অন্তবর্তীকালীন সরকার ধংসের নীলনকশা বাস্তবায়নে হাসিনার গোলামরা

সচিবালয় প্রতিবেদক

বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার টিকে থাকার একমাত্র উদাহরণ বাংলাদেশ। লাখ লাখ মামলা দিয়ে বছরের পর বছর বিরোধীদের বন্দী রেখে স্বৈরাচারকে টিকিয়ে রাখা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা সহ সকল মূল এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছিল বিচার বিভাগ। হাসিনার দুটি গোলামকে দিয়ে এইসকল এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। অধঃস্তন আদালত ধংস করেছে গোলাম সারোয়ার, উচ্চ আদালত ধংস করেছে গোলাম রাব্বানী। এই দুইজন হাসিনার আরও অনেক গোলাম তৈরি করেছে। গোলাম সারোয়ার ওএসডি হলেও গোলাম রাব্বানী পুরোদমে বাস্তবায়ন করে চলছে হাসিনার এজেন্ডা। অন্তর্বতীকালীন সরকারকে ধংস করে হাসিনাকে ক্ষমতায় ফেরাতে সকল চেষ্টা করছে হাসিনার গোলাম ও তাদের সহযোগীরা। তাদের কয়েকজন:

১। বিশ্বনাথ মন্ডলঃ

ফ্যাসিস্ট হাসিনার গাড়ী বহরে হামলার অভিযোগে সাজানো মামলায় বিএনপির সাবেক এমপি হাবীবসহ ৪ জনকে ফরমাইয়েশী যাবজ্জীবন রায় প্রদানকারী বিচারক বর্তমান নওগাঁর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বনাথ মন্ডল প্রধান বিচারপতির অভিবাসন অনুষ্ঠনে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রতিনিধি হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। ঐ মামলায় তিনি আইনজীবীদেরও সাজা দিয়েছেন। বিচার বিভাগ ধংসে হাসিনার হাতিয়ার এসব বিচারকেরা চাকুরি করছে কিভাবে এটাই বিশ্বনাথ! এই ধরনের কাজের মাধ্যমে নিরপেক্ষতার একটা মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে হয়তো !

২। বেগম মাহমুদা খাতুনঃ

মাননীয় প্রধান বিচারপতির আয়োজিত অনুষ্ঠানে অধস্তন আদালতে দুইজন বিতর্কিত বিচারককে দিয়ে বক্তব্য প্রদান করায় আওয়ামী নিয়ন্ত্রিত সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন যার একজন বিশ্বনাথ মন্ডল অপরজন খুলনার বর্তমান জেলা ও দায়রা জজ বেগম মাহমুদা খাতুন। হাসিনার সাবেক এপিএস ও এমপি সাইফুজ্জামান শিখরের ঘরের লোক এই মাহমুদা খাতুন। তার অপকর্মের ফিরিস্তি দিলে তাকে নিয়েই অনেক পৃষ্ঠা ভরে যাবে।

৩। গোলাম রাব্বানী, আইন সচিব।
তার চাকরি মেয়াদ শেষ হচ্ছে অক্টোবরের ১০ তারিখে, তার আগেই চলছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের দৌড়ঝাপ। হঠাৎ কোনো দুর্বল সময়ে যদি সই করিয়ে আনা যায়। এর মেন্টর হয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল!

বিচার বিভাগে শেখ হাসিনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও ছোটভাইর বন্ধু গোলাম রাব্বানী। বিচার বিভাগের প্রত্যক্ষ সহায়তায় স্বৈরাচার কায়েম করতে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল খায়রুল হককে এবং তা বাস্তবয়নে আপীল বিভাগের রেজিস্ট্রার বানানো হয় গোলাম রাব্বানীকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় লিখে দিয়েছেলেন গোলাম রাব্বানী।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে গোলাম রাব্বানীর পৈত্রিক বাসা হওয়ায় শেখ জামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ফুটবল খেলার সাথী ছিল রাব্বানী। হাসিনার সাথে রাব্বানীর পারিবারিক সম্পর্ক পাশের বাসার বড়বোন ও বন্ধুর বোন হিসাবে ছোটবেলা থেকে। বিগত ১৫ বছর বিচার বিভাগের আওয়ামী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাব্বানী মুজিব পরিবার প্রসঙ্গে টেনে বারবার চোখের পানি ফেলেছে, নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন শেখ হাসিনার ভাইয়ের বন্ধু হিসাবে। রাব্বানী, হাসিনার এতোই স্নেহধন্য যে ২৪ সালে হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ইন্ডিয়া সফরে মোদির সাথে দেখা করাতে সঙ্গে নিয়ে যায় তার এই ভাই রাব্বানীকে। হাইকোর্ট বিচারপতি বানাতে হাসিনা এই রাব্বানীকে এক মাসের জন্য চট্টগ্রামের জেলা জজ বানায়। এর মাঝে সরকার পতন হয়ে গেলে গুরুত্বপূর্ণ আইন মন্ত্রনালয়ের সচিব হিসাবে হুট করে ঢুকে পরে হাসিনার ভাই পরিচয়দানকারী রাব্বানী।

২০০৯ সালে ঢাকার অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে রাব্বানী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী নেতাদের দুর্নীতিসহ সকল মামলাগুলো বেকসুর খালাসের ব্যবস্থা করেন। পুরস্কার হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনে পরিচালক হয় রাব্বানী ও তার সহায়তায় হাসিনা সহ আওয়ামীলীগ নেতাদের দূর্নীতির সকল মামলা শেষ করে দেয়। এর বিপরীতে তারেক রহমান, জোবাইদা রহমান সহ বিএনপির নেতাদের নামে মিথ্যা বানোয়াট দূর্নীতির অভিযোগ তৈরি করে, আদালতকে চাপ দিয়ে রায় দেয়ানো সব কাজে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে রাব্বানী। সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রীর বাসায় তারেক রহমানকে সাজা দেয়ার জন্য দফায় দফায় মিটিং করে রাব্বানীগং।

সততার লেবাসের আড়ালে ঠান্ডা মাথার দূর্নীতিবাজ গোলাম রাব্বানী। দুদকের বাজেটে লুটপাট দূর্নীতি সব হয় রাব্বানী হাত ধরে। এর পুরস্কার হিসাবে রাব্বানীকে পাঠানো হয় সুপ্রিম কোর্ট ধংসে হাসিনার মিশন বাস্তবায়নে। আদালতকে আওয়ামীলীগের আঁখড়া বানায় রাব্বানী গং। এসকে সিনহাকে দেশ ছাড়া করানো, সুপ্রীম কোর্টে পুলিশ ঢুকিয়ে আইনজীবীদেরকে পিটানো- কোথায় নেই রাব্বানীর অপকর্মের ছাপ। অপকর্ম আড়াল করে রাব্বানী আইন সচিবের দায়িত্ব নেয় অনিয়মতান্ত্রিকভাবে। বদলী বানিজ্য পুরোদমে করছে গোলাম রাব্বানী। ঘুসখোর, ছাত্রলীগের পদধারীকে আইন মন্ত্রনালয়ে ঢুকানোর চেষ্টা করে প্রতিরোধর মূখে ব্যর্থ হয়েছে। এখন চেষ্টা করছে হাসিনার মিলিটারি সেক্রেটারী সাবেক মেজর জেনারেল জয়নুল আবেদিন এর আপন ভাতিজাকে আইন মন্ত্রনালয়ে পদায়ন করার। এরা আইন মন্ত্রনালয়ে ঢুকতে পারলে কোন ফাইলের সিক্রেসি থাকবে না। সরকার অচিরেই বেকায়দায় পরবে। গোলাম রাব্বানী বিকল্প মাধ্যমে হাসিনার সাথে গোপন যোগাযোগ রক্ষা করছেন এবং সরকারকে বিপদে ফেলার গোপন মিশন চালাচ্ছে। রাব্বানী অপরাধগুলোর তদন্ত করে বিচার করা হলে তার বাকী জীবন জেলেই কাটাতে হবে।

৪। মুন্সি মশিয়ার রহমানঃ

সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান রেজিস্ট্রার জনাব মুন্সি মশিউর রহমান। ৮ আগষ্ট বিচারপতিদের ফুল কোর্ট মিটিং সমন্বয় করে জুডিশিয়াল ক্যু করার চেষ্টার অন্যতম কারিগর। নারায়ণগঞ্জ সহ বিভিন্ন জেলায় মশিয়ার আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবয়ান করেছে। তার বড় অংকের ঘুস দূর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করা হলে যথাযথ তথ্য ও ডকুমেন্টস সরবরাহ করা যাবে।

চরম বৈষম্য ও হাসিনার আখড়া আইন মন্ত্রনালয়। ৭ জন ছাত্রলীগারকে সম্প্রতি জেলাজজ পদে বসিয়েছে হাসিনার ভাইয়ের বন্ধু তথা স্বৈরাচারী হাসিনার ভাই বর্তমানর আইন সচিব রাব্বানী। বিচার বিভাগ তথা আইন মন্ত্রনালয়ের বেআইনি কর্মকান্ড আর পুলিশ দিয়ে হ্মমতায় টিকে ছিল স্বৈরাচারী হাসিনা। ছাত্র জনতা হত্যা ও গুলিবর্ষনের অপরাধী পুলিশ মারপিটের শিকার হলেও বিচারক পদ ব্যবহার করা অপরাধীরা বহাল তবিয়তে আছেন। ৩ কোটি টাকা ডলারে ঘুস নেয়া বিচারক, তৌফিকা করিমকে কোটি টাকা দিয়ে চেয়ার কিনে নেয়া ও মাসে মাসে টাকা দেয়া বিচারক দিব্বি চাকুরি করছে। বহাল আছে দীপুমনির চাচাতো ভাই কুমিল্লার জেলাজজ মোস্তাক আহমেদ। ওএসডি হয়েও চাকুরীতে সাবেক আইন সচিব গোলাম সারোয়ার যিনি হাজার হাজার কোট কোটি টাকা ঘুষ দূনীতি অবৈধ নিয়োগের হোতা আনিছুল হকের ক্যাশিয়ার ছিল, যিনি আন্দোলনের শেষ বেলায় ডিবি হারুনকে সহায়তা করেছিল গ্রেফতার হওয়া ৬ জন সমন্বয়ককে কিভাবে অবৈধ আটক রাখা যায় বা গুম করা যায় সেই পরামর্শ দিয়ে। ১০ বছর ঢাকায় চাকুরী করা খায়রুল হকের সবচেয়ে বিশ্বস্ত পিএস এখন আরো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়- উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের পিএস! সরেনি হাসিনার সেটআপ করা ঢাকা জেলাজজ ও মহনগর দায়রা জজ। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের জানার সুযোগ নেই কে কে স্বৈরাচারের সহযোগী ছিল। স্বৈরাচারী হাসিনার সকল এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে আইন মন্ত্রনালয়ের কতিপয় অপরাধী যারা অনেকেই স্বৈরাচারের করা গুম খুন নির্যাতনে জড়িত এবং কারাদণ্ড বা ফাঁসি হওয়ার মতো অপরাধ করে বহাল তবিয়তে আছে। বিচার বিভাগ বর্তমান সরকারকে জুডিসিয়াল ক্যু করে পতন ঘটাতে চেয়েছিল কিন্তু তাদের বিচার হয়নি। তাদের অপতৎপরতা এখনও বন্ধ হয়নি। অনতিবিলম্বে হাসিনার এজেন্টদের অপরাধের আটক ও বিচার না করা হলে অন্তবর্তীকালীন সরকার পতন ঘটানোর স্বপ্ন তারা বাস্তবায়ন করে ফেলতে পারে। সাধু সাবধান।

সচিবালয়ে পরিবর্তনে কোনো গতি নেই, ধীরলয়ে প্রতিবিপ্লবের আশংকা বাড়ছে

সচিবালয় প্রতিনিধি

অন্তর্বতী সরকারের তিন সপ্তাহ পূর্ণ হলো, অথচ ক্ষমতার প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে পতিত স্বৈরাচারের সচিবরা এবং চুক্তিভিত্তিরা এখনও চেয়ার দখল করে আছে। এমনকি জুলাই বিপ্লবে ছাত্রজনতার ওপর সরাসরি গুলি চালানোর প্রকাশ্য পরামর্শদাতা জনপ্রশাসন সচিব মেজবাহউদ্দিন এখনও স্বপদে আসীন, এবং তাকে রাজীখুশি করিয়ে পদোন্নতি পদায়ন করতে হচ্ছে। আজকে ১৩১ জন অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি দেয়া হয়েছে, এর আগে যুগ্মসচিব ও উপসচিব প্রমোশন দেয়া হয়েছে। যার জন্য সময় লেগেছে তিন সপ্তাহ। বিগত সরকারের প্রভাবশালীরা পদ না ছাড়ায় অন্তর্বতী সরকারের সংস্কার এবং কর্মকর্তাদের পদায়নে সমস্যা হচ্ছে। ১৩১ অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতির পরে এখন অফিসারের ঘাটতি নেই, তাই বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ও জালিম সচিবদের ও চুক্তিভিত্তিকদের অবিলম্বে বাড়ি পাঠানোর দাবী উঠেছে।

পতিত সরকারের কয়েকজন ল্যাসপেন্সার সচিবদের বিবরণ:

১) হেনা মোরশেদ জামান, পতিত স্বৈরাচারের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এখনও পদে আসীন। একে আবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মুখ্য সচিব পদে নিয়োগের জন্য আকাশ প্রমান তদবীর ও গুজব ছড়ানো হয়। অথচ এই কর্মকর্তা টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। মোট তিনটি মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালনে করেন মোর্শেদ। ফলে নতুন সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূখ্যসচিব পদে তার নিয়োগের গুঞ্জন শুরু হওয়ার পর থেকে তাকে ঘিরে নানা আলোচনা হচ্ছে। মোরশেদের বাড়ি চট্টগ্রাম হওয়ায় কানাঘুসার পালে হাওয়া লাগে।
জানা গেছে, আওয়ামী পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় ১৯৯৬ এর জাতীয় নির্বাচনের পর তৎকালীন আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোরশেদ জামান। এর ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর সচিবের পিএস, ঢাকা জেলার এডিসি, নরসিংদী ও ফরিদপুরের জেলাপ্রশাসক, প্রধানমন্ত্রীর অফিসের পরিচালক পদে কাজ করেছেন। অভিযোগ আছে, ওই সময়ে মোরশেদ জামান সরাসরি নিজের পদ ও পদবি ব্যবহার করে বিরোধী দলের লোকজনের ওপর নিপীড়নে কাজ করেছেন। অনেক দিন মতিঝিল আইডিয়েল স্কুল ও কলেজের গভর্নিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ছাত্রছাত্রী ভর্তি নিয়ে আর্থিক কেলেঙ্কারি করেছেন- এমন অভিযোগ রয়েছে আবু হেনা মোরশেদ জামানের বিরুদ্ধে। ঢাকা শহরে তিনি একাধিক ফ্লাট ও প্লটের মালিক বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। আওয়ামী এই আমলে মোরশেদ জামান প্রথমে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব , পরে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে সচিব, শেষে স্থানীয় সরকার বিভাগে নিয়োগ লাভ করেন। মোর্শেদকে অবিলম্বে বরখাস্ত করে কৃত অপরাধের জন্য বিচারের দাবী উঠেছে।

২) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান (৫৭০৪), তাকে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে সচিব পদায়ন করা হয়। অথচ তিনি আওয়ামী আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সচিব। তিনি গাজিপুরের মেয়র জাহাংগীরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বন্ধু। তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার বিষয়ে জাহাংগীরের বেশ ভূমিকা ছিল। তিনি বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির একটি ইউনিটের সভাপতি ছিলেন। তিনি এবং তার পুরো পরিবার সরাসরি আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত।

৩) মোঃ আব্দুর রহমান খান (৭৭৬৮), ১৩তম বিসিএসের ট্যাক্স ক্যাডারের কর্মকর্তা। পতিত হাসিনা সরকার তাকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (ব্যাংকিং) সচিব বানিয়েছিল, যা নিয়ে অনেক গল্প আছে, বর্তমান সরকার তাকে অভ্যন্তরীন সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে পদায়ন করে। তাকে সচিব হিসেবে নিয়োগে সরাসরি ভূমিকায় ছিলেন আর্থিক সেক্টর ধ্বংসকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর আব্দুর রউফ। তিনি আব্দুর রউফের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বেশী পরিচিত। ব্যাংকিং সেক্টরের দূর্নীতিবাজদের সাথে ব্যাংকিং সেক্টর ধ্বংসে তার ভূমিকা রয়েছে। চরম দূর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তা এই আব্দুর রহমানের মূল প্রমোটার আসলে এস আলম গ্রুপের সাইফুল আলম। একথা সচিবালয়ে প্রচারিত আছে যে, ব্যাংকিং সচিব পদে আব্দুর রহমানকে বসাতে লীগ সরকারের হাইকমান্ডকে এস আলম ৫০ কোটি টাকা উৎকোচ প্রদান করে। পরবতীতে সুদ ও ট্যাক্স মওকুফ এবং ব্যাংক লুটপাটের মাধ্যমে বিনিয়োগের টাকা তুলে নিবে। এখন সেই বিনিয়োগ তুলতেই তাকে আবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করার ধৃষ্ঠতা দেখায় এস আলম গ্রুপ। এস আলম গ্রুপের সঙ্গে তার স্বার্থের ডিল এবং ব্যাংকিং সেক্টরের লুটপাটে জড়িত থাকার দায়ে আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করা উচিত।

একটি রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাকে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব বানানোর রাতভর চেষ্টা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির নির্বাচিত সদস্য এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা ও প্রতিবেশি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার বিশ্বস্ত বিজন কান্তি সরকারকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহম্মদ ইউনুসের মুখ্যসচিব পদে নিয়োগ দানের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান অফিসে শুক্রবার দিবাগত গভীর রাত অবধি দফায় দফায় মিটিং চলে। পরিকল্পনা মোতাবেক রবিবার সকালে সচিবালয়ে শত শত বঞ্ছিত কর্মকর্তা যখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঘেরাও করবে, ঐ ফাঁকে বিজন কান্তি সরকারের সারসংক্ষেপ জনপ্রশাসন সচিবকে দিয়ে সাক্ষর করিয়ে তা প্রধান উপদেষ্টার কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। জানা গেছে, এইসকল পরিকল্পনার সাথে জড়িত আছেন চেয়ারপারসনের পিএস (অব. যুগ্মসচিব) আবদুস সাত্তার, আবদুল বারী (অব. যুগ্মসচিব), কামরুজ্জামান প্রমুখরা।

উল্লেখ্য গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে পদোন্নতি বঞ্ছিত অফিসারদের একটি ওপেন সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে রবিবার দিন সচিবালয়ে যাওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিগত সরকারের সচিবদের ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিতদের অপসারণ করে বঞ্ছিতদের পদোন্নতি দিয়ে ঐসকল পদে বসানোর জন্য সর্বোচ্চ চাপ দেয়া হবে। কিন্তু এই মিটিংয়ের পরে রাতভর গুলশানের কাশিম বাজার কুঠিতে চলে বিশেষ এক ব্যক্তিকে বসানোর তৎপরতা।

অন্তর্বতী সরকারের প্রথম সপ্তাহে বঞ্ছিত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন সচিবের কাছে বার বার ধর্ণা দিতে থাকেন, চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন, যাতে করে অতিদ্রুত ১৬ বছর ধরে জমে থাকা বঞ্ছিতদেরকে দ্রুত তাদের প্রাপ্য পদোন্নতিগুলি দিয়ে বিগত আমলের সুবিধাভোগিদের সরিয়ে ঐসব পদে বসানো হয়। কিন্তু জনপ্রশাসন সচিব হিসাবে বসে আছেন পতিত লীগ সরকারের প্রতিভূ সচিব মেজবাহ উদ্দিন, যিনি আওয়ামী বুদ্ধিজীবি সাবেক সচিব কামাল নাসের ভাগিনা। মেসবাহউদ্দিন ডিভাইড এন্ড রুলের মাধ্যমে বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ এবং সার্ভিং গ্রুপের মধ্যে বিবাদ লাগিয়ে দিতে সমর্থ হন। বিএনপি চেয়ারপারসনের পিএস পদে কর্মরত অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব আবদুস সাত্তারকে ভজিয়ে তিনি ৮২/৮৩ ব্যাচের অবসরপ্রাপ্তদেরকে পদোন্নতি এবং সচিবালয়ে পদায়নের টোপ দেন। ফলে বঞ্চিতরা ভাগ হয়ে যায় অবসরপ্রাপ্ত এবং সার্ভিং দুই গ্রুপে। ১০-১৫ বছর আগে অবসরপ্রাপ্তরা সার্ভিস জুনিয়রদেরকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও সার্ভিংরা তা মানতে নারাজ। এক্ষত্রে কতগুলি বিষয় বিবেচনার দাবী রাখে:

এক) ১৯৮২/৮৩ ব্যাচের যে সকল কর্মকর্তারা ১০-১৫ বছর আগে অবসরে গেছেন বা যাদেরকে অবসরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, তাদের এখন বয়স ৭৫-৮০র মধ্যে। অনেকেই তারা আলঝাইমার ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন। এ অবস্থায় তাঁরা সরাসরি সচিবের চেয়ার বসতে চাইছেন এত বছর পরে। এদেরকে মন্ত্রণালয়ের সচিবের চেয়ারে বসাবেন, নাকি বিভিন্ন সাংবিধানিক সংস্থা, কমিশন বা রাষ্ট্রদূত করবেন, তা বিবেচনার দাবি রাখে।

দুই) ১৯৮২ ব্যাচের প্রথম কর্মকর্তা শেখ আব্দুর রশিদকে সামনে রেখে পেছনে ৮২/৮৩ বিশেষ ব্যাচ বা ৮৪ ব্যাচের ৫০/৬০ জন অবঃরা লাইন দিয়েছেন-জুনিয়রদের হঠিয়ে সচিব হতে! সচিব পদে বসানোর এই কুতৎপরতায় সাংঘাতিকভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বর্তমানে যারা সচিব হওয়ার কথা তারা। এত বয়স, চিন্তা, চেতনার ব্যবধানে সচিবালয়ের পরিবেশ অস্থির হওয়ার কথা। অনেকটা নানা-নাতির মত!

তিন) সরকারী চাকরি শেষে যারা রাজনৈতিক পদে কাজ করছেন অর্থাৎ এমনকি নির্বাচিত দলীয় পদ হোল্ড করছেন সেরকম ব্যক্তি যদি মুখ্য সচিব হতে চায়, তবে সেটা কতটা সুস্থ মাথার কাজ তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। কেননা রাজনীতিতে চলে গেলে আর সরকারি চাকরিতে কেন সাংবিধানিক সংস্থাতেও ফেরা যায় না। ওনাদের জন্য কেবল বাকী থাকে এমপি মন্ত্রী হওয়া।

চার) PMRS নামে বিএনপি’র একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন আছে সেখানে যে সকল অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আছেন, তারা অলরেডি রাজনীতির ময়দানে দলীয় পতাকা নিয়ে নেমেছেন, তারাও সচিব হতে চান! কিন্তু কি করে এটা সম্ভব? এরপরে কি আর সচিবালয়কে সরকারি দপ্তর বলা যাবে, নাকি রাজনৈতিক সংগঠন?

পাঁচ) বর্তমানে যারা সচিব আছেন বিসিএস ১৩ ব্যাচের এবং এরপরে ১৫ ব্যাচের আসছে, এরা জয়েন করেছে ১৯৯৬ সালে; আর ৮২ ব্যাচের কর্মকর্তারা জয়েন করেছেন ১৯৮২ সালে। বয়সের এত বিশাল ব্যবধানে কেউ কখনও চাকরি করেছে?

ছয়) ১৯৮২ বা তার আশেপাশের যে ব্যাচগুলির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আছেন, তারা বর্তমানে সচিবালয়ের সিস্টেম সম্পর্কে বিশেষ করে ই-নথি, ই-গভর্ণেন্স সম্পর্কে একেবারেই অজানা এবং তাদেরকে বসালে কি তারা আবার সাবেকী মডেলে ফিরে যাবেন?

সাত) বর্তমানে মাঠে যারা কর্মরত আছেন, তাদের সঙ্গে তাদের সমসাময়িক ব্যাচগুলির যেরকম যোগাযোগ বা সম্পর্ক, তার মধ্যে যদি ১৫/২০ বছরের সিনিয়রর ঢোকে, তবে মাঠ প্রশাসনে সাংঘাতিক গ্যাপ তৈরি হবে।  

আট) বৃদ্ধ অবঃ অফিসারদের এই চুক্তিভিত্তিক প্রত্যাবর্তন কি কেবল সচিবালয়েই সুযোগ দেয়া হবে, নাকি অন্যান্য সার্ভিসে এবং ক্যাডারেও দেয়া হবে? এই বৈষম্য দূরীভূত হবে কি করে?

নয়) ইন্টার সার্ভিস রিলেশন তথা সামরিক বাহিনী পুলিশ বাহিনী অন্যান্য যে সকল ফোর্সেস আছে, তাদের প্রধানদের চেয়েও এই অবসরপ্রাপ্ত চুক্তিভিত্তিক সচিবরা অনেক সিনিয়র হবে, ফলে কার কথা কে শুনবে। ভেঙ্গে পড়বে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ব্যবস্থা।

দশ) বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু অবসরের পরে সচিবের পদে বসানোর কোনো নজীর নাই। তো এই নজীরবিহীন তান্ডব করে কার উপকার হবে, নাকি অন্তর্বতী সরকারকে বিপদে ফেলতে এটি একটি স্যাবোটেজ মাত্র।

জুনিয়রদের দাবী, সার্ভিংদের প্রথমে পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন করা হোক, তারপরে সিনিয়র ব্যাচের রিটায়ার্ড অফিসারদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে বিভিন্ন সাংবিধানিক সংস্থা, কমিশন, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, দূতাবাসে নিয়োগ করে প্রতিকার ও সম্মনিত করা যায়।

পতিত সরকারের দৃবৃত্ত সচিবদের পূণর্বাসন চলছে!

বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে আবার সচিবালয়ে আবার আওয়ামী কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ১৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পতিত হাসিনা সরকারের তিন জন দুবৃত্ত সচিবকে গুরুত্বপূর্ণ সচিব পদে পদায়ন করলো অন্তবর্তী প্রশাসন। ছাত্র আন্দোলনের রক্তের দাগ শুকানোর পূর্বেই নতুন কৌশলে ছাত্র-জনতার রক্তের সাথে বেঈমানী করা হলো।

১) বিসিএস ১০ম ব্যাচের কর্মকর্তা মোকাব্বির হোসেন (৫৫৪৮) হাসিনার ক্ষমতা রক্ষার অন্যতম সিপাহশালার ছিলেন। বার বার তাকে ব্যবহার করেছে খুনি হাসিনা। তাকে দুঃখজনকভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে বদলিপূর্বক পদায়ন করা হয়। মোকাব্বির আওয়ামী সরকারের আমলে পদোন্নতি পাওয়া এবং নিয়োগপ্রাপ্ত সচিব। ’৮৫ ব্যাচের কুখ্যাত কর্মকর্তা মোঃ মুহিবুল ইসলামের বিশ্বস্ত সহযোগী ছিল মোকাব্বির। মুহিবুল বর্তমানে আমেরিকায় পালিয়ে আছেন। মুহিবুল যখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি তখন তিনি মোকাব্বিরকে জনপ্রশাসনে নিয়ে আসেন। এরপর মুহিবুল বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব হলে মোকব্বিরকে বাংলাদেশ বিমানের এমডি করেন এবং তার মাধ্যমেই বিমান ধ্বংসের প্রান্তে পৌঁছে যায়। এর পুরস্কার স্বরুপ মোকাব্বিরকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব পদে পদায়ন করা হয়। আওয়ামী কর্মকর্তা মুহিবুলের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে সকল তথ্য মুহিবুলের মাধ্যমে আওয়ামী কমান্ডের নিকট পৌঁছানোর ব্যপক আশংকা রয়েছে।


২. ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান (৫৭০৪), সদস্য (সচিব), পরিকল্পনা কমিশন। তাকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে বদলিপূর্বক পদায়ন করা হয়। তিনি আওয়ামী আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সচিব। তিনি গাজিপুরের মেয়র জাহাংগীরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বন্ধু। তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার বিষয়ে জাহাংগীরের বেশ ভূমিকা ছিল।তিনি বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকি উদযাপন কমিটির একটি ইউনিটের সভাপতি ছিলেন। তিনি এবং তার পুরো পরিবার সরাসরি আওযামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত।

৩. জনাব মোঃ আব্দুর রহমান খান (৭৭৬৮), ১৩তম বিসিএসের ট্যাক্স ক্যাডারের কর্মকর্তা। সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তাকে বদলি পূর্বক অভ্যন্তরীন সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে বদলিপূর্বক পদায়ন করা হয়। তিনি আওয়ামী আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সচিব। তাকে সচিব হিসেবে নিয়োগে সরাসরি ভূমিকায় ছিলেন আর্থিক সেক্টর ধ্বংসকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর আব্দুর রউফ। তিনি আব্দুর রউফের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। ব্যাংকিং সেক্টরের দূর্নীতিবাজদের সাথে ব্যাংকিং সেক্টর ধ্বংসে তার ভূমিকা রয়েছে।
চরম দূর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তা এই আব্দুর রহমানের মূল প্রমোটার আসলে এস আলম গ্রুপের সাইফুল আলম। একথা সচিবালয়ে প্রচারিত আছে যে, ব্যাংকিং সচিব পদে আব্দুর রহমানকে বসাতে লীগ সরকারের হাইকমান্ডকে এস আলম ৫০ কোটি টাকা উৎকোচ প্রদান করে। পরবতীতে সুদ ও ট্যাক্স মওকুফ এবং ব্যাংক লুটপাটের মাধ্যমে বিনিয়োগের টাকা তুলে নিবে। এখন সেই বিনিয়োগ তুলতেই তাকে আবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করার ধৃষ্ঠতা দেখায় এস আলম গ্রুপ। এস আলম গ্রুপের সঙ্গে তার স্বার্থের ডিল এবং ব্যাংকিং সেক্টরের লুটপাটে জড়িত থাকার দায়ে আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করা উচিত।

হিরো আলমের ওপর আওয়ামী হামলার পরে হাসিনার চরম বিপর্যয়

১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ নির্বাচনী এলাকায় উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি এখন জমজমাট। আওয়ামীলীগ প্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাতের বিপরীতে চ্যালেঞ্জিং ক্যান্ডিডেট ছিল ‘হিরো আলম’ নামে কথিত বগুড়ার এক যুবক আশরাফুল আলম। দেশে রাজনীতির চরম দুরাবস্থার কারনে এই উপনির্বাচনে মূলধারার কোনো দল অংশ নেয়নি। যার ফলে হিরো আলমকে নিয়ে কিছু লোকের অনাহুত বাড়াবাড়ি, অনেকে আবার রাজনীতির ওপর বিতশ্রদ্ধ হয়ে হিরো আলমকেই ভোট দিবে এমন আওয়াজ করে।

এরই মাঝে ভোটের দিনে যখন সবগুলো সেন্টার প্রায় ভোটার শূণ্য, সময় শেষ হবার আধাঘন্টা আগে বানানীর একটি কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা ’জয়বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমকে বেধকর মারধর করে। কিল, চড়. থাপ্পড়, লাত্থি কিছুিই বাদ রাখেনি। এমনকি সে দৌড়ে পালাচ্ছিল, আবার পেছন থেকে ‍ছুটে গিয়ে হামলাকারীরা ধরে মাটিতে ফেলে মারতে থাকে। কাউকে বলতে শোনা যায়, বেশি মারিস না মরে যাবে।

সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে এই মারধরের ভিডিও দেশের সর্বত্র ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় দেশে-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই হামলার ঘটনায় খোদ জাতিসংঘের প্রতিনিধি বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসও হামলার ওই ঘটনা নিয়ে জানতে চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে দেশটির মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, আশা করি হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করবে বাংলাদেশ। ম্যাথু মিলার বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতার যেকোনো ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে বলব। সেই সঙ্গে যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনবে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করবে বলে আশা করি। আমরা ভোট প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করব।

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) এক টুইটে নিন্দা জানায় সংস্থাটি। টুইটে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘এ ধরনের হামলা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় দেশটির পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের আগে একটি আতঙ্কের বার্তা দিচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই অবিলম্বে এ হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

ফলে, বিশ্লেষকদের ধারণা হচ্ছে, সরকারের শেষ বেলায় এই একটি ঘটনা হাসিনা সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব এমন আর্গুমেন্টকে নাকচ করে দিতে পারে। যাকে বলা যায়, পচা শামুকে পা কাটা।

২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসাররা কে কোথায়

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি দেশে “এক দলীয় ভোট” বা ”বিনাভোটের নির্বাচন” হিসাবে পরিচিত। ঐ জালিয়াতির নির্বাচনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলে ‘গভীর ত্রুটিপূর্ণ’ নির্বাচন, এবং এটি বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে এর জন্য দায় ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা সহ আরও ব্যবস্থার জন্য বিবেচিত হতে পারে।

ঐ নির্বাচনে বিএনপি সহ সকল বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছিল। কেবল অংশ নিয়েছিল আওয়ামীলীগ এবং জাতীয় পার্টি। এছাড়া সকল বিরোধী দলের সম্মিলিত বিরোধিতার মুখে ঐ নির্বাচনের চেষ্টা চালায় তৎকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন। সবখানে সারাদিন ভোটকেন্দ্রগুলো শূন্য পড়েছিল। কেউ ভোট দিতে আসেনি। বহু ভোটকেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। কোথাও কোথাও দু’চারটা করে ভোট পড়লেও এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল জাল। অথচ ভোটগ্রহণের শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচন কমিশন অভিমুখে ছুটাছুটি ও তৎপরতার পর রাতে লাখ লাখ এবং হাজার হাজার ভোট পড়েছে বলে দেখানো হয়। এতে পুরো প্রহসনটির সামান্যতম বিশ্বাসযোগ্যতাও আর অবশিষ্ট থাকেনি।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, ভোটের আগেই ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামীলীগের নৌকাকে নির্বাচিত ঘোষণা হয়। আর এটা করতে গিয়ে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে চরমতর অপরাধ সংঘটন করা হয়। ঐ ভোটারবিহীন নির্বাচনের শিডিউল অনুযায়ী প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ বিকাল ৫টা পর্যন্ত, নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয় ৮৬টি সিটে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। পরবর্তী তিন দিন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে চাপ, ভীতি, এবং টোপ দিয়ে প্রার্থীতা আরও ৬৮টি আসনের নৌকা বাদে সকল প্রার্থী প্রত্যাহার করা হয়। সমসীমার তিন দিন পরে ১৫ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয় ১৫৪ আসনে একক প্রার্থী। শিডিউল ভাঙার ফলে পুরো নির্বাচন ছিল অবৈধ। ঐ অবৈধ সংসদ সৃষ্ট সরকারও ছিল অবৈধ।

তৎকালীন ৬৪ জেলা প্রশাসক এবং রাজধানীর জন্য ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন ঐ অবৈধ নির্বাচন পরিচালনাকারী রিটার্নিং অফিসার। এদের মধ্যে যারা শিডিউলের পরেও যারা প্রার্থীতা প্রত্যাহারের সাথে জড়িত, তাদের অপরাধ রাষ্ট্র্রদ্রোহ বিবেচিত হতে পারে (অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল বা দখলের চেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহিতা)। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৩ জন সরকারের সচিবের দায়িত্বে এবং ৪ জন বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্বে ও অন্যান্য বিভাগীয় প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আছেন।

২০১৪ সালের কর্মস্থল, নাম ও পরিচিতি বর্তমান কর্মস্থল

—————————— ————-

ঢাকা বিভাগ________

১। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার: মোঃ জিল্লার রহমান (১০১৬)- অবসরপ্রাপ্ত সচিব।

২। ঢাকা জেলা: শেখ ইউসুফ হারুন (৫৩৭২)- সিনিয়র সচিব (অব), নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন (বেজা)।

৩। গাজীপুর জেলা: মোঃ নূরুল ইসলাম (৪১৮৫) – অবসরপ্রাপ্ত সচিব।

৪। নারায়ণগঞ্জ জেলা: মনোজ কান্তি বড়াল (৫২১৮) – যুগ্মসচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় (অবসরে)

৫। নরসিংদী জেলা: ওবায়দুল আজম (৪০৭৩)- অবসরে (অতিরিক্ত সচিব, বানিজ্য মন্ত্রণালয়)

৬। মানিকগঞ্জ জেলা: মোঃ মাসুদ করিম (৫৮২১)- অবসরে (অতিরিক্ত সচিব, শ্রম মন্ত্রণালয়)

৭। মুন্সীগঞ্জ জেলা: মোঃ সাইফুল হাসান বাদল (৫৭৭৭) – অবসরপ্রাপ্ত সচিব।

৮। ফরিদপুর জেলা: আবু হেনা মোর্শেদ জামান (৫৬৩৯) – সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়

৯। শরীয়তপুর জেলা: রাম চন্দ্র দাস (৪১৫৩) – অবসরে (ডিজি, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর – গ্রেড১)

১০। মাদারীপুর জেলা: জিএসএম জাফরউল্লাহ (৫৯৬৬) -বিভাগীয় কমিশনার, রাজশাহী বিভাগ

১১। গোপালগঞ্জ জেলা: মোঃ খলিলুর রহমান (৫৬৪২)- (অবসরে) সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়

১২। রাজবাড়ী জেলা: মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল (৫৮২৪) – সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়

১৩। কিশোরগঞ্জ জেলা: এস এম আলম (৬০৬৭) – অতিরিক্ত সচিব, শিল্প মন্ত্রনালয়

১৪। টাংগাইল জেলা: মোঃ আনিছুর রহমান মিঞা (৫৬৯৬) – অবসরের পর চেয়ারম্যান, রাজউক (চুক্তিতে)

চট্টগ্রাম বিভাগ________

১৫। বি.বাড়িয়া জেলা: ড. মো. মোশারাররফ হোসেন (৬০৯১) – কমিশনার, সিলেট বিভাগ

১৬। কুমিল্লা জেলা: মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া (৪১৪২) – মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

১৭। চাঁদপুর জেলা: মো. ইসমাইল (৫৭১৩) – সচিব, খাদ্য মন্ত্রণালয়

১৮। লক্ষীপুর জেলা: এ. কে. এম. মিজানুর রহমান (৫৪৪২) – (অবসরে) মহাপরিচালক, শ্রম অধিদপ্তর

১৯। ফেনী জেলা: মোঃ হুমায়ুন কবীর খোন্দকার (৫৬০৯) – সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয়

২০। নোয়াখালী জেলা: খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান (৫৪৫৬) – অবসরে (রেজিষ্ট্রার পেটেন্ট এন্ড ডিজাইন)

২১। চট্টগ্রাম জেলা: মো. আবদুল মান্নান (৫৩১১) – সচিব, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় (অবসরে)

২২। কক্সবাজার জেলা: মো. রুহুল আমিন (৫৮২৭) – উপ সচিব (সাসপেন্ড- কারাগারে)

২৩। বান্দরবান জেলা: কে. এম. তারিকুল ইসলাম (৪১৬৪) – (অবসরে) মহাপরিচালক, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো (গ্রেড-১)

২৪। রাঙ্গামাটি জেলা: মোস্তফা কামাল (৫৫২১) – সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়

২৫। খাগড়াছড়ি জেলা: মোঃ মাসুদ করিম (৫৫৫৯) ডিজি, কৃষি বিপনন অধিদপ্তর


সিলেট বিভাগ________

২৬। সিলেট জেলা: মোঃ শহিদুল ইসলাম (৫৫২২) – অতিরিক্ত সচিব (অবসরে)

২৭। মৌলভীবাজার জেলা: মোঃ কামরুল হাসান (৫৭২৭) – সচিব, ত্রান ও দুযোর্গ মন্ত্রণালয়

২৮। সুনামগঞ্জ জেলা: মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী (৪১৩১) – অবসরপ্রাপ্ত সচিব (এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য)

২৯। হবিগঞ্জ জেলা: জয়নাল আবেদীন (৫৭৬৮) – এমডি, ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট

ময়মনসিংহ বিভাগ________

৩০। ময়মনসিংহ জেলা: মো. খলিলুর রহমান (৬০৪৫) – সচিব, ভুমি মন্ত্রণালয়

৩১। নেত্রকোনা জেলা: মো. আবুল কালাম আজাদ (৫৮৪১) – ডিজি, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তর

৩২। শেরপুর জেলা: মোহাম্মদ জাকীর হোসেন (৪২৩৫) – অতিরিক্ত সচিব, জ্বালানী মন্ত্রণালয়

৩৩। জামালপুর জেলা: – মো. শাহাবুদ্দিন খান (৬০৬০) – ওএসডি, অতিরিক্ত সচিব, জনপ্রশাসন

রংপুর বিভাগ________

৩৪। পঞ্চগড় জেলা: অমল কৃষ্ণ মন্ডল (৫৯৯৭) – অতিরিক্ত সচিব, অর্থনেতিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ

৩৫। লালমনিরহাট জেলা: মোঃ হাবিবুর রহমান (৫৮০৬) – অতিরিক্ত সচিব (অবসরে)

৩৬। গাইবান্ধা জেলা: ডা. মো. জহিরুল ইসলাম রোহেল (৫৮৫৮) – ডিজি, মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল

৩৭। ঠাকুরগাঁও জেলা: মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাস (৫৬৫৭) – যুগ্মসচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ

৩৮। কুড়িগ্রাম জেলা: এ বি এম আজাদ (৫৫২৮) – চেয়ারম্যান, বিপিসি (চুক্তিতে)

৩৯। দিনাজপুর জেলা: আহমদ শামীম আল রাজী (৫৭৩১) – অতিরিক্ত সচিব (অবসরে)

৪০। নীলফামারী জেলা: মো. জাকির হোসেন (৬০৪৬) – এমডি, ওয়াসা, রাজশাহী

৪১। রংপুর জেলা: ফরিদ আহাম্মদ (৫৬৮২) – সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ

রাজশাহী বিভাগ________

৪২। নওগাঁ জেলা: মোঃ এনামুল হক (৫৮৪৪) – অতিরিক্ত সচিব (অবসরে)

৪৩। জয়পুরহাট জেলা: মো. ইয়াসিন (৫৭৭০) – অতিরিক্ত সচিব (অবসরে)

৪৪। বগুড়া জেলা: মো. শফিকুর রেজা বিশ্বাস (৫৯০২) – বিভাগীয় কমিশনার, ময়মনসিংহ

৪৫। রাজশাহী জেলা: মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী (৫৪৬৪) – সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

৪৬। নাটোর জেলা: মোঃ জাফর উল্লাহ (৪১৫২) – অতিরিক্ত সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়

৪৭। পাবনা জেলা: কাজী আশরাফ উদ্দিন (৫৬৯৮) – (অবসরে) চেয়ারম্যান, মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন

৪৮। সিরাজগঞ্জ জেলা: মো. বিল্লাল হোসেন (৬০১৫) – অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব

৪৯। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা: সরদার সরাফত আলী (৫৮০৩) – মারা গেছেন


খুলনা বিভাগ________

৫০। সাতক্ষীরা জেলা: নাজমুল আহসান (৫৯৬৩) – সচিব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়

৫১। যশোর জেলা: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (৫৫৭২) – সচিব, জন নিরাপত্তা বিভাগ

৫২। বাগেরহাট জেলা: মু: শুকুর আলী (৫৬৮৬) – যুগ্মসচিব, আইএমইডি

৫৩। খুলনা জেলা: আনিস মাহমুদ (৪১২৮) – চেয়ারম্যান, পাটকল করপোরেশন এবং মেসবাহউদ্দীন (৫৬৮৮) অবসরপ্রাপ্ত সচিব

৫৪। ঝিনাইদহ জেলা: মো. শফিকুল ইসলাম (৫৭৫১) – অতিরিক্ত সচিব (অবসরে)

৫৫। চুয়াডাঙ্গা জেলা: মো. দেলোয়ার হোসাইন (৫৫৪১) – অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়

৫৬। কুষ্টিয়া জেলা: সৈয়দ বেলাল হোসেন (৫৮২৩) – এমডি, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন

৫৭। মেহেরপুর জেলা: মো. মাহমুদ হোসেন (৫৪৮৭) – অতিরিক্ত সচিব, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়

৫৮। নড়াইল জেলা: আ. গফফার খান (৫৫৬৭) – ডিজি, পল্লী উন্নয়ন বোর্ড

৫৯। মাগুরা জেলা: মাসুদ আহ্‌মদ (৪২৪৩) – অতিরিক্ত সচিব (অবসরে)

বরিশাল বিভাগ________

৬০। বরিশাল জেলা: মোঃ শহীদুল আলম (৫৭২৬) – মহাপরিচালক,

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো

৬১। পিরোজপুর জেলা: একেএম শামীমুল হক সিদ্দিকী (৫৯৮৩) – চেয়ারম্যান, ভূমি আপীল বোর্ড

৬২। ভোলা জেলা: মো. সেলিম রেজা (৫৫১৩) – সিইও, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন

৬৩। ঝালকাঠি জেলা: মোঃ শাখাওয়াত হোসেন (৫৫৩৮) – মহাপরিচালক, খাদ্য অধিদপ্তর

৬৪। পটুয়াখালী জেলা: অমিতাভ সরকার (৫৫৯২) – সচিব (অবসরে)

৬৫। বরগুনা জেলা: মোঃ আবদুল ওয়াহাব ভূঞা (৫৬৬৮) – মহাপরিচালক, মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর।

বাংলাদেশ সরকারের ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন স্যাংশন

ডেস্ক রিপোর্ট
মানবাধিকার হরণের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ সরকারের ৪ উর্ধতন সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। এরা হলেন লেফটেনেন্ট জেনারেল এস এম মতিউর রহমান, মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মো. খায়রুল বাশার, দু’জন অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম এবং শাহাবুদ্দিন খান। এ সংক্রান্ত গোপনীয় পত্র ইতোমধ্যেই ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌছেছে।

১) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম মতিউর রহমান। ১৩তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের কর্মকর্তা। ইনি রাষ্ট্রদূত হবার অপেক্ষায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত আছেন। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীর একদলীয় নির্বাচনের পরে বিরোধী দল দমনে অংশ হিসাবে সাতক্ষীরায় সরকারী বাহিনী কতৃক ক্রাক ডাউন করা হয়। ঐ অভিযান পরিচালনা করা হয় ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমানের নেতুত্বে। তখন বাংলাদেশের পুলিশ, আর্মি, বিজিবি সহ বিভিন্ন বাহিনী ও ভারতের ৩৩ তম ডিভিশনের যৌথ অভিযানে সাতক্ষীরা জেলার ৫টি থানায় আট শত মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই জামায়াতে ইসলামী পরিবারের সদস্য ছিলেন। বুলডোজার দিয়ে মানুষের বাড়িঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়, গরু ছাগল পুড়িয়ে হত্যা হরা হয়, নারীদের সম্ভ্রমহানির ঘটনাও ঘটে।

২) মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোঃ খাইরুল বাশার। ২০তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের কর্মকর্তা। রাষ্ট্রদূত হবার অপেক্ষায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত  আছেন। বিজিবিতে থাকাকালে ইনি তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজের পলাতক ভাইদের জন‍্য ভুয়া এনআইডি এবং পাসপোর্ট তৈরী করে দিয়েছিলেন। এছাড়াও বিজিবির পোস্টিংয়ে থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন।

৩) মো. মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক: বিসিএস পুলিশ সার্ভিসের ১৫তম ব্যাচের সদস্য। গোপালগঞ্জের বাসিন্দা। ২০১৪/১৫/১৬ সালে বাংলাদেশে কৃত্রিম জঙিবাদ সৃষ্টি করে তা দমনের নামে শত শত হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। তাছাড়া মার্কিন নাগরিক অভিজিত হত্যাকান্ডও তারই নির্দেশে ঘটে। আনসারউল্লাহ নাটক সহ জঙ্গি নাটকের হোতা। রিমান্ডে নির্যাতন, গায়েবী মামলা, দলবাজি, গুম, খুন, ক্রস ফায়ারের মূল নির্দেশদাতা।

৪) মো. শাহাবুদ্দিন খান, অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক: বিসিএস পুলিশ সার্ভিসের ১৫তম ব্যাচের সদস্য। ঝিনাইদহের বাসিন্দা। পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বরিশালে ৬শ কিলিংয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে গত বছর বিশ্ব মানবিধিকার দিবস ১০ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠান হিসাবে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ। নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন, তৎকালীন র‌্যাব ডিজি ও বর্তানে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিজি ও আইজিপি বেনজির আহমেদ, র‌্যাবের অতিরিক্ত ডিজি খান মোহাম্মদ আজাদ, তোফায়েল মুস্তাফা সারোয়ার, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ আনওয়ার লতিফ খান। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন করে চার জনের অন্তর্ভুক্তির খবর আসে।

এক নয়া রাজনীতির জন্ম দিলো বরিশাল

এ এক নতুন দৃশ্যপট।

তিন ঘণ্টার সমাবেশ। তিন দিন আগে থেকেই নেতাকর্মীদের অবস্থান। চাল, চুলা সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে একটি সমাবেশের অংশ হওয়ার মরিয়া চেষ্টা। বাসের সঙ্গে তিন চাকার যানও বন্ধ। বন্ধ লঞ্চ, স্পিড বোটসহ সব নৌযান। সড়ক পথের অন্য বিকল্প যানের ওপর কড়া নজর। এত কিছুর পরও গতকাল বরিশালে এক নয়া নজির তৈরি করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে নানা কৌশলে বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করে ঘরে ফিরেছেন তারা। এই সমাবেশ থেকে নয়া এক বার্তাও পৌঁছে গেছে দেশের রাজনীতিতে।

নয়া এক ট্রাম্প কার্ড হাজির হয়েছে রাজনীতির ময়দানে। বরিশালের ঐতিহাসিক বেলস পার্ক সাক্ষী হয়েছে নতুন ধরনের এক রাজনৈতিক কর্মসূচির।

আদতে দৃশ্যপট হওয়ার কথা ছিল এমন। বেলা দুইটায় শুরু হওয়া সমাবেশ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ৫টার মধ্যে। এই সমাবেশে অংশ নিতে হয়তো ওই দিন সকালে বিভিন্ন জেলা থেকে রওনা দিতেন নেতাকর্মীরা। দুপুরে এসে সমাবেশে যোগ দিয়ে বিকালে ফিরে যেতেন যার যার এলাকায়।

কিন্তু বিএনপি’র তিন ঘণ্টার এই সমাবেশ তিন দিনে রূপ নেয় শুধুমাত্র ‘সরকারি’ বাধার কারণে। এই বাধার কারণে মরিয়া মনোভাব তৈরি হয় নেতাকর্মীদের মাঝে। যে করেই হোক সমাবেশে অংশ নেবেন এমন ইচ্ছা নিয়ে দুই বা তিন দিন আগেই ঘর ছাড়েন তারা। হেঁটে, ছোট নৌকা বা ভ্যানে করে তারা ছুটে আসেন জেলা থেকে বিভাগীয় শহরে। অবস্থান নেন বেলস পার্ক। সেখানে দুই রাতও কাটিয়েছেন অনেকে। রান্নাবান্না হয়েছে উদ্যানে। রান্নার উপকরণও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন নেতাকর্মীরা। চুলা, লাকড়ি আনতেও ভুল করেননি। কেউ কেউ দুই দিনের জন্য শুকনা খাবার এবং পানি সঙ্গে নিয়ে হাজির হন।

শনিবার দুপুরে সমাবেশ। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই এক অভূতপূর্ব দৃশ্য ভেসে উঠে বরিশালবাসীর সামনে। দলে দলে আসা লোকজন ঠাঁই নেন খোলা মাঠে। মাথার উপরে সামিয়ানা টানিয়ে কেউ কেউ রাত যাপন করেছেন মাঠেই। কেউ হোটেলে, কেউ লঞ্চঘাটে রাত কাটান। সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার থেকেই কার্যত বরিশাল নগরী বিএনপি নেতাকর্মীদের দখলে চলে যায়। সমাবেশ ঘিরে বন্ধ রাখা হয় অনেক দোকানপাট। শহরের অভ্যন্তরে চলাচল করে এমন ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বৃহস্পতিবার থেকে। তাই দলে দলে বিএনপি নেতাকর্মীরা নগরজুড়ে ছুটে বেড়ান পায়ে হেঁটে। শনিবার ভোর থেকে বেলস পার্কে ঢল নামে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের। একের পর এক আসতে থাকে মিছিল। দুপুরে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকালেই পূর্ণ হয়ে যায় উদ্যান। নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের সড়কে।

বিরোধী দলের সমাবেশে বিঘ্ন ঘটাতে পরিবহন বন্ধ করে দেয়ার খেলা একেবারে নতুন নয়। এর আগেও এমনটি হয়েছে। কিন্তু বরিশালের সমাবেশ ঘিরে এই বাধা ছিল সর্বমুখী। এই সমাবেশে আসতে সীমাহীন বাধা পেরুতে হয়েছে নেতাকর্মীদের।

আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় সমাবেশে অংশ নিতে তাদের বেছে নিতে হয়েছে নানা কৌশল। ভোলা, পটুয়াখালীসহ আশপাশের জেলা থেকে নদী পথে ছোট ছোট নৌকায় করে অনেকে সমাবেশে হাজির হন। ভেঙে ভেঙে হেঁটে, রিকশা, ভ্যানে করে কেউ কেউ বরিশাল পর্যন্ত আসেন। এমন কী নদী সাঁতরেও সমাবেশে অংশ নিতে দেখা গেছে মানুষকে। দুই দিন আগেই সমাবেশ মাঠে অবস্থান নেয়া নেতাকর্মীরা বলছিলেন, সরকার বাধা দেবে এটি পুরনো কৌশল। এই কৌশলকে পরাজিত করে সমাবেশ সফল করতে তারা বিকল্প পরিকল্পনা নেন। এক দিন নয়, দুই দিন আগেই সমাবেশে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বরিশালে এসে খাবার পাওয়া যাবে না, পানি পাওয়া যাবে না এমনটিও ধরে নিয়েছিলেন তারা। তাই ভ্যানে করে চাল, ডাল, তেল, চুলা, লাকড়িও সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। তাই তাদের তেমন বেগ পেতে হয়নি। দুই দিন দুই রাত সমাবেশ মাঠে কাটিয়ে শনিবার নেতাদের বক্তব্য শোনে ফিরে গেছেন নিজ নিজ এলাকায়। মানবজমিনের পক্ষ থেকে মাঠে অবস্থান করা অনেকের কাছে প্রশ্ন ছিল খাবার-দাবারের আয়োজন হলো কীভাবে। নেতাকর্মীরা বলছিলেন নিজেরা চাঁদা তুলে এই আয়োজন করেছেন। অবশ্য স্থানীয় অনেক নেতাকেও কর্মীদের খাবার দাবারের তদারকি করতে দেখা গেছে।

বিএনপি’র সমাবেশ বানচাল করতে সর্বমুখী চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনো চেষ্টাই কাজে আসেনি। বরং দ্বিগুণ মনোবল নিয়ে ছুঠে আসেন নেতাকর্মীরা। বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে বরিশালে পা রাখার পর তাদের অনেকের মধ্যে ছিল রাজ্য জয়ের আনন্দ। রাজনীতির পুরনো কৌশল বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবলের কাছে হার মেনেছে বরিশালে। বড় সমাবেশ করে চাঙ্গা নেতাকর্মীরা।

বরিশালের এই সমাবেশ ঘিরে নানা শঙ্কা ছিল আগে থেকেই। বরিশালের একজন নেতা চাইলে সমাবেশ সাফা হয়ে যাবে- এমন কথাও বলা হচ্ছিল আগে থেকেই। অনেকে ধরে নিয়েছিলেন সমাবেশ ঘিরে সংঘাত হতে পারে। কিন্তু ওই অর্থে তেমন কিছু ঘটেনি। ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে। আরও কিছু জায়গায় হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। এর বাইরে শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে সমাবেশ।

বিএনপি’র বিভাগীয় এই গণসমাবেশ ঘিরে সাধারণ মানুষের কষ্ট আর দুর্ভোগের মাত্রা ছিল সীমাহীন। দুই দিন বিভাগীয় শহর কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জেলার মানুষের তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অতিরিক্ত পেরেশানিতে থাকতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও। অনেক অযৌক্তিক ধাঁচের পরিবহন ধর্মঘটের কারণে কর্মহীন সময় কেটেছে কয়েক হাজার পরিবহন শ্রমিকের।

বেশি বাধা, বড় সমাগম: প্রায় এক যুগ পর বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে বিএনপি। এই সমাবেশ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে জল্পনা-কল্পনার কমতি ছিল না। সমাবেশকে সামনে রেখে এক সপ্তাহ আগে গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণা আসে। ঘোষণা আসে লঞ্চ চলাচল বন্ধেরও। কেমন হবে বরিশালে বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশ। এমন প্রশ্ন ছিল মানুষের মুখে মুখে। ছিল নানা আশঙ্কা। নেতাকর্মীরাও ছিলেন আতঙ্কে। গত কয়েকদিনে বরিশাল নগরীর পরিস্থিতি ছিল থমথমে। অবশেষে নির্ধারিত মহাসমাবেশ করেছে বিএনপি। হাজার হাজার মানুষ সেই সমাবেশে সমবেত হয়েছেন। কানায় কানায় পূর্ণ ছিল সমাবেশস্থল বেলস পার্ক। নগরীর অলিগলিও ছিল নেতাকর্মীদের দখলে। মাঠে জায়গা না পেয়ে সড়কে, ফুটপাথে, লঞ্চ টার্মিনালে, নদীর ধারে, বাসাবাড়ির ছাদে বসে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শুনছেন সমাবেশের উদ্দেশ্যে আসা মানুষ। স্লোগান স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো বরিশাল নগরী।

বিএনপি’র নেতারা ও স্থানীয়রা বলছেন, শনিবার অনুষ্ঠিত বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইতিপূর্বে বরিশালের ইতিহাসে এত বড় সমাগম দেখেনি বরিশালবাসী। সমাবেশ ঘিরে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে বরিশালের বেলস পার্ক ও তার পার্শ্ববতী এলাকা। এমনকি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সামনে বসেও মাইকে বক্তব্য শুনছেন তারা। বিএনপি’র নেতাকর্মীরা বলছেন-চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরের চেয়ে বেশি বাধা পড়েছে বরিশাল সমাবেশে। এজন্যই মানুষ ফুঁসে উঠেছেন। সরকারদলীয় লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা বাধা উপেক্ষা করে তারা বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। পথে বাধা, হামলা ও ধর্মঘট না দিলে এত বড় সমাগম হতো না। সমাবেশে বাধা না আসলে শনিবার একদিনই সমাবেশ হতো। এখন সমাবেশ ৩ দিন হয়েছে।

সমাবেশের উদ্দেশ্যে ট্রলারে ট্রলারে মানুষের ঢল:

গণপরিবহন ও বাস বন্ধ থাকায় বিকল্প উপায়ে নদী পথে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার মানুষ। সমাবেশের ১/২ দিন আগে আসলেও অনেকেই সমাবেশের দিন সকালে ট্রলারে করে বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। গতকাল ভোর থেকেই সারি সারি ট্রলার কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে এসে ভিড়ে। মেঘনা, তেঁতুলিয়া ও সুগন্ধাসহ অসংখ্য নদী ও খাল পেরিয়ে বরিশালে আসেন তারা। এর মধ্যে ভোলা জেলার মনপুরা, চরফ্যাশন, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, ভোলা সদর, তজুমুদ্দিন ও দৌলতখান থেকে কয়েক হাজার ট্রলার আসে কীর্তনখোলায়। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ, মুলাদী, কাজিরহাট, হিজলা, বাবুগঞ্জ, উজিরপুর, বাকেরগঞ্জ, বরগুনার, পাথরঘাটা, আমতলী, তালতলী, বামনা, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, ইন্দুরকানি (জিয়ানগর), কাউখালী, স্বরূপকাঠি, ভাডারিয়া, মঠবাড়িয়া ও নেছারাবাদ; ঝালকাঠি জেলার সদর, রাজাপুর, কাঠালিয়া ও আমুয়া; পটুয়াখালীর সদর, বাউফল, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, দুমকি ও কলাপাড়ার নেতাকর্মীরা মাছ ধরার হাজারো ট্রলার নিয়ে বরিশালে আসেন। সকাল থেকে বরিশাল নগরীর পলাশপুর থেকে ৩০ গোডাউন পর্যন্ত অন্তত ১০ হাজারের অধিক ট্রলার কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে ঘাট করে রাখা হয়। সেখান থেকে কেউ প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে সমাবেশস্থলে মিছিল নিয়ে আসেন তারা। কেউ কেউ ট্রলারে অবস্থান করেন। একই ভাবে সমাবেশে যোগ দিতে বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রলার ও বালুবাহী জাহাজ-বাল্কহেড শুক্রবার মধ্যরাতেও নগরীতে প্রবেশ করেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের।

বরিশালের কাজীর হাট থানার বিদ্যানন্দনপুর ইউনিয়ন থেকে ট্রলারযোগে সমাবেশে এসেছেন রিমন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা হুমকি দিয়েছে, যাতে সমাবেশে না আসি। আওয়ামী লীগের নেতারা যেকোনো মূল্যে আমাদের বাধা দেবে, আসতে দেবে না- এ জন্য ভোর ৪টায় রওনা দিয়েছি। একই ইউনিয়ন থেকে ৭টি ট্রলারে মোট আড়াইশ’ নেতাকর্মী সমাবেশে এসেছে বলে জানান তিনি। মেহেন্দীগঞ্জ থেকে আসা যুবদলের কর্মী মো. উজ্জল বলেন, আমাদের অনেক হুমকি দেয়া হয়েছে, কিন্তু এসব বাধা হুমকি উপেক্ষা করে বিএনপি’র সমাবেশে এসেছি।

কীর্তনখোলা নদীতে রাত্রি যাপন:

এদিকে গণপরিবহন ও যাত্রীবাহী লঞ্চ বন্ধ থাকায় নির্ধারিত দিনের আগেই বরিশালে বিএনপি’র সমাবেশস্থলে আসেন বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ। নদীপথে আসা বেশির ভাগ নেতাকর্মী কীর্তনখোলা নদীতে রাত যাপন করেন। লঞ্চেই সেরেছেন তাদের খাওয়া-দাওয়া ও ঘুম-বিশ্রাম। গতকাল সকালে নগরীর বন্দর ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-ভোলা রুটের ‘এমভি ভোলা’ নামের বিশালাকৃতির লঞ্চে বিএনপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মী অবস্থান করেন। আবুল কালাম নামের একজন বলেন, বরিশালে আসার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এ জন্য ভোলা জেলার বিএনপি’র সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরের লঞ্চ আমরা রিজার্ভ করে এসেছি। প্রায় ৪ হাজার নেতাকর্মী এই লঞ্চে ঠাসাঠাসি করে এসেছে।

কয়েকজন বলেন, লঞ্চ থেকে সমাবেশস্থল খুব কাছে। আগে চলে আসায় আমরা লঞ্চেই রাতযাপন করছি। সমাবেশ শুরু হলে মাঠে আসি। যত কষ্টই হোক, আওয়ামী সরকারকে না হটানো পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন থামবে না।

চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপি’র নেতা কাজী মনজুর হোসেন জানান, তিন দিন আগে থেকেই চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বরিশালে এসে পৌঁছেছেন।

বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশে অংশে নিতে আসা নেতাকর্মীরা সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন। গতকাল সব চেয়ে বেশি হামলা হয়েছে বরিশালের গৌরনদীতে। এদিন সকালে বিএনপি নেতা ইশরাকের গাড়িবহরে হামলা করে সরকারদলীয় বাহিনী। এর কিছুক্ষণ পর গৌরনদীর একই স্থানে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুলের গাড়িবহর ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেত্রী সেলিনা সুলতানা নিশিতাকে বহনকারী গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

গৌরনদী প্রতিনিধি এম আলম জানান, সমাবেশের দিন বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। কয়েক দফায় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। গৌরনদীর মাহিলাড়া বাজারের কাছে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় কয়েকজনকে পুলিশ আটক করেছে। এতে গাড়িবহরে থাকা বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বিএনপি’র নেতারা জানান, ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু ও ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুলের গাড়িতে ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য জাহিদুল ইসলাম রনি। এ হামলা ও বাধার সময় ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজুসহ নেতারা তাদের পেশাগত পরিচয়পত্র দেখানোর পরও দুর্বৃত্তরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাদের মারতে উদ্যত হন। এক পর্যায়ে তারা গাড়িবহর ঘুরিয়ে দেন। এ ছাড়া শামীম রাব্বি সঞ্চয়ের বহনকারী গাড়িতেও হামলা করে দুর্বৃত্তরা। ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেত্রী সেলিনা সুলতানা নিশিতা, রওনক জাহান শাহীন, কোহিনুর ফারজানা আরজুর বহনকারী গাড়িতে দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে স্থানীয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় গাড়িতে থাকা তিন জনই আহত হন। পাশাপাশি অকথ্য ভাষায় তাদের গালিগালাজ করেন হামলাকারীরা। পরে ঢাকার দিকে ফিরে যান তারা।

এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় পটুয়াখালী থেকে বরিশালে বিএনপি’র গণসমাবেশে আসার পথে সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান খানের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা আরও ৫ জন‌ আহত হয়েছেন। জেলার গাবুয়া এলাকা অতিক্রমকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে। জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শিপলু খান বলেন, রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করছে সরকার। শুক্রবার সন্ধ্যার পরে শাহজাহান খান বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে বরিশাল যাওয়ার পথে পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের গাবুয়া এলাকায় অতিক্রমকালে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না-ফখরুল:

মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের সমস্ত অর্জনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে। আজকে ১৪ বছর ধরে এদেশের মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের চরিত্রের মধ্যে দু’টি জিনিস আছে; একটা হচ্ছে চুরি, আরেকটা সন্ত্রাস। সন্ত্রাস করবে আর চুরি করবে। তারা ২০১৪ সালে ভোট চুরি করেছে, ২০১৮ সালে ভোট চুরি করেছে। এখন আবার ভোট চুরির নতুন নির্বাচন দিয়ে কোনো রকমে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের কথা পরিষ্কার- শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।

ফখরুল বলেন, এই বরিশালের যত উন্নয়ন হয়েছে সবই হয়েছে বিএনপি আমলে। বেগম খালেদা জিয়া বরিশালবাসীকে বিভাগ দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন। অথচ এই সরকার দিয়েছে দুর্ভিক্ষ। বাজারে যাওয়া যাচ্ছে না। সব কিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর থেকে আমরা মুক্তি চাই। জাতি মুক্তি চায়। জাতিকে মুক্ত করতে হবে এই আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে। আওয়ামী লীগের আমলে দেশে দুর্ভিক্ষ হয় আর বিএনপি’র আমলে দেশে শুধু উন্নয়ন হয়। তবে বিএনপি’র চলমান আন্দোলন জাতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষার জন্য।

মহাসচিব বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে সরকার খুব ঢাকঢোল পিটিয়েছে। এমন ঢাকঢোল পিটিয়েছে, যেন বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে। সেই বিদ্যুৎ আর নেই। আজকে সকালে আমি যে হোটেলে ছিলাম সেখানে কমপক্ষে ১০ বার বিদ্যুৎ গেল আর এল। এর আগে ৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় ছিল, বিদ্যুৎ গেলে সবাই বলতো এই হাসিনা গেল, বিদ্যুৎ আসলে বলতো এই হাসিনা এল। আজকেও একই অবস্থা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠন করবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আর কোনো বিবাদ নয়, ঝগড়াঝাটি নয়, জাতির প্রয়োজনে সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। এই আন্দোলন শুধু বিএনপি’র নয়, এই আন্দোলন কেবল খালেদা জিয়ার নয়, এই আন্দোলন শুধু তারেক রহমানের জন্য নয়, এই আন্দোলন সমস্ত জাতির, এই আন্দোলন আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছি, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, এটা পরিষ্কার কথা।

আপনাকে (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং সেই কমিশনের অধীনে ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, আমরা মুক্তি চাই, এদেশের মানুষ আর কোনো কথা শুনতে চায় না। ফয়সালা হবে রাজপথে। এই রাজপথে ফায়সালা করে আমরা বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনবো। যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। আজকে নতুন করে আবার সেই বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনার জন্য বলেছে আমাদের নেতা তারেক রহমান।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন, দেননি। বলেছেন ১০ টাকা সের চাল খাওয়াবে, তাও দেয়নি; তাহলে আপনাদেরকে নতুন কী দিয়েছে, দুর্ভিক্ষ। তাছাড়া কী দিয়েছে হামলা-মামলা। এতদিন তারা ঢোল পিটাইলেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে। খালি উন্নয়ন, উন্নয়ন, উন্নয়ন, এই উন্নয়ন ছাড়া কিছুই দেখছে না বাংলাদেশে। এই উন্নয়নে ৪০ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।

বরিশাল মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার পথে পথে বাধা দিয়েছে। এত বাধাবিপত্তি পেরিয়ে জনসমাবেশকে জনসমুদ্রে রূপ দিয়েছেন এই দেশের জনগণ। এটাই প্রমাণ করে বিএনপি’র প্রতি দেশের প্রতি আপনাদের ভালোবাসা কতোটা। এই সরকারকে বিদায় জানাতে হবে ভোটের মাধ্যমে। না হলে দেশের আর কিছু বাকি থাকবে না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি’র সমাবেশের জন্য গাড়ি, লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছে এই সরকার। তারপরেও নেতাকর্মীরা যেভাবে বরিশাল সমাবেশে উপস্থিত হয়েছে, এতে তারা বিপ্লব ঘটিয়েছে। গাড়ি ও লঞ্চ ব্যতীত বরিশালের মানুষ যে সমাবেশ সফল করতে পারে এটা প্রমাণ করেছে। তিনি বলেন, আমাদের শত শত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে, আগামী দিনে আমরা শত শত জীবন দিতে প্রস্তুত রয়েছি। মানুষ খেতে পারছে না, বিদ্যুতের অভাবে অন্ধকারে বাস করছে, গ্যাসের অভাবে রান্না করতে পারছে না, মানুষের ভোটাধিকার নেই, দেশে আইনের শাসন নেই, বাকস্বাধীনতা নেই, ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চলছে।

গণসামবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএন‌পি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, এডভোকেট জয়নুল আবেদিন, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, হাবিবুন নবী খান সোহেল, বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

উৎসঃ মানবজমিন

ফের ব্যাংকক মিশন!

আগামী ২৯ আগস্ট থাইল্যান্ডের ব্যাংককের সুকুম্বি এলাকায় আবার সমবেত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্ষমতা প্রত্যাশী ছোট ছোট দলের কিছু রাজনীতিকরা! অবশ্য বিএনপির কিছু কম ঈমানের নেতারাও আছেন এই প্রকৃয়ায়। কয়েক নেতা ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছেন সেখানে!

মার্কিন প্রবাসী মাসুদ করিম ওরফে এনায়েত করিম নামে এক টাউটের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শতাধিক নেতারা ওখানে আমন্ত্রন পেয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, ওখানে নাকি আগামী জাতীয় নির্বাচনের সিট ভাগাভাগি হবে, এবং যারা আগ্রহী তারা যেন প্রত্যেকে ৩ কোটি টাকার জোগাড় করেন, আপাতত ১ কোটি টাকা জমা দিতে হবে!

মুলত, স্বাভাবিক নির্বাচন হলে যারা বড় কোনো দলের নমিনেশন পাবেন না বা নিশ্চিতএমপি হতে পারবেন না, তারাই চাচ্ছে এই মারেফতি ব্যবস্খায় ক্ষমতায় যেতে! ‍দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো রেজা কিবরিয়ার মত লোক (যিনি হাসিনাকে নামিয়ে গদি চান) তিনিও এই তরিকায় বিশ্বাস করে ওখানে যাচ্ছেন। মান্না ভাইও নাকি আছে এতে! গত ২/৩ বছর ধরে রাজধানীতে ৩/৪ দফা রাজপথ দখল করে ক্ষমতা বদলানোর ব্যর্থ চেষ্টার পরে এবারে মাসুদ করিমকে তারা আবারও বিশ্বাস করছেন, তার কারণ নাকি এবারে ডিজিএফআই সরাসরি যুক্ত আছে ক্ষমতা বদলের প্রক্রিয়ার সাথে! ডিজিএফআই তাদেরকে ক্ষমতায় বসাবে- বুঝুন কাণ্ড!

দেশের মানুষ ইতোমধ্যে জেনে গেছে, মাসুদ করিম নামের ঐ প্রবাসী আমেরিকান বাংলাদেশী এর আগেও ব্যাংকক কাঠমান্ডুতে এরকম সম্মেলন আয়োজন করেছিল। তিনি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে নটঘট করলেও মাসুদ আসলে বাংলাদেশের সরকারী গোয়েন্দা সংস্খা ডিজিএফআইর পেইড এজেন্ট। মেজর জেনারেল খালেদ মামুন শেখ হাসিনা সরকারের ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক থাকতে মাসুদ করিমকে রিক্রুট করা হয়। এরপর থেকে মাসুদ করিম সিএইএর পরিচয় দিয়ে বিএনপির ওপরে কাজ শুরু করেন: বিভিন্ন নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের ওপরে প্রভাব বিস্তার করে তাদেরকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হন যে, সিআইএকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে দখলদার হাসিনা সরকারের পতন ঘটাকে সক্ষম হবেন। সিঁড়ি বেয়ে অনেক ওপরে পৌছে যায় মাসুদ, তবে সঠিক হস্তক্ষেপের ফলে সে আটকা পড়ে। সরকার নামানোর কথা বলে মাসুদ প্রায়শই বাংলাদেশী কিছু পলিটিশিয়ানদের নিয়ে দেশে বিদেশে মিটিং করেন। অনেককে টাকা পয়সা ও বিমানের টিকেটও দেন। কিন্তু এর পেছনে যে তিনি তার কয়েক গুণ টাকা সংগ্রহ করেন সে কথাটি থেকে যায় আড়ালে। আমাদের জানা শোনা অনেকের কাছে টাকা চেয়ে ইমেইলও করেছে মাসুদ। ফ্রডবাজি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে আমেরিকায় মামলা হয়েছে তার নামে, তাই সে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। সে এত চালাক যে, তার ছবি কেউ তুলতে পারে না।

মাসুদ করিম কোনো সিআইএর দায়িত্বশীল কেউ নয়, হয়ত কয়টা সাদা চামড়ার সাথে পরিচয় থাকতে পারে। এর উপর ভর করে উন্নত প্রজাতির টাউটারি চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশে! মাঝখানে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এদেশের রাজনীতি ও কিছু হতাশ রাজনীতিক।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনারের বাংলাদেশ সফর ঘিরে মানবাধিকার হরণকারী নৈশ সরকারের ঘৃন্য নাটক

মানবাধিকার পীড়িত বাংলাদেশে একটি জঘন্যতম ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে এ সপ্তাহে। আর তা হলো, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের আগামীকাল থেকে বাংলাদেশ সফরকালে শেখ হাসিনা সরকার ১০ ব্যক্তিকে সাজিয়ে গুছিয়ে হাজির করবে যারা গুম/আটক থেকে ফিরেছেন, তাদেরকে দিয়ে বলানো হবে, “বিএনপি জামায়াতের নেতাদের প্ররোচনায় সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য তারা নিজেরাই লুকিয়ে ছিলেন”!

এই কাজের জন্য সরকার একটি ডকুমেন্টারি নির্মান করেছে, যা ঐ টিমকে দেয়া হবে। আর এই ভিডিও তৈরি প্রযোজনা করেছেন পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মিডিয়া এন্ড পাবলিসিটি মো. কামরুজ্জামান। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সরকারি তত্ত্বাবধানে গুম খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে ১৪ই আগস্ট থেকে ১৮ই আগস্ট বাংলাদেশ সফরে আসছেন।

সূত্রমতে, সরকারী নাটকে অভিনয় করার জন্য গুম ফেরত ১০ জনকে ভয়ভীতি ও নির্যাতনের হুমকি দিয়ে নির্ধারিত দিনে হাজির করা হবে মিশেল বেচলেটের সামনে (তালিকা সংযুক্ত)। তারা প্রত্যেকেই শেখানো জবানবন্দি দিয়ে বলবে স্বেচ্ছায় লুকিয়ে থাকার জন্য তারা রাষ্ট্রের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। নাটকটি আয়োজন করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নৈশভোট সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও সাংসদ কাজী নাবিল ও স্যাংশন খাওয়া আইজিপি বেনজিরকে। তারাই এআইজি কাজরুজ্জামানকে দিয়ে এই নাটক বানিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, এই অপকর্মে সাংবাদিক ম্যানেজ করা, সাক্ষাৎ দেয়া হবে এমন ব্যক্তিদের আনা এবং তাদের মিথ্যা, বানোয়াট এবং শেখানো সাক্ষাৎকার নেয়া, তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, বিশেষ ড্রেস সরবারহ করা, অডিও এবং ভিডিও তৈরি করাসহ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের সহযোগিতায় যাবতীয় কাজের সমন্বয় করছেন শাহরিয়ার আলম ও কাজী নাবিল। নাটকটি প্রচারের দায়িত্বে আছে কাজী শাহেদ আহমদ পরিবারের দীপ্ত টিভি। আর এই দীপ্ত টিভির এমডি কাজী জাহেদুল হাসাকে বিশেষ ব্যবস্থায় আইসিটি মামলায় জামিন দেয়া হয়েছে গত মাসেই। ২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা সানোয়ারা পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেডের মামলায় প্রথমে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশের পর রিভিউ পিটিশন করে জামিন দেয়া হয়েছে কাজী জাহেদুল হাসানেকে। রিভিউ পিটিশন করে জামিন- যেখানে দেশের সম্মানিত সিনিয়র নাগরিকরা্ও জামিন পান না।

এদিকে মানবাধিকার কমিশনের এই সফরে বাংলাদেশের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং গুমসহ গুরুতর সকল নির্যাতন বন্ধে প্রকাশ্যে আহ্বান জানানো উচিৎ মিশেল ব্যাচেলেটের মর্মে বুধবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নিজস্ব ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও এ সফরে মানবাধিকার কমিশনার যাতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারকে চাপ দেন সেই আহ্বান জানিয়েছে ৯টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। এক বিবৃতিতে সংস্থাগুলো বলেছে, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, এই সফরে যদি তিনি এই নির্যাতনের নিন্দা না জানান কিংবা সংশোধনের আহ্বান না জানান, তাহলে শাসক দল আওয়ামী লীগ তার নীরবতাকে নিজেদের নিপীড়ন এবং এক্টিভিস্টদের দমনকে বৈধতা দিতে ব্যবহার করতে পারে।

The Bangladesh government has made a list of ten people who have returned from enforced disappearance, and Dipta TV will interview them. They will say in that interview that they disappeared voluntarily and speak on behalf of the government,.Their faces may not be shown on TV, but their voices will be heard. That interview will be listened to and submitted to the UN High Commissioner for Human Rights, Michele Bachlete.

গুম ও মানবাধিকার হরণকারী সরকারের এহেন ঘৃন্য নাটক সম্পর্কে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এম্বেসী এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বকে অবহিত করতে বিষয়টি বহুল প্রচার প্রয়োজন।

#USTreasury #UnitedNationsHumanRights #HumanRightsWatch

1 2 3 32