন্মসহ সাধারণ মানুষ খুবই আগ্রহের সঙ্গে ভোট দিয়েছেন। আপনারা আমাদের দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার মাধ্যমে গণতন্ত্র কীভাবে কাজ করে তা প্রদর্শনের একটা ভালো সুযোগ দিয়েছেন।
মাইক্রোফোন যখন কক্ষের ভেতর ঘুরছিল, অন্যদের সঙ্গে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনে বিজয়ের জন্য শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সৌদিভিত্তিক সংস্থা ইসলামিক কো-অপারেশনের পর্যবেক্ষকরাও তখন উপস্থিত ছিলেন। ফাউন্ডেশনের একজন প্রতিনিধি কানাডীয় নারী টানইয়া ফস্টার সবার আগে কথা বলেন। তিনি নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক ও সুষ্ঠু বলে উল্লেখ করেন। ফস্টার বলেন, আমি মনে করছি, বাংলাদেশে কানাডার মতোই নির্বাচন হয়েছে।
যদিও ফাউন্ডেশনের নামের প্রথমাংশ ও লোগো দেখতে দক্ষিণ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো-অপারেশেনের (সার্ক) মতো, তবে এ দুটির মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব আবেদ আলী রয়টার্সকে বলেন, সার্কের কাছে অনুমোদন পেতে তারা আবেদন করেছেন। দ্রুতই তারা অনুমোদন পাবেন বলে আশা করছেন।
সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা কমিটিতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দুজন সংসদ সদস্যও রয়েছেন। প্যানেলে বিএনপি আমলের এক মন্ত্রীরও নাম দেখা যায়। তবে এতে বর্তমান বিরোধীদলীয় কোনো সদস্য নেই। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে এমন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিতে বাংলাদেশের আইনে বারণ আছে।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, আবেদ আলীর গ্রুপের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তার জানা ছিল না। ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য হিসেবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সদস্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে আবেদ আলী বলেন, তারা কেবল আমাদের মানবিক কার্যক্রমে সহায়তা করছেন। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।
রাজধানী ঢাকার মিরপুরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে ভবনের নিচতলায় ধুলোয় ঢাকা দুটি কক্ষে ফাউন্ডেশনের মূল কার্যালয়। সংস্থাটির সভাপতি আব্দুল সালাম বলেন, তাদের পর্যবেক্ষকরা মাত্র কয়েকটি নির্বাচন কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছেন। কাজেই এতে নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে, তা পরিষ্কারভাবে মূল্যায়ন করা যায় না। তিনি বলেন, কয়েকজন প্রিসাইডিং অফিসার তাকে বলেছেন- ব্যালট বাক্স ভরতে তাদের বাধ্য করা হয়েছে। আব্দুস সালাম বলেন, আমি সত্য বলতে চাই। কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ পেতে আমি এসব বলছি না।
কানাডার সাচকাচাওয়ান প্রাদেশিক সরকারের নীতি বিশ্লেষক টানইয়া ফস্টার বলেন, কানাডায় বসবাস করা বাংলাদেশিদের কাছ থেকে তিনি শুনতে পেয়েছেন যে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন বিদেশি পর্যবেক্ষক খুঁজছে। এটাকে একটা মজার অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচনা করে আমি পর্যবেক্ষক হওয়ার যোগ্যতা জানতে চেয়েছি।
তিনি বলেন, আমি মানবাধিকার ফাউন্ডেশন ও নির্বাচন কমিশনে আবেদন করলাম। তারা আমাকে পরীক্ষা করল এবং একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে। তার মেয়ে ক্লয় ফস্টারও পর্যবেক্ষক প্যানেলে ছিল। এর আগে কোনো জাতীয় নির্বাচনে তারা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করেননি। তবে ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা ও সার্কের সঙ্গে যে এটির কোনো সম্পর্ক নেই, সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানতেন না।
তিনি বলেন, এটাকে মহান কিছু মনে হয়নি আমার। খুব সাধাসিধা মনে হয়েছে। আমাদের প্রতিবেদন যে খুবই মূল্য বহন করছে- সে সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। আমরা ৯টি ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি। সবগুলোই ঢাকায় ছিল।
খুবই বৈরী এলাকায় না যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের নিরীক্ষা কিংবা প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং এজেন্টদের অতীত পরীক্ষা করিনি। আবেদ আলী বলেন, ওই নারীর কানাডায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কোনো সংস্থার পক্ষেই সব নির্বাচন কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না।
বাংলাদেশে আবার জাতীয় সরকার নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এবার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত।
জানা গেছে, ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচনে ভারতের উপর নির্ভর করতে পারেনি হাসিনা। তাই চীনের দ্বারস্থ হয়ে তাদের কাছে নির্বাচনের খর্চা বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকার ফান্ড এনেছে এবং এই টাকা দিয়েই পুলিশ ও গুরুত্বপূর্ণ লোকদের মাথা কিনে নির্বাচন পার করেছে হাসিনা। তবে বিপদ অন্যখানে- এমন ভাবে সব সিট ও ভোট কেটে নেয়া হয়েছে, যা দেশে বিদেশে কারও কাছে বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। আর তাই দেশে বিদেশে কথা উঠেছে আরেকটি নির্বাচন করতে হবে, যা হবে সুষ্ঠু।
নির্বাচনের আগে থেকেই আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকটি প্রতিনিধি দল ভারত ঘুরে এসেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির নিশ্চয়তা হাসিল করতে পারেনি। এমনকি নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার মাস খানেক আগে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের কথা থাকলেও মোদির ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ায় শেখ হাসিনা সফর বাতিল করেন। এর বিপরীতে সৌদি আরবে সফরের মধ্যে চীনের সাথে গুরুত্বপূর্ন আলোচনা ও সমঝোতা সেরে ফেলেন হাসিনা। বিষয়টি ভারতের জানা থাকলেও তারা ততটা বিপদ মনে করে নি তখন।
তবে বিপদের বহিঃপ্রকাশ ঘটে বাংলাদেশের নির্বাচনের দিন রাতে, অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বর। ভোট ডাকাতি ও কারচুপির প্রতিবাদে প্রায় সকল বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কটের মুখে ফলাফল ঘোষণা হতে থাকলে দিল্লি থেকে নরেন্দ্র মোদি ফোন করে শেখ হাসিনাকে বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানান। এর তিন ঘন্টা পরে চীনের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট উভয়ে শেখ হাসিনার কাছে অভিনন্দন বার্তা পাঠান। এরপরে সোমবার সকালেই নৌকা, ফুল, এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের পত্র নিয়ে গণভবনে পৌছে যান চীনের রাষ্ট্রদূত! ভারত এই প্রথম লক্ষ করে- এ যে রীতিমত বাড়বাড়ি। সন্দিগ্ন হয়ে ওঠেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্বষর্ধন শ্রিংলা।
পরবর্তী ৩/৪ দিনে সরকার গঠনের প্রকৃয়া চলতে থাকে। ভারতীয় হাইকমিশনার আ’লীগের বিভিন্ন কর্নারে যোগাযোগ করে হতাশা বাড়তে থাকে। ৬ জানুয়ারী নতুন কেবিনেট ঘোষণা করা হলে নয়াদিল্লি আকাশ থেকে জমিনে নয়, সোজা ভূতলে পড়ে! পুরোনো কেবিনেটের ৩৬ জন সদস্য আউট। ডজনখানেক সিনিয়র মন্ত্রী বাদ পড়ে, এতকাল যাদের মাধ্যমে দিল্লির স্বার্থ উদ্ধার হতো, এদের কেউ নাই। হাইকমিশনার শ্রিংলার কাছে অনেকেই ধর্ণা দেন। কিন্তু তিনি আ’লীগের হাইকমান্ডে যোগাযোগ করে প্রচন্ড ধাক্কা খান। তাকে বলা হয়েছে চুপ থাকতে। কে মন্ত্রী হবেন, কি হবেন না, তা আ’লীগের নিজস্ব বিষয়; এবং শেখ হাসিনা নিজেই দেখছেন। এ নিয়ে কোনো দেশের পরামর্শের দরকার নাই। প্রমাদ গুনেন শ্রিংলা!
ধীরে ধীরে দিল্লি বুঝতে পারে, শেখ হাসিনা বিক্রি হয়ে গেছে। চীন তাকে কিনে নিয়েছে অতি উচ্চমূল্যে। তবে ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। পরের দিন ৭ জানুয়ারী বঙ্গভবনে সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলেন হাইকমিশনার শ্রিংলা। অন্যদিকে বঙ্গভবনে সদলবলে উপস্থিত হন চীনা রাষ্ট্রদূত জ্যাং জু। শপথের পরেই তিনি দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে, এবং টেলিফোনে কথা বলিয়ে দেন চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সাথে। খবরে বলা হয়, চতুর্থবারের মতো ও টানা তৃতীয়বার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী।
জানা গেছে, নির্বাচনের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম বিদেশ সফরে যাবেন ভারতে নয়, যাবেন চীন।
সবকিছু পূর্নমূল্যায়ন করতে থাকে ভারত। হাইকমিশনার শ্রিংলা বিস্তারিত লিখে জানান তার হেডকোয়ার্টার্সে। কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত সহ অন্যান্য বন্ধু রাষ্ট্রের কূটনীতিকদের সাথে।
এরি মধ্যে নির্বাচন বর্জন করা দলগুলো অভিযোগের পাহাড় তৈরি করে তা জানাতে থাকে সর্বত্র। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে আ’লীগের ভোট জালিয়তি ও কারচুপির খবর। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য সহ সকল পশ্চিমা রাষ্ট্র বাংলাদেশের কারচুপিময় নির্বাচন নিয়ে একের পর এক আপত্তি তুলতে থাকে। বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত দাবী করে। বিব্রত হয় নতুন সরকার।
লক্ষনীয়, ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনার চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেয়ার পরে পরম মিত্র প্রতিবেশী ভারত থেকে কোনো অভিনন্দন বার্তা আসেনি। বরং এসেছে চীন এবং তাদের মিত্রদের থেকে। বিষয়টা একেবারেই হেলাফেলার মত নয়। বাংলাদেশ নিয়ে চীনের অগ্রসরতা দেখে ভারত বসে থাকবে না। তারা অবশ্যই তাদের নিজেদের নিরাপত্তায় যা প্রয়োজন, তাই করবে।
বাংলাদেশের স্বীকৃতিহীন কারচুপিময় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের নানাবিধ তৎপরতার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন মহলে হঠাৎ কথা উঠেছে- আচিরেই জাতীয় সরকার আসছে। আর তারা থাকবে ৩/৪ বছর। দেশের সবকিছু ঠিক করে নির্বাচন দিবে তারা।
৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে ব্যাপক অনিয়ম-কারচুপি হয়েছে বলে বিরোধীদের এমন অভিযোগে আন্তর্জাতিকভাবে বড় ধরনের চাপের মুখে রয়েছে সরকার। আর এ কারণেই সরকারের ভেরতে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে বলে জানা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, নির্বাচনের পর দেশের প্রধান বিরোধী শক্তি ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি পৃথকভাবে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে লিখিতভাবে ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়েছে।
পৃথক চিঠিতে তারা, নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে ব্যাপক অনিয়ম-কারচুপির মাধ্যমে সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার হরণের চিত্র তুলে ধরেছেন।
এছাড়া নির্বাচনের পর ৬ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর হোটেল আমারি-তে বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ওই বৈঠকে নির্বাচন সম্পর্কে নিজেদের মূল্যায়ন, অভিজ্ঞতা এবং অভিযোগের খুটিনাটি তুলে ধরেন নেতারা। ওই বৈঠকে পশ্চিমা কূটনীতিকরাও কোনো কোনো বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
কূটনীতিক সূত্রগুলো এমন পরিস্থিতিতে ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে নিজ নিজ দেশের সরকারকে বার্তা পাঠিয়েছে। তাতে নির্বাচনে অস্বচ্ছতা ও জনমতের প্রতিফলন হয়নি বলেই জানানো হয়েছে।
এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সহিংসতার ঘটনায় হতাহত হওয়া, বলপ্রয়োগসহ আচরণবিধি লঙ্ঘণের অভিযোগ উত্থাপনের ফলে নির্বাচন ও তার ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ লঙ্ঘনের যে সব অভিযোগ গণমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে সংস্থাটি।
এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগসহ নির্বাচনী আচরণবিধির বহুমুখী লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগের কারণে নির্বাচন ও তার ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের ওপর ভিত্তি করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই সব পক্ষের জন্য সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে এসেছি। কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী জোটের প্রার্থী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা, হামলা ও নির্যাতনের সংবাদ প্রচারিত হয়েছে, যা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। এমনকি নির্বাচনের আগের রাতে এবং নির্বাচনের দিনও এমন হয়রানি চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে বড় আশংকার বিষয় হলো, এতে করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি দেশের জনগণের আস্থাহীনতা সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ড. জামান বলেন, একটি জোটের পোলিং এজেন্টরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রে আসতে না পারার অভিযোগের বিষয়টি যেভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন তা একদিকে যেমন বিব্রতকর, অন্যদিকে তার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন তার সাংবিধানিক দায়িত্ব কার্যকরভাবে পালন করতে পেরেছে কিনা সে উদ্বেগ আরো ঘনীভূত করেছে।
ড. জামান বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ লঙ্ঘন করে মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির নামে ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে খোদ রাজধানীতেই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে যেভাবে সচিত্র প্রতিবেদন আকারে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে তাকে অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়াও ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই ব্যালট পেপার ভর্তি বাক্স নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া, বহু ভোটার ভোট দেওয়ার আগেই ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া, প্রার্থীকে ভোট কেন্দ্রে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা ইত্যাদি ঘটনার প্রতিটির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করে টিআইবি।
ড. জামান বলছেন, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক তদন্ত করে এসব ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতা নিরূপণ করা এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা অপরিহার্য। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে আস্থার সংকটের প্রেক্ষিতে কমিশনের গৃহিত পদক্ষেপের পাশাপাশি সরকারের প্রতি আমাদের জোরালো আহ্বান থাকবে, এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ নিন।
যে অভূতপূর্ব নির্বাচনের মাধ্যমে সৃষ্ট অভূতপূর্ব ফলাফলের উপর ভিত্তি করে নতুন সরকার গঠিত হচ্ছে তার আত্মবিশ্বাস, মর্যাদা, আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করার স্বার্থেই এই তদন্ত অবশ্যকরণীয় বলে মন্তব্য করেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক।
এতে বিশ্বের প্রভাবশালী সংস্থা ও রাষ্ট্রগুলোও বিষয়টি বেশ শক্তভাবেই আমলে নিয়েছে। ফলে এর প্রভাবও কিছুটা দৃশ্যমান হয়েছে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের কথাবার্তার সেটার কিছুটা প্রমাণ মিলছে। ১১ জানুয়ারী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশ স্বীকৃতি দিলেও ঐক্যফ্রন্ট নানা অজুহাত তুলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চৌধুরী।
তিনি আরো বলেন, ঐক্যফ্রন্ট যতই ষড়যন্ত্র করুক তা জনগণ মেনে নেবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের বিজয় এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র চলছে। কাজেই আমাদেরকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে ভারত, রাশিয়া ও চীনসহ গুটি কয়েকটি রাষ্ট্র নবগঠিত সরকারকে অভিনন্দন জানালেও ইউরোপ-আমেরিকা বিপরীত অবস্থানে রয়েছে।
যার ফলে বিপুল বিজয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও চরম অস্বস্তিতে রয়েছে সরকার। এ নিয়ে সরকারে চরম অস্বস্থি বিরাজ করছে। তবে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকার তৎপরতা শুরু করেছে বলে জানা যাচ্ছে।
এরই অংশ হিসেবে রাজনৈতিক আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। ২২ জানুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড হ্যালের সঙ্গে তার বৈঠক হবে।
সাম্প্রতিক জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রোহিঙ্গা ইস্যু, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে মূলত এই আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগে পররাষ্ট্র সচিব অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্সের (ওআইসি) সিনিয়র অফিসিয়াল মিটিংয়ে অংশ নেওয়ার জন্য সৌদি আরব যাবেন।
সরকারের একজন কর্মকতা বলেন, ‘নতুন সরকার গঠন হয়ে গেছে এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্রসহ সব অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলবো।’গত ২ জানুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সঙ্গে সফরের বিষয়ে আলোচনা করেন পররাষ্ট্র সচিব।
এদিকে সহিংসতা আর ব্যাপক কারচুপির কারণে ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ্ট নয় কেউই। সরকার নিয়ন্ত্রিত এ নির্বাচনে দেশে এবং দেশের বাইরে সমালোচনা আর নিন্দার ঝড় বইছে। কারচুপির অভিযোগের স্বচ্ছ তদন্ত এবং সব পক্ষকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের তাগাদা দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে মুখে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যাপক প্রচার করলেও এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে পশ্চিমাবিশ্ব।
সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ এবং কারচুপির সুষ্ঠু তদন্তের তাগাদা দিয়ে ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ।
বাংলাদেশ নির্বাচন ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে কড়া বার্তা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
নির্বাচন নিয়ে সরকারকে ‘স্বাগত’ না জানিয়ে তারা বরং অনিয়ম, কারচুপি এবং সহিংসতার ঘটনাগুলো বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করার আহবান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে গণতন্ত্রের সংকট সমাধানে সবপক্ষকে এক হয়ে পন্থা খুঁজে বের করার তাগাদাও উঠে এসেছে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার দেশ এবং সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে।
নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাবিশ্ব শক্ত ভাষায় তাদের যে মূল্যায়ন এবং অবস্থান তোলে ধরেছেন তাতে নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে বেকায়দায় পড়তে পারেন শেখ হাসিনা সরকার। বুধবার যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যম রয়টার্স তাদের এক প্রতিবদনে এমন অভিমত তোলে ধরেছে।
‘ওয়েস্টার্ণ পাওয়ার কলস ফর প্রোব ইনটু বাংলাদেশ ইলেকশন ইরেগুলারিটিস, ভায়োলেন্স’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে পশ্চিমাবিশ্ব। যে নির্বাচনে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন জোট ৯০ শতাংশের বেশী আসনে জয়ী হয়েছে সে ভোটে সংগঠিত কারচুপির অভিযোগগুলো নিয়েও সবিস্তারে কথা বলেছে পশ্চিমাদেশগুলো।
নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাবিশ্ব কড়া ভাষায় তাদের যে মূল্যায়ন তোলে ধরেছেন সেটি শেখ হাসিনার ভাবমূর্তির ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাপক কারচুপি আর ভোটারদের আতংকিত করে নির্বাচন করা হয়েছে অভিযোগ এনে এর ফলাফল প্রত্যাখান করেছে শেখ হাসিনার বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল। তবে অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন শেখ হাসিনা। তার ভাষ্যমতে ভোট ছিলো শান্তিপূর্ণ, আর তাতে উৎসব মুখর পরিবেশে অংশ নিয়েছেন তার সমর্থকরা।
দেশে চলমান পরিস্থিতির দিকে ইংগিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবারের ঢাকার পরিস্থিতিটা ছিলো চুপচাপ। তবে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি বলছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলার শিকার হচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তবে আওয়ামী লীগ এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদরে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছে, নির্বাচনের দিনে ব্যাপক সহিংসতা ঘটেছে, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াজুড়ে ছিলো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ঘাটতি। এসকল প্রতিবন্ধকতার কারণেই নির্বাচনের প্রচার এবং ভোটদান প্রক্রিয়া কলুষিত হয়েছে।”
নির্বাচনে অনুষ্ঠিত কারচুপির অভিযোগসমূহের একটি যথার্থ তদন্ত করার আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিদেশে বাংলাদেশের সবচাইতে বড় বিনিয়োগকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রও এ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে দেশটি জানিয়েছে, হয়রানি, ভীতিকর পরিস্থিতি এবং সহিংস কর্মকান্ডের জন্যই নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে বিরোধী দলের প্রার্থী এবং সমর্থকেরা স্বাধীনভাবে তাদের সভা-সমাবেশ করতে পারেনি, কোনো প্রচারণা চালাতে পারেনি। এঘটনাগুলোর স্বপক্ষে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে, আর তাতে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র।
ভোটে বাধা দেবার বিষয়টিতে অসন্তোষ জানিয়ে দেশটি বলেছে, ভোটের দিনে সংগঠিত অনিয়মগুলোর কারণে অনেক ভোটার ভোট দিতে পারেননি। এ বিষয়টিতে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।কারচুপির এসব বিষয় নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
পশ্চিমা বিশ্বের এ ধরনের বক্তব্যে সরকারকে কিছুটা শঙ্কিতও করেছে বটে। কেননা, পশ্চিমাবিশ্বকে এড়িয়ে চলার মতো সক্ষমতা এখনো বাংলাদেশের হয়নি। তথা গ্লোবাল ভিলেজের যুগে বিশ্বের প্রভাবশালী একটা বড় অংশকে এড়িয়ে চলা কোনো দেশের জন্য শুভকর নয়। কেননা, শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্ক নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদবিরোধী উদ্যোগে রয়েছে বাংলাদেশের।
ফলে এ মুহূর্তে পশ্চিমা বিশ্বের মান-অভিমান ও অভিযোগকে এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই সরকারের। ফলে নিয়ে সরকার অনেটাই অস্বস্থিতে ভুগছে।
আর এ অস্বস্থি আরো বাড়িয়ে দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের গঠনমূলক রাজনীতি, বক্তব্য ও বিবৃতি। এবারের নির্বাচনের আগে-পরের ঐক্যফ্রন্টের ভূমিকা ছিল খুবই ইতিবাচক। তারা অন্যদের উস্কে দেয়া কোনো সহিংস পথে না গিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।
৬ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর হোটেল আমারি-তে বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পর কূটনীতিকদের সাথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। এই বৈঠকে নির্বাচন সম্পর্কে নিজেদের মূল্যায়ন, অভিজ্ঞতা এবং অভিযোগের খুটিনাটি তুলে ধরা হয়েছে।
ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমরা তাদের কাছে নির্বাচনের কিছু ডকুমেন্ট দিয়েছে যে নির্বাচনের আগের দিন ও পরের দিন কী হয়েছে। সেই সঙ্গে ডকুমেন্ট অনুসারে আমরা তাদের একটা পেনড্রাইভ দিয়েছি, যাতে তারা দেখতে পারেন নির্বাচনের আগের এবং পরের দিন কী হয়েছিল।
কামাল হোসেন বৈঠকের ব্যাপারেে আরো বলেন, ‘যারা এসেছিল তারা বন্ধুরাষ্ট্রের। তারা আমাদের বন্ধু, জনগণের বন্ধু এবং সরকারেরও বন্ধু। আমরা নির্বাচনের অনিয়মের বিষয়গুলো তাদের কাছে তুলে ধরেছি। তারা এ নিয়ে কোনো বিতর্ক করেনি। আমরা যা দেখেছি, তারাও তাই দেখেছে। তারা আমাদের কথা শুনেছেন এবং বলেছেন—গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত থাক তারাও সেটা চান। তারাও চান এদেশের মানুষ স্বস্তিতে, শান্তিতে থাক।’
একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভালো হয়নি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের এমন অভিযোগের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেননি ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা। যা হবার হয়ে গেছে, এখন একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। সরকারকে চাপ দিয়ে নয়, যুক্তি দিয়ে বোঝাক তারা’।
বিরোধীদের এসব অভিযোগ আর পশ্চিমাবিশ্বের ভূমিকাসহ সবমিলেই সরকারের এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। এ অবস্থা থেকে বের হতে সরকারের কূটনীতিক পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পশ্চিমাবিশ্বের প্রভাবশালী টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সরকার নতুন কোনো উদ্যোগ গ্রহণের ব্যাপারটিও ভাবছে।
অবশ্য নির্বাচনের পরের দিন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ বিষয়ে বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভোটে কোনো কারচুপি হয়নি। কেউই যদি প্রমাণ করতে পারে কারচুপি হয়েছে। তাহলে পুনরায় ভোট হতে তো আমাদের আপত্তি নেই।’
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept”, you consent to the use of ALL the cookies.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.